খুনের চক্রান্তের অভিযোগ জারি রাখলেন মমতা
ঞ্চ বদলাল, কিন্তু কথা তেমন বদলাল না।
কামদুনিতে তাঁকে খুনের চক্রান্ত হয়েছিল বলে তিনি যে অভিযোগ করেছিলেন, বৃহস্পতিবার বর্ধমানের গলসিতে নির্বাচনী জনসভায় কার্যত তারই পুনরাবৃত্তি করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তবে বুধবার গাইঘাটায় তিনি যে খুনের ‘চক্রান্তকারী’ হিসেবে সিপিএম-মাওবাদী-এবিপি এক সুতোয় বেঁধে দিয়েছিলেন, এ দিন আর স্পষ্ট করে তা বলেননি। শুধু বলেন, “একটা সংবাদমাধ্যমের কথায় আমার সিকিওরিটিদের পথ অবরোধ করে আটকে দেওয়া হয়েছিল। আমি খুন হয়ে গেলে কী করতে!”
এ দিন বর্ধমানেরই পূর্বস্থলী ও কালনায় ভিড়ে ঠাসা সভায় মমতা সম্পর্কে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য তথা বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র মন্তব্য করেন, “উনি অসুস্থ, মানসিক ভারসাম্যহীন। ওঁর চিকিৎসা দরকার। কামদুনি গিয়েও মেজাজ হারিয়েছেন উনি। তৃণমূলেরই কয়েক জন ‘দিদি দিদি’ বলে এগিয়ে গিয়েছিলেন। ওখানে তৃণমূল ছাড়া কেউ নেই।... উনি এত ভয় পেলেন কেন? আসলে উনি ভয় দেখান, তাই এখন নিজেও ভয় পাচ্ছেন।”
খুনের চক্রান্তে এ দিন সিপিএম ছাড়া আর কারও নাম না করলেও সংবাদমাধ্যমের একাংশের প্রতি যে আক্রমণ শুরু করেছেন মমতা, এ দিনও তা জারি ছিল। তাঁর দাবি, “এবিপি আনন্দ কংগ্রেস-সিপিএমের যৌথ চ্যানেল।” তা না দেখে বরং এনটারটেনমেন্ট চ্যানেল বা অন্য কিছু নিউজ চ্যানেল দেখার পরামর্শ দেন তিনি। ‘জাগো বাংলা’ বা অন্য কোনও নামে একটি নিউজ চ্যানেল করতে চান বলেও জানান।
নির্বাচনী জনসভায় মমতা। গলসিতে।
এ দিন বিকেল ৫টায় মমতার আসার কথা থাকলেও তিনি এসে পৌঁছন প্রায় আড়াই ঘণ্টা পরে। গলসি হাইস্কুলের মাঠে ঠাসা ভিড় ক্রমশ অধৈর্য হয়ে পড়ছিল। মুকুল রায় টানা বক্তৃতা করে জনতাকে শান্ত রাখার চেষ্টা করেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ মমতার কনভয় এসে পৌঁছতেই উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে জনতা। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীকে দেখার আগ্রহ যত ছিল, তাঁর পুরো বক্তৃতা শোনার মতো সময় অনেকেরই ছিল না। বিশেষ করে যাঁরা দূরের গাঁ-গঞ্জ থেকে এসেছিলেন তাঁরা সভা ছাড়তে শুরু করেন।
রাজ্যে কোনও ধর্ষণের জন্য তিনি বা তাঁর সরকার যে দায়ী নন, মুখ্যমন্ত্রী এ দিনও তা বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। গাইঘাটায় তিনি বলেছিলেন ‘আমি নাকি ধর্ষণ করতে গেছি, বুঝুন!’ গলসিতে বলেন, ‘কার রান্নাঘরে বেগুন বেশি পুড়ে গেল, মমতা দায়ী? কার মাথায় উকুন, মমতা বাছবে? কার বাথরুমে কে ঢুকছে, মমতা আটকাবে?’ তাঁর দাবি, ২৪ ঘণ্টার বৈদ্যুতিন চ্যানেলগুলি সময় ভরানোর জন্যই ‘ছোট ঘটনা’কে বড় করে দেখাতে থাকে। চ্যানেলের এক বন্ধুই তাঁকে এই কথা জানিয়েছেন।
এই প্রসঙ্গে বারাসতের কামদুনিতে কলেজ ছাত্রীর ধর্ষণ ও খুনের প্রসঙ্গ সরাসরি না তুলেও মমতা দাবি করেন, “সামান্য দু’তিনটে ঘটনা নিয়ে মিচকি মিচকি কথা বলছে মিডিয়া। কতগুলি চ্যানেল এমন ভাবে সে সব দেখাচ্ছে যে বাচ্চারা যা জানত না, তা-ও জেনে ফেলছে।” গত বছর ফেব্রুয়ারিতে বর্ধমানেরই কেতুগ্রামে মেয়ের সামনে ছোট রেল থেকে নামিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছিল এক বিধবাকে। যার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় সদ্য মুখ্যমন্ত্রী হওয়া মমতা বলেছিলেন ‘সাজানো ঘটনা’। যদিও পরে অভিযুক্তেরা গ্রেফতার হয়। মহিলা কয়েক জনকে শনাক্তও করেন। সেই মামলা এখনও চলছে।
গলসিতে তৃণমূলের সভায় তখনও পৌঁছননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অপেক্ষায় জনতা।
তবে কামদুনিতে যারা ধরা পড়েছে, এক মাসের মধ্যে আদালতে চার্জশিট পেশ করে তাদের মৃত্যুদণ্ডের আর্জি জানানো হবে বলেও এ দিন ফের জানিয়ে দিয়েছেন মমতা। দলের কেউ কোনও অন্যায়ে জড়িত থাকলে তাদের ছাড়া হবে না জানিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “মুন্না গুলি চালায়নি। কিন্তু ঘটনাস্থলে ছিল। ওকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শম্ভুনাথ কাও, শিবু যাদবও গ্রেফতার হয়েছে।”
কামদুনিতে লালঝান্ডা ছয়লাপ ছিল আগেই অভিযোগ করেন মমতা। সূর্যবাবুর বক্তব্য, “কামদুনিতে সিপিএম থাকলেও কথা বলার অধিকার নেই। তা-ও উনি কী ভাবে লালঝান্ডা দেখলেন, জানি না।” তাঁর আরও বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা কি অপরাধ? এখন শুনছি, তাঁদের বাড়িতে গুন্ডা-মস্তান যাচ্ছে।” মমতা অবশ্য এ দিন দাবি করেন, “কিছু চ্যানেলে তৃণমূলের পতাকা নিয়ে অন্যায় কাজ হচ্ছে নাটক দেখাচ্ছে কিছু চ্যানেল। শুধু পতাকা দেখা যায়। মুখগুলো দেখা যায় না। সতর্ক থাকুন।”

—নিজস্ব চিত্র
(সহ প্রতিবেদন: কেদারনাথ ভট্টাচার্য ও দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়)

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.