ফের প্রকাশ্য রাস্তায় নিগৃহীতা হলেন এক তরুণী। এ বার হাওড়া শহরে।
রাজারহাটের একটি সফ্টওয়্যার সংস্থার কর্মী ওই তরুণী মঙ্গলবার একটু বেশি রাতে অফিস থেকে ফিরছিলেন। অভিযোগ, সে সময়ে মোটরবাইক-আরোহী চার যুবক তাঁর শ্লীলতাহানি করে। টানা-হ্যাঁচড়ার সময়ে তরুণীর হাত থেকে মোবাইল ফোন ও টাকার ব্যাগ রাস্তায় ছিটকে পড়ে। তরুণীর চিৎকারে কয়েক জন পথচারী ছুটে আসায় ওই যুবকেরা তখনকার মতো পালিয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে অল্প দূরে দুই অভিযুক্তকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হাতেনাতে ধরে ফেলেন এলাকার লোকজন। উত্তম-মধ্যম দেওয়ার পরে তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার চ্যাটার্জিহাট থানার মালিকপাড়া এলাকার শাস্ত্রী নরেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলি রোডে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত দুই যুবকের নাম দেবাশিস সাহা ও প্রশান্ত ভাদুড়ী। বাড়ি জগাছা এলাকায়। ওই তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে দুই যুবকের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা করা হয়েছে। পলাতক দুই যুবকের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
গোটা রাজ্য যখন কামদুনি, গাইঘাটা, গেদের ঘটনা নিয়ে উত্তপ্ত তখন বছর দুয়েক আগে পুলিশ কমিশনারেট হওয়া খোদ হাওড়া শহরে প্রকাশ্য রাস্তায় এই ঘটনায় আতঙ্কিত স্থানীয়েরা। এলাকার বাসিন্দারা এখন পুলিশি নিরাপত্তার দাবি তুলেছেন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশ রাত-পাহারা ঠিক মতো না দেওয়ায় হাওড়ায় ফের চুরি, ছিনতাই, মহিলাদের উত্যক্ত করার ঘটনা বেড়ে গিয়েছে। এলাকার বাসিন্দা সরস্বতী দাস বলেন, “এ সব কী হচ্ছে? আগে তো এখানে এ সব হত না? আমরা সত্যিই এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।” |
ধৃত দুই যুবক।—নিজস্ব চিত্র |
ঠিক কী ঘটেছিল ওই রাতে?
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রাতে ঘটনার আগে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল। রাস্তাঘাট ছিল অস্বাভাবিক রকম ফাঁকা। রাত সওয়া দশটা নাগাদ ওই তরুণী কোনা এক্সপ্রেসওয়ের ব্যাতড় বাসস্ট্যান্ডে নামেন। রিকশার খোঁজ করেও পাননি। তাই হেঁটেই বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। ওই সময়ে দু’টি মোটরবাইকে করে মাথায় রুমালের ফেট্টি বাঁধা চার যুবক পিছন দিক থেকে এসে ওই তরুণীর শ্লীলতাহানি করে। তাঁর উদ্দেশ্যে খারাপ কথা বলে এবং ওই তরুণীর সঙ্গে অশালীন আচরণ করে বলে অভিযোগ ওই তরুণীর। পরে তাঁর হাত ধরে টানা-হ্যাঁচড়াও শুরু করে ওই যুবকেরা। তার জেরে ওই তরুণীর হাতে থাকা মোবাইল ও টাকার ব্যাগ রাস্তায় পড়ে যায়। আতঙ্কে তিনি চিৎকার করে উঠলে কয়েক জন পথচারী ছুটে আসেন। এতে ভয় পেয়ে ওই যুবকেরা মোটরবাইক চালিয়ে পালিয়ে যায়। পুলিশ জানায়, তবুও স্থানীয় এক ব্যক্তি ওই তরুণীকে রাস্তায় কিছুটা এগিয়ে দিয়ে ফিরে যান।
এ দিন নিজেদের বাড়িতে বসে ওই তরুণীর মা বলেন, “আমার মেয়ে ভেবেছিল দুষ্কৃতীরা পালিয়ে গিয়েছে। কিন্তু কিছুটা এগিয়ে আসার পরে ও দেখে ভট্টাচার্য পাড়ার মোড়ে মাথায় রুমালের ফেট্টি বাঁধা দুই দুষ্কৃতী দাঁড়িয়ে রয়েছে। এর পরেই ও আমার স্বামীকে ফোন করে ভট্টাচার্যপাড়ার মোড়ে ডেকে নেয়। হাতেনাতে ধরা পড়ে যায় দুই দুষ্কৃতী।”
ওই তরুণীর মা জানান, গত দু’বছর হল রাজারহাটের একটি সফ্টওয়্যার সংস্থায় চাকরি করছেন তাঁর ছোট মেয়ে। ওই তরুণীর মা জানান, গত কয়েক দিন হল অফিসে কাজের চাপ থাকায় ফিরতে একটু রাত হচ্ছিল তাঁর মেয়ের। না হলে তিনি ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যেই বাড়ি ফিরে আসেন। জানান, রোজ রাতেই মেয়ে বাড়ি ফেরার সময়ে তাঁকে আনতে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের ব্যাতড় বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন তিনি। কিন্তু আফশোস, “শুধুমাত্র মঙ্গলবার রাতেই মেয়ে আমাকে বাসস্ট্যান্ডে যেতে না বলায় আমি ওকে আনতে যাইনি। তাই এমন ঘটল। আমরা ভয়ে কাল সারা রাত ঘুমোতে পারিনি। জানি না এর পরে আবার কী হবে!’’
হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি সদর নিশাত পারভেজ বলেন, “পুলিশ কম থাকায় রাত-পাহারার একটু সমস্যা হচ্ছে ঠিকই। তবে এ জন্য মহিলাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে, এটা ঠিক নয়। চ্যাটার্জিহাটের ঘটনাটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। ওই তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে দুই যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।” |