কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার প্রায় ন’মাস পরে দলত্যাগ বিরোধী আইনে খারিজ হয়ে গেল শিলিগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান নান্টু পালের কাউন্সিলর পদ। কাউন্সিলর পদ চলে যাওয়ায় চেয়ারম্যানের পদ থেকেও সরে যেতে হল পুরসভার ২৫ বছরের কাউন্সিলর নান্টুবাবুকে।
উচ্চ আদালতের নির্দেশ মেনে বুধবার জলপাইগুড়ির বিভাগীয় কমিশনার অমরেন্দ্রকুমার সিংহের তরফে মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত, পুর কমিশনার প্রভুদত্ত ডেভিড প্রধান এবং নান্টুবাবুর কাছে ওই নির্দেশ পাঠানো হয়। রাজ্য সরকারের কাছেও নির্দেশের প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে শিলিগুড়ি পুরসভায় কিছুটা ‘বেকায়দায়’ পড়ল তৃণমূল। বিধি অনুযায়ী এক মাসের মধ্যে চেয়ারম্যান নির্বাচন করতে হবে। বামেরা না দিলেও কংগ্রেস-তৃণমূল উভয় তরফেই চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেছেন, “এটা আমাদের নৈতিক জয়। নান্টুবাবু এত দিন অন্যায়ভাবে অনেক সভা পরিচালনা করেছেন।”
|
নান্টু পাল।
ছবি: বিশ্বরূপ বসাক |
উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী তথা দলের উত্তরবঙ্গ কোর কমিটির চেয়ারম্যান গৌতম দেব অবশ্য দাবি করেন, তাঁদের সরকার নিয়ম মেনে চলে, এই রায়ই তার প্রমাণ। তিনি বলেন, “ওই নির্দেশ খতিয়ে দেখা হবে। যদি আপিলের সুযোগ থাকে এবং দল মনে করে তা হলে পদক্ষেপ করা হবে। পুরসভায় উন্নয়ন বন্ধ হওয়া নিয়ে মানুষের ক্ষোভ রয়েছে। আমরা পুর দফতরকে সব জানাব।” নান্টুবাবু বলেন, “কাউন্সিলর না থাকলেও ওয়ার্ডের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাব।”
২৭ সেপ্টেম্বর কলকাতায় তৃণমূলের কার্যালয়ে গিয়ে দলত্যাগের বিষয়টি ঘোষণা করেন নান্টুবাবু। তার পরেই তাঁর পদত্যাগের দাবিতে সরব হয় বিরোধী বামেরা। বামেদের অনাস্থায় চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসৃত হন তিনি। পরে তৃণমূল কাউন্সিলরদের উপস্থিতিতে ফের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ওই মিটিংয়ে কংগ্রেস ও বামেরা না থাকায় কোরাম হয়নি এই অভিযোগে নির্বাচন অবৈধ বলে বামেরা আদালতে মামলা করে। কংগ্রেসের তরফেও দলত্যাগ বিরোধী আইনে নান্টুবাবুর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। নান্টুবাবু কোন দলে রয়েছেন আদালতে তা জানতে চাওয়া হলে তাঁর আইনজীবী পুর আইন অনুযায়ী উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে তা জানাতে রাজি হন। সরকারের তরফে জলপাইগুড়ির বিভাগীয় কমিশনারকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়। সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর এ দিন বিভাগীয় কমিশনার অমরেন্দ্রকুমার সিংহ তাঁর সিদ্ধান্ত জানান। ওই নির্দেশে বলা হয়েছে, পুর আইনের নির্দিষ্ট ধারা মেনেই এই সিদ্ধান্ত। কারণ হিসেবে জানানো হয়, ২০০৯ সালে কংগ্রেসের টিকিটে নান্টুবাবু জিতেছিলেন। পরে তিনি জানান তৃণমূলের সদস্যপদ পেতে তিনি আবেদন করেছেন। গত ১৩ মার্চ চেয়ারম্যান নির্বাচনে তিনি তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থী হয়ে কংগ্রেস প্রার্থী সবিতা অগ্রবালের বিরুদ্ধে লড়েন। চেয়ারম্যান নির্বাচন নিয়ে মামলায় তিনি কংগ্রেস কাউন্সিলরদের সমর্থন করেননি, বরং বিরোধিতা করেছেন। ওই নির্বাচনে ১৪ জন তৃণমূল কাউন্সিলরই তাকে ভোট দিয়েছিলেন এবং তিনিও নিজের পক্ষে ভোট দেন। কিন্তু কংগ্রেসের কাউন্সিলররা ওই ভোটে যোগ দেননি। অর্থাৎ তিনি কংগ্রেসের দলীয় নির্দেশের বাইরে কাজ করেছেন। এ দিন বিভাগীয় কমিশনারের দফতর থেকে রায়ের নির্দেশিকা হাতে পেতেই পুরসভায় কংগ্রেস কাউন্সিলররা উৎসবে মেতে ওঠেন। শুরু হয় মিষ্টি বিলি।
শিলিগুড়ি পুরসভার ৪৭টি আসনের মধ্যে ১৭টি বামেদের দখলে। নান্টুবাবুকে নিয়ে তৃণমূলের কাউন্সিলর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫টি, কংগ্রেসের ১৪টি। একটি ওয়ার্ডে তৃণমূলের কাউন্সিলর ইস্তফা দেওয়ায় ওই আসনটি ফাঁকা। এ দিন রায়ের পর কংগ্রেস এবং তৃণমূল দু’পক্ষের কাউন্সিলর সংখ্যাই দাঁড়াল ১৪ জন করে। |