|
|
|
|
সাকসেস আমার কাছে জিনস আর টি শার্ট...
সকালে উঠে শুধু পরতে হয়
|
রাজনীতিতে যোগ দিচ্ছেন না কারণ সংসদের অলিন্দে সিগারেট খেতে পারবেন না। আর সাতচল্লিশ বছর
বয়সেও নিজেকে ‘ফ্যান্টাস্টিক
লাভার’ বলতে পারেন অনায়াসে। মুম্বইয়ের তাজ ল্যান্ডস
এন্ড-এর বলরুমেশাহরুখ খান-এর মুখোমুখি ইন্দ্রনীল রায় |
ঠিক ছিল ইন্টারভিউ শুরু হবে দুপুর দু’টোয়। কিন্তু সকাল সকাল তাঁর অফিস থেকে জানানো হল আগের দিন ভোর চারটে অবধি কাজ করেছেন। তাই ইন্টারভিউয়ের সময় একটু পেছোতে পারে। অতএব অপেক্ষা।
যখন এলেন, তখন সওয়া তিনটে। এসেই প্রায় ক্ষমাপ্রার্থীর মতো বললেন, “সরি ইয়ার, কালকে রাত্রে শুতে বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছিল।” মুখচেনা কলকাতার সাংবাদিক বলে নিজেই বললেন, “আপনার সঙ্গে আলাদা কথা বলব। আর একটু ওয়েট করুন প্লিজ।”
“তা হলে আমি সিগারেট খেয়ে আসি?” প্রশ্ন করি শাহরুখকে।
“ইয়েস ইয়েস, সিগারেট পিকে আও, দিখা কৌনসা সিগারেট পিতা হ্যায়?” বলে আমার সিগারেটের প্যাকেটটা নিজেই হাতে নিলেন। “ইতনা লাইট সিগারেট ক্যয়সে পিতা হ্যায় তুমলোগ?” বলে হাসতে হাসতে বসলেন গ্রুপ ইন্টারভিউ দিতে।
তিরিশ মিনিট পরে ডাক এল। ততক্ষণে তাঁর সামনে ব্ল্যাক কফির দু’ দুটো খালি কাপ। অ্যাশ ট্রে-তে চারটে সিগারেট। পাঁচ নম্বরটা জ্বালিয়ে শুরু হল ইন্টারভিউ। |
অপারেশনের পর কাঁধ কেমন আছে? এখনও দেখছি তো স্লিং নিয়ে ঘুরছেন?
হ্যাঁ। এটা আর কয়েক দিন রাখতে হবে। ব্যথাটা প্রচণ্ড বেড়ে গিয়েছিল। তাই শেষ পর্যন্ত অপারেশনটা করতেই হল। আশা করি আর প্রবলেম হবে না। কিন্তু একটা হাত এই স্লিংয়ে ঝুলিয়ে বড্ড অসুবিধে হচ্ছে। নর্মাল মুভমেন্টটাই তো রেসট্রিকটেড হয়ে গিয়েছে আমার। অ্যাডজাস্ট করেছি অনেকটা তাও...
তাও তো একটার পর একটা পাবলিক অ্যাপিয়ারেন্স করে চলেছেন।
কী করব? আমার কাঁধের অপারেশন বলে কি বাকি দুনিয়ার কাজ বন্ধ থাকবে? তবে কেয়ারফুল হয়ে গিয়েছি। এমন কোনও জায়গায় যাচ্ছি না যেখানে অনেক ক্রাউড।
আপনার বহু ইন্টারভিউ করেছি। সেই সময় আপনার অ্যারোগেন্ট, আপস্টার্ট, কেয়ার করি না অ্যাটিচিউড বেরিয়ে আসত। কিন্তু আজকাল আপনাকে অনেক শান্ত লাগে।
মে বি ইট’স মাই এজ...নিজেও বুঝতে পারি, অনেক শান্ত হয়ে গিয়েছি। আই হ্যাভ মেলোড ডাউন। আর আমি কোনও দিন বয়স লুকোইনি। ইনফ্যাক্ট, আমার তো মনে হয়, আমি ওয়ান অব দ্য ফিউ স্টারস যার পাসপোর্টের বয়স আর যা বয়স দুনিয়াকে বলি। দু’টো এক। সেটা সাতচল্লিশ।
সাতচল্লিশ বছর বয়স হলেও ‘লাভার বয়’ ইমেজ তো ছাড়ছেন না...
(হেসে) তাতে আমাকে দোষ দিচ্ছেন কেন? আমাকে যে পরিচালকেরা কাস্ট করছেন তাঁদের বলুন। আমার সঙ্গে যে হিরোইনরা কাজ করতে রাজি হচ্ছে, তাদের জিজ্ঞেস করুন না, কেন তারা ৪৭ বছরের এক লোকের সঙ্গে রোম্যান্সের জন্য রাজি হচ্ছে। তবে তাই বলে আজকে আমি কলেজ স্টুডেন্টের রোলে অভিনয় করব? কখনও না। এই তো চেতন ভগতের ‘টু স্টেটস’ করার কথা হয়েছিল। কিন্তু গল্পটা পড়ে, স্ক্রিপ্টটা পড়ে বুঝতে পারি, আর যাই করি না কেন কলেজের স্টুডেন্টের রোলে অভিনয় আমার দ্বারা এই জন্মে আর আমার হবে না। তাই করিওনি ছবিটা। কিন্তু একটা ইন্টারেস্টিং জিনিস লক্ষ করেছেন?
