প্রবন্ধ ২...
কমিউনিটি কলেজের সম্ভাবনা কিন্তু অনেক
কুশ শতকের বিভিন্ন উদ্ভাবন যেমন কাজের জগৎ আর নাগরিক সমাজকে পুনর্গঠিত করেছে, তেমনই অর্থনীতির নতুন ক্ষেত্রগুলির জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান আর দক্ষতারও এক নতুন অর্থ নির্ধারণ করেছে। আমাদের সমস্ত নাগরিকের শিক্ষাগত যোগ্যতার মান সামগ্রিক ভাবে বাড়িয়ে তোলা সহজ কথা নয়। অন্য দিকে, মূল শিল্পগুলিতে দক্ষতার ক্ষেত্রে যে ফাঁকফোকর রয়েছে, সেগুলি চেনাটাও জরুরি।
এখানেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে কমিউনিটি কলেজ। স্থানীয় শ্রমবাজারের পরিস্থিতির সঙ্গে সাযুজ্য রেখে এই কলেজ তাদের পাঠক্রম তৈরি করে। আজকের অর্থনীতি এবং চাকরির বাজারের কথা চিন্তা করে সেই পাঠক্রমকে খানিকটা নমনীয় এবং প্রাসঙ্গিক করেই বানানো হয়। ভর্তির ঝামেলাও কম। এই ধরনের প্রতিষ্ঠান তাদের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের বিশাল সংখ্যক ছাত্রছাত্রীদের কাছে চাকরি-উপযোগী শিক্ষাদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এবং এখানকার স্নাতকরা একটা জ্ঞান-ভিত্তিক অর্থনীতিতে অংশ নেওয়ার যোগ্য।
কী ভাবে সাধারণ মানুষের কাছে এ ধরনের কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষাগত সুযোগসুবিধা পৌঁছে দেওয়া যায় সেটা খুঁজে বের করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয় দেশের কাছেই একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ নিতে পারলে আমরা বিশ্বায়িত অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এবং স্থানীয় চাহিদার প্রতি সংবেদনশীল একুশ শতকের পেশাগত দক্ষতা প্রদান করতে পারব।
তারা ডি সনেনশাইন এবং মার্থা ক্যান্টার
এই বিশ্বায়িত পৃথিবী দিনে দিনে আরও বেশি করে পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হয়ে পড়ছে। এখানে সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান এবং দক্ষতা যাতে আরও বেশি সংখ্যক মার্কিন নাগরিক আয়ত্ত করতে পারে, সেটা দেখা দরকার। মার্কিন স্নাতকদের সংখ্যাও আরও বাড়ানো প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে কমিউনিটি কলেজ বড় ভূমিকা নিতে পারে। প্রেসিডেন্ট ওবামাও সেই দিকেই তাকিয়ে আছেন। আমেরিকায় অন্য যে কোনও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তুলনায় এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে অনেক বেশি পড়ুয়া ভর্তি হয়। স্নাতক স্তরে পাঠরত সমস্ত মার্কিন ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা ১,১০০ কমিউনিটি কলেজের কোনও না কোনওটিতে পড়ছে। অনেক কলেজই স্থানীয় নিয়োগকারীদের সঙ্গে মিলিত ভাবে পাঠক্রম স্থির করে। পাঠশেষে যে ডিগ্রি এবং শংসাপত্র পাওয়া যায়, তা শিল্পক্ষেত্র-স্বীকৃত। এই পাঠক্রমের সাহায্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হেলথ কেয়ার, অ্যাপ্লায়েড ইঞ্জিনিয়ারিং এবং গ্রিন টেকনোলজির মতো ক্ষেত্রগুলির উপযোগী করে তোলা হচ্ছে স্নাতকদের।
