দলাদলির আঁধারে এ যেন আলোর রেখা!
বুধবার দুপুরে আলিপুরদুয়ারের কালচিনির নিমাতি রাভাবস্তির এক মিছিল দেখে সে কথাই মনে হল। সে মিছিলে কোনও রং নেই। উড়ছে শুধু সাদা পাউডার। পঞ্চায়েতে নির্দল প্রার্থীর জয়ের উৎসব।
ঘটনার সূত্রপাত চার মাস আগে। এ বারের নির্বাচনে গ্রাম পঞ্চায়েতর আসন বিন্যাসের ফলে নিমাতি রাভাবস্তি গ্রামের ৪৬১ জন ভোটারকে নিয়েই একটি পৃথক কেন্দ্র তৈরি হয়। এই এলাকাটি অবশ্য আরএসপি-র ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরে ওই অবিভক্ত আসনে জিতেছেন আরএসপি’র উদুর রাভা। কিন্তু, গ্রামে পাকা রাস্তা নেই, ইন্দিরা আবাসের ঘর পেতেও নানান ঝক্কি, একশো দিনের কাজ জোটেনি সকলের। তাই মাস তিনেক আগে এক সন্ধ্যায় গ্রামে বৈঠক বসে। সিদ্ধান্ত হয়, গোটা গ্রামের প্রতিনিধি হবেন একজনই নির্দল প্রার্থী। প্রথমে বেঁকে বসলেও গ্রামবাসীর সমবেত ‘চাপের’ কাছে হার মানেন আরএসপি নেতারা। বাসিন্দাদের সিদ্ধান্ত মেনে নেয় কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ সব রাজনৈতিক দলই। বাসিন্দারা সাফ জানিয়ে দেন, অন্য ভোটে রাজনৈতিক লড়াই থাকলেও পঞ্চায়েত ভোটে তাঁরা তা করতে দেবেন না। |
সাদা পাউডার উড়িয়ে বিজয় মিছিল। —নিজস্ব চিত্র |
গ্রামের মাধ্যমিক পাশ করা যুবক পেশায় ঠিকাদার সংস্থার কর্মী সঞ্জয় রাভাকে নির্বাচনে দাঁড় করানো হয়। গ্রাম থেকে জেতা গতবারের আরএসপি প্রার্থী উদুর রাভাও সকলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে মনোনয়ন জমা দেয়নি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন সঞ্জয় রাভা। বিজয় মিছিলে হেঁটেছেন বিদায়ী পঞ্চায়েত সদস্য উদুর রাভাও। জয়ী প্রার্থী সঞ্জয় রাভা বলেন, “আমি কেউ নই, জয়ী হয়েছেন সকলেই।”
নিমাতি রাভাবস্তির গ্রাম সভার আহ্বায়ক বিশ্বনাথ রাভা জানান, গ্রামে ১৩৫টি ঘর। তিনি বলেন, “নিমতি জঙ্গল সংলগ্ন গ্রামে প্রায় প্রতি রাতে হাতি হানা দেয়। তা রুখতে ব্যবস্থা হয়নি। তাই আর কোনও দল না। এ বার থেকে একসঙ্গে বসেই গ্রামের সকলে বসে উন্নয়নের কাজ করাতে বাধ্য করাব।”
কী বলছেন অভিজ্ঞ রাজনৈতিক নেতারা? উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “আমি ওঁদের অভিনন্দন জানাতে ওই গ্রামে যাব।” জলপাইগুড়ির বিধায়ক সুখবিলাস বর্মা বলছেন, “গাঁধীজি তো এমন পঞ্চায়েতই চেয়েছিলেন।”
আরএসপির কালচিনি জোনাল সম্পাদক, গৌরী সেনগুপ্ত জানান, তাঁরা অশান্তি এড়াতে গ্রামবাসীদের মতকে মেনে নিয়েছেন। |