কী?
বয়স নিয়ে এই আলোচনাটা কিন্তু সাউথের হিরোদের ক্ষেত্রে হয় না। হলিউডেও হয় না। ওখানে কিন্তু সত্তর বছরের শন কনারি অবলীলাক্রমে পঁচিশ বছর বয়সী নায়িকার সঙ্গে প্রেম করতে পারেন। হি ক্যান বি এ লাভার অ্যাট সেভেন্টি। (হেসে) আর আই অ্যাম জাস্ট ফর্টি সেভেন। আমি আজও ফ্যান্টাস্টিক লাভার।
মেয়েরা আজও পাগল বলছেন আপনার জন্য? রণবীর কপূরের থেকেও?
মেয়েরা শুধু কেন? আমার তো মনে হয় আমার সব চেয়ে বড় ফ্যান বেস হল বাচ্চারা। এই কথাটা আমাকে জুহি আর আজিজ বহু দিন আগেই বলেছিল যে আমার অ্যাক্টিংয়ের মধ্যে একটা চাইল্ড লাইক কোয়ালিটি আছে, যা বাচ্চাদের ভাল লাগে। আর যেহেতু মেয়েরাও বাচ্চাদের মতো ইনোসেন্ট, তারা আমায় পছন্দ করে। গার্লস আর অ্যাজ ইনোসেন্ট অ্যাজ কিডস। সো দে লাভ মি...হা হা হা।
হা হা হা, এটা একটু ওভার দ্য টপ হয়ে গেল না?
(খুব হেসে) অবশ্যই হল। কিন্তু ডায়লগটা ভাল বলে, না বলার লোভটা আর সামলাতে পারিনি। আসল ঘটনাটা হচ্ছে, আমার বাবা অনেক আগেই মারা গিয়েছিলেন। আই হ্যাভ বিন ব্রট আপ বাই উইমেন। তাই কখনও কখনও মনে হয় আমার পার্সোনালিটির মধ্যে একটা এফিমিনেট কোয়ালিটি আছে। মেয়েদের মতো বসি, আই সিট লাইক এ গার্ল। আই হ্যাভ এ লট অব রেসপেক্ট ফর উইমেন। আমার এই মেয়েলি সাইডটা বোধ হয় মেয়েরা বেশি পছন্দ করে। তাই আমায় এত ভালবাসে। তাই জন্যই দেখবেন সারাজীবন আমি রোম্যান্টিক রোল বেশি পেলাম, ম্যাচো হিরোর রোল করা হল না।
|
|
আচ্ছা এটা বলুন, আপনি শাহরুখ খান, আপনার সামনে রোজ নতুন স্ক্রিপ্ট জমা পড়ে। কিন্তু এই যে আপনি রোহিত শেঠির ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’-কে চুজ করলেন তাতে কিন্তু অনেকেই আশ্চর্য হয়েছিল।
আমি শাহরুখ খান হতে পারি কিন্তু এই অনুমানটাই একেবারে ভুল যে আমি পরিচালককে চুজ করি। কোনও দিন করিনি, আজও করি না। আমি দেখি আমার সঙ্গে পরিচালকের কমপ্যাটিবিলিটি কেমন? বাকি সব কিছু এর পরে। যখন ওর বাবার ছবি ‘ডুপ্লিকেট’ করেছিলাম, তখন কর্ণ জোহরকে বলেছিলাম ইউ আর এ নাইস গাই। কোনও দিন ভাল স্ক্রিপ্ট থাকলে বোলো, আমি কাজ করব। ফারহা খানের সঙ্গেও তাই। যখন অন্য কোনও প্রযোজক রাজি হচ্ছিল না ওর সঙ্গে কাজ করতে, তখন বলেছিলাম ইউ আর এ নাইস গার্ল। কোনও দিন ডিরেক্টর হওয়ার ইচ্ছে হলে বোলো, আই উইল ডু ইওর ফিল্ম। এ বারও কিন্তু যখন রোহিত স্ক্রিপ্ট শোনাতে এল, আমি প্রথমেই হ্যাঁ বলিনি। অনেক দিন রোহিতের সঙ্গে ইন্টার্যাক্ট করলাম। যখন দেখলাম ওর সঙ্গে আমার কমপ্যাটিবিলিটি রয়েছে, তখনই রাজি হলাম ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ করতে। লাইক মাইন্ডেড না হলে আমি আর কাজ করতে পারি না। আর অনেক দিন তো আমি হার্ডকোর মশালা ছবি করি না। লাস্ট করেছিলাম দীপিকার সঙ্গে, ‘ওম শান্তি ওম’। সেটাও একটা কারণ ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ করার।
আচ্ছা এটা কি ঠিক করলেন?
