গঙ্গা ভাঙনে সর্বস্ব খুইয়ে চরে মাথা গোঁজার আশ্রয় মিললেও শিক্ষার অধিকার ছিল না। স্কুল না থাকায় চরবাসীর ছেলেমেয়ে বছরের পর লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। নিরক্ষরতার অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছিল চরবাসী। প্রশাসন থেকে রাজনৈতিক দল পরিস্থিতি বদলাতে কেউ এগিয়ে আসেননি। সে সময়ে এগিয়ে আসেন গঙ্গাভাঙনে সর্বস্ব খুইয়ে বসা এক যুবক। নাম খিদির বক্স। পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক খিদিরের উদ্যোগে ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর প্রটেক্টশন অব চাইল্ড রাইট-এর চাপে কালিয়াচকে হামিদপুরচর-সহ চারটি চরে পাঁচটি স্কুল গড়তে বাধ্য হয় জেলা প্রশাসন ও সবর্শিক্ষা মিশন। ২০১১ সালের ১৯ নভেম্বর থেকে হামিদপুর চরে প্রথম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু করে জেলা প্রশাসন। পরে চরে আরও চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়া হয়। পঞ্চানন্দপুরের হাজারিটোলার বাসিন্দা খিদির জানান, ২০০২ সালে ১০ বিঘা জমি ও ভিটেমাটি সব গঙ্গায় তলিয়ে যায়। সাড়ে চারশোরও বেশি পরিবার চরে বাস শুরু করেন।
|
খিদির বক্স।—নিজস্ব চিত্র। |
২০০৯-এ শিক্ষার অধিকার আইন হওয়ার পরই গঙ্গা ভাঙন প্রতিরোধ অ্যাকশন কমিটির পক্ষ থেকে চরে প্রাথমিক স্কুলের জন্য ২০১০-এ জেলাশাসক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানকে আবেদন করা হয়। এনসিপিসির চেয়ারম্যানের কাছে শিক্ষার অধিকার থেকে চরের ছেলেমেয়েদের বঞ্চনার অভিযোগ তুলে স্কুল গড়ার আবেদন করা হয়। কিন্তু কাজ হচ্ছিল না।
২০ অক্টোবর ২০১১, তৎকালীন এনসিপিসির চেয়ারম্যান সান্তা সিংহ জনশুনানিতে মালদহের জেলাশাসক ছাড়াও গঙ্গাভাঙন প্রতিরোধ অ্যাকশন কমিটি সদস্য খিদির বক্সকে কলকাতা ডেকে পাঠান। এনসিপিসি চেয়ারম্যান মালদহ জেলা প্রশাসনকে চরে দ্রুত স্কুল গড়ে তোলার নির্দেশ দেন। এর পরে অতিরিক্ত জেলাশাসক ও সবর্শিক্ষা মিশনের জেলা প্রকল্প আধিকারিক চিন্ময় সরকার চরে যান। তিনি বলেন, “এনসিপিসির কাছে আবেদন করায় স্কুল হয়। হামিদপুরের পর আরও ৩টি চরে চারটি প্রাথমিক স্কুল হয়েছে।” তিনি জানান, হামিদপুর চরের স্কুল তৈরির জন্য প্রথম দফায় ৮ লক্ষ টাকায় তিনটি ঘর তৈরি করা হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় ওই স্কুলকে ২৪ লক্ষ টাকা দেওয়া হচ্ছে। চরে ৫টি স্কুলে ১০০০ বেশি ছাত্রছাত্রী পড়াশুনা করছে। হামিদপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান মাসুদা খাতুন বলেন, “খিদির না হলে চরে স্কুল হত না।” |