সিরিয়ার ভবিষ্যৎ লইয়া বিশ্বের আট শক্তিধর রাষ্ট্রের গোষ্ঠী (জি-৮) আয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত শীর্ষ বৈঠকে যে ঐকমত্যে পৌঁছাইয়াছে, তাহাকে খুব আশাপ্রদ বলা যাইবে না। সত্য, এই বৈঠকে রাশিয়াকে অনেকাংশে প্রেসিডেন্ট বাশার-আল-আসাদের প্রতি নিঃশর্ত সমর্থনের অবস্থান হইতে সরাইয়া আনা গিয়াছে। একই সঙ্গে বিদ্রোহীদের হাত শক্ত করিতে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত করার প্রশ্নেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলির সহিত সহমত হইয়াছে। কিন্তু ইহা আর যাহাই হউক, সিরিয়ায় কোনও স্থায়ী শান্তির আগমনী নয়, বরং এই ব্যবস্থাপত্রে দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধের যাবতীয় সম্ভাবনাই নিহিত রহিয়াছে।
বাশার-আল-আসাদ যে মুয়াম্মর গদ্দাফি নহেন, তাহা এত দিনে স্পষ্ট। আসাদ যে শিয়া জনগোষ্ঠীর আধিপত্য কায়েম রাখিয়াছেন, তাহাকে উৎখাত করিতে সৌদি আরব, মিশর প্রভৃতি সুন্নি দেশগুলিও বিদ্রোহীদের সাহায