কোনটা?
আপনি বাংলার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডর, টিমের নাম কলকাতা নাইট রাইডার্স। হঠাৎ করে ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ কেন? চেন্নাইয়ের সঙ্গে আপনার কানেকশন কী?
আরে, কানেকশন নেই কে আপনাকে বলল?
কীসের কানেকশন?
(চোখ টিপে) ভুলে গেলেন গত বছর ফাইনালে আমার টিম ধোনির চেন্নাইকেই তো হারাল। এত বড় কানেকশন আমার চেন্নাইয়ের সঙ্গে। (হেসে) আর আপনি বলছেন কানেকশন নেই!
সিনেমা প্রসঙ্গে ফিরি, অনেকেই বলে আপনার সেই ম্যাজিকটা আর নেই? ‘রা ওয়ান’, ‘মাই নেম ইজ খান’, ‘ডন ২’ হিট হতে পারে, কিন্তু পারসেপশনটা হল শাহরুখ ছুঁলেই যে সোনা হবে, সেই ব্যাপারটা আর নেই?
আমার মনে হয় না কোনও অ্যাক্টর এটা ভাবে যে সে যা ছোঁবে তাই সোনা হবে। আমি তো ভাবি না। ওটা আমার সম্বন্ধে মিডিয়ার পারসেপশন ছিল। আর ‘এমএনআইকে’ , ‘ডন ২’ শুধু হিট ছিল, দে ওয়ার ম্যাসিভ হিট। ‘রা ওয়ান’ আজও টিভিতে দেখালে বহু মানুষ দ্যাখে। তাই কে কী বলল তাতে আমার আগেও কিছু যায় আসেনি, আজও কিছু এসে যায় না। আমি আজ আমার কেরিয়ারের যে স্টেজে, আমি তো ‘রা ওয়ান’ না করলেও পারতাম। ওই টাকায় তিনটে ছবি করতে পারতাম। কিন্তু করিনি তার কারণ কন্ট্রিবিউট করতে চেয়েছিলাম একটা নতুন ‘জ্যঁর’ ইন্ডাস্ট্রিতে এনে। আর আজকাল তো আমার ছবি হিট হলে আমার বৌ, ছেলে-মেয়ে ভয়ে ভয়ে থাকে।
ভয়ে ভয়ে থাকে? কেন?
কারণ ওরা জানে ছবি হিট হলে আর একটা নতুন বাড়ি তো আমি কিনব না। (হেসে) যা টাকা বাড়িতে আসবে, তা দিয়ে আবার একটা বিগ বাজেট সিনেমাই বানাব। আজ আমার এই কাজ করার প্রসেসটাতেই আনন্দ। নাথিং এক্সাইটস মি এনিমোর অ্যাকচুয়ালি। |
|
সেই ‘ওম শান্তি ওম’য়ের জুটি আবার পর্দায় |
এটা আপনি বলছেন? সাকসেস আপনাকে এক্সাইট করে না?
না, আর করে না। ২২ বছর ধরে তো সাকসেস আমার সঙ্গেই রয়েছে। তাই ওটার এক্সাইটমেন্ট অনেক কমে যাচ্ছে আমার কাছে। সাকসেস আমার কাছে জিনস্ আর টি-শার্টের মতো। সাকসেস ইজ মাই ক্লোদিং। সকালে উঠে শুধু পরতে হয়।
মানে এই যে কেকেআর আইপিএল জিতল গত বছর? এটা, সাকসেসটা ম্যাটার করে না আপনার কাছে?
এই সাকসেসটা পেয়ে আমার টিম খুশি হয়েছে, আমার ছেলে-মেয়ে খুশি হয়েছে, বাংলার মানুষ খুশি হয়েছে। আমি সেটা ভেবেই খুশি। আলাদা করে কোনও সাকসেস আর আমার কাছে ম্যাটার করে না।
আপনার এত বন্ধু রাজনীতিতে। গাঁধী পরিবারের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইয়ের মতো আপনি। কখনও রাজনীতিতে আসতে ইচ্ছে করে না?
(হেসে) এ সব কথা বলি বলেই জানেন, সমস্যায় পড়ি আমি।
কী কথা?
আরে, পার্লামেন্টে যদি যাই, করিডরে তো লুকিয়ে সিগারেট খেতে পারব না। তাই পলিটিক্স-এ যাচ্ছি না। (হাসি)
‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’-এর প্রচারে কলকাতায় আসবেন না?
বলেছি আমার টিমকে। ইচ্ছে তো আছে খুব আসার। প্ল্যান চলছে।
কলকাতায় শো করলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ইনভাইট করবেন তো?
খুব ইচ্ছে আমার। আর ওঁর সঙ্গে আমার যা সম্পর্ক, আমি বললে উনি নিশ্চয়ই আসবেন ছবিটা দেখতে।
|
|
|
|
|
|