‘নিধিরাম’ বালি পুরসভা
নর্দমার পাঁক সাফাইয়ে ভরসা দমকলের জল
লি ও পাঁক তোলার তেমন কোনও পরিকাঠামোই নেই পুরসভার। আর তাই তীব্র বেগে দমকলের জল দিয়ে সাফ করতে হল নর্দমা! আর তার জেরে নিমেষে শেষ হয়ে গেল একটি দমকল ইঞ্জিনের সাড়ে চার হাজার লিটার জল। যদিও পুর প্রধানের যুক্তি: ‘নর্দমা সাফ করতে গেলে একটু জল তো দিতেই হয়।’
বুধবার সকালে নর্দমা থেকে পাঁক ও পলি তুলতে গিয়ে এমনই ঘটল বালিতে। বালি কালীতলার কাছে জিটি রোডের উপর দমকল কেন্দ্রের সামনের বড় নর্দমাটিতে দীর্ঘদিন ধরেই পলি জমে রয়েছে। ফলে অল্প বৃষ্টিতেই নর্দমার জল উপচে রাস্তায় পড়ছে। এমনকী দমকলকর্মীদের ব্যারাকের ভিতরেও সেই নোংরা জল ঢুকে যাচ্ছিল। সেই পলি তুলে নর্দমা সাফ করতে গিয়ে পুরকর্মীরা বিপাকে পড়েন। তখনই দমকলের জল দিয়ে তা সাফ করা হয়।
১৩০ বছরের পুরনো বালি পুরসভা দীর্ঘদিন ধরেই বামেদের দখলে। কিন্তু এত পুরনো একটি পুরসভায় সুষ্ঠু নিকাশি ব্যবস্থা নেই বলেই অভিযোগ বাসিন্দা থেকে বিরোধীদের। সেই কারণেই এ দিন ওই নর্দমার পলি তুলতে গিয়ে দমকলের এক ট্যাঙ্ক জল শেষ হয়ে যায়।
কেন জল নিতে হল দমকলের থেকে? পুরসভার নিকাশি বিভাগের কর্মীদের কথায়, দমকল কেন্দ্রের সামনের ওই নর্দমা দীর্ঘদিন সাফ না হওয়ায় তাতে পলি ও পাঁক শক্ত হয়ে জমে গিয়েছিল। জল দিয়ে নরম করে তা তুলতে হয়েছে। তা না হলে নর্দমা সাফ করা সম্ভব ছিল না। কিন্তু পুরসভার কি পলি তোলার পরিকাঠামো নেই? বালি পুরসভার সিপিএম চেয়ারম্যান অরুণাভ লাহিড়ী অবশ্য এই অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর কথায়, “পরিকাঠামো নিশ্চয়ই আছে।” তা হলে দমকলকে জল দিয়ে পলি তোলার কাজ করতে হল কেন? অরুণাভবাবুর বক্তব্য, “প্রতি বছরই দমকল আমাদের পলি তোলার কাজে জল দিয়ে সাহায্য করে।” তবে হাওড়ার ডিভিশনাল ফায়ার অফিসার সমীর চৌধুরী বলেন, “কাজটা আমাদের করার কথা নয়। কিন্তু আমাদের কর্মীদের তো বাঁচতে হবে। তাই জল দিয়ে দিলাম।”

বহু পুরনো বালি পুরসভার নিকাশি ব্যবস্থা যে বেহাল, তা এখন আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বৃষ্টি শুরু হতেই বালির ৩৫টি ওয়ার্ডে সেই ছবি স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। অল্প বৃষ্টিতেও বালি, বেলুড় ও লিলুয়ার বড় রাস্তা থেকে গলি, সর্বত্র নর্দমা উপচে পড়ছে। কোথাও নর্দমার জল ঢুকে যাচ্ছে বাড়িতে। কয়েক ঘণ্টা টানা বৃষ্টিতে বড় রাস্তায় জল জমছে। সর্বত্রই সমস্যাটা এক পলি ও পাঁকে নিকাশি নালাগুলি দীর্ঘদিন ধরে বুজে রয়েছে। ফলে জমা জল বেরোনোর উপায় নেই।
বিরোধীদের আরও অভিযোগ, বালি পুর-এলাকার নিকাশির কোনও ম্যাপ নেই পুর-কর্তৃপক্ষের কাছে। এমনকী বালিতে কোনও ভূগর্ভস্থ নিকাশি নালাও নেই। ফলে অল্প বৃষ্টিতেই জল জমে যাওয়া এই পুর এলাকায় প্রতি বছরের সমস্যা। আবার পুর-এলাকার পশ্চিম দিকে রেললাইন বরাবর যে সমস্ত ওয়ার্ড রয়েছে, সেই ৩, ৬, ৯, ১১, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের নিকাশির জল লিলুয়ার রানি ঝিলে গিয়ে পড়ে। কিন্তু সংস্কারের অভাবে সেই জল ফের এলাকায় ফিরে আসে। আবার লিলুয়ার দিকে যে সমস্ত ওয়ার্ড রয়েছে, তার নিকাশি নালাগুলি খালে গিয়ে মিশেছে। ফলে পঞ্চায়েতের তরফে তা সাফ না হলে নিকাশি নালাগুলি দিয়েও জল বেরোয় না।
বালি পুরসভার বিরোধী দলনেতা, তৃণমূলের রেয়াজ আহমেদ বলেন, “বর্ষার আগে নিকাশি নালা সাফ করার কোনও আগাম পরিকল্পনাই নেই পুরসভার। তাই বৃষ্টি হলেই ভাসছে বালি।” যদিও অরুণাভবাবু দাবি করেছেন, বালি এলাকায় জলের পাইপলাইন বসানোর জন্য কেএমডিএ রাস্তা খোঁড়াখুড়ি করেছিল। তাতে নর্দমাগুলিতে মাটি পড়ে জমে গিয়েছে। সে জন্যই সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, “খুব শীঘ্রই কেএমডিএ-র সঙ্গে বৈঠক করা হবে। ওরাই নর্দমা সাফ করে দেবে। অনেক বড় নর্দমাই সাফ করা হয়েছে।” ভূগর্ভস্থ নিকাশি নালা না থাকার বিষয়ে পুর-চেয়ারম্যান জানান, কয়েক বছর আগে একটা পরিকল্পনা পাঠানো হয়েছিল সরকারের কাছে। কিন্তু কাজ এগোয়নি। তবে আবার পরিকল্পনা জমা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। অগত্যা এই বর্ষাতেও জল জমাটাই ভবিতব্য বালির।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.