আমেরিকার মতো ভারতও একই চ্যালেঞ্জের মুখে। দ্রুত সম্প্রসারণশীল ক্ষেত্রের স্বার্থে দেশের জনসংখ্যাকে শিক্ষিত করে তোলা। এ দেশেও তাই কমিউনিটি কলেজ মডেলের মাধ্যমে পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে, যাতে এই নতুন পেশাগুলির জন্য ভারতীয়দের তৈরি করা যায়। শ্রমশক্তির বাড়তে থাকা চাহিদা মেটাতে এবং এই চমৎকার অর্থনৈতিক উন্নতি ও সামাজিক সমৃদ্ধিকে অটুট রাখতে সারা দেশ জুড়ে কমিউনিটি কলেজগুলোর মধ্যে যাতে একটা নেটওয়ার্ক তৈরি করা যায়, সে জন্যও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
ফেব্রুয়ারি নাগাদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক আয়োজিত ‘ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটি কলেজ কনফারেন্স’-এ যোগ দিয়েছিল। শিল্পক্ষেত্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে সম্পর্কযুক্ত প্রায় দুশোটি কমিউনিটি কলেজের মধ্যে একটা নেটওয়ার্ক তৈরি করা ছিল এর উদ্দেশ্য। সম্প্রতি ভারত সরকার গড়ে তুলেছে ‘ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি’। লক্ষ্য, দক্ষতা বৃদ্ধিতে সরকারি উদ্যোগের সঙ্গে বেসরকারি উদ্যোগের সমন্বয় সাধন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও এমন প্রচুর মডেল রয়েছে। ওয়াশিংটনে স্পোকেন কমিউনিটি কলেজ কাজ করছে বিভিন্ন বিমান-পরিবহণ সংস্থার সঙ্গে, সমগ্র প্রদেশের বিমান পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের প্রশিক্ষণকে আরও উন্নত করে তোলার লক্ষ্য নিয়ে। মেরিল্যান্ডে এক ওষুধ কোম্পানি দিচ্ছে স্কলারশিপ, যাতে মন্টগোমারি কমিউনিটি কলেজের ছাত্রছাত্রীরা বায়ো-ম্যানুফ্যাকচারিং ফিল্ডে কেরিয়ার বানাতে উৎসাহিত হয়। এই সংস্থাগুলি কমিউনিটি কলেজের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে সেই সমস্ত ছাত্রছাত্রীর পিছনে বিনিয়োগ করছে, যারা প্রয়োজনীয় দক্ষতার চাহিদা মেটাতে পারবে। বিনিময়ে, তাদের দেওয়া হচ্ছে প্রকৃত এবং নির্দিষ্ট একটা কেরিয়ারের হদিশ।
এমন অংশীদারি বাড়াতে ওবামা প্রশাসন কমিউনিটি কলেজগুলিতে বিশাল লগ্নি করেছে। এই উদ্যোগ যৌথ ভাবে পরিচালিত হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা এবং শ্রম বিভাগের উদ্যোগে। কেরিয়ার ট্রেনিং প্রোগ্রামগুলির সংখ্যা আরও বাড়াতে বাড়তি অর্থের সংস্থান করা হয়েছে।
ওয়াশিংটনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পাল্লাম রাজুর সফরে আমরা এক সঙ্গে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছি, জ্ঞান অর্জনের জন্য পড়ুয়াদের উচ্চ মানের এবং সাশ্রয়ী নির্দেশিকা দিতে। আগামী ইউ এস-ইন্ডিয়া হায়ার এডুকেশন ডায়লগ আরও একটা সুযোগ তৈরি করতে চলেছে। এই যৌথ উদ্যোগকে আরও নিবিড় করে তোলার এবং আমাদের দেশের উন্নতিকে একক ও যৌথ ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ। পড়ুয়াদের আধুনিক শ্রমশক্তির উপযোগী করে তুলতে সাধ্যের মধ্যে উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দেওয়ার লক্ষ্যটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী, কিন্তু অসাধ্য নয়। ভারতের সঙ্গে যৌথ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া নিয়ে আমরা আশাবাদী। কমিউনিটি কলেজ ব্যবস্থা গড়ে তোলায় ভারতের ভূমিকা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

তারা ডি সনেনশাইন মার্কিন পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্স বিভাগের, এবং মার্থা ক্যান্টার মার্কিন শিক্ষা বিভাগের আন্ডারসেক্রেটারি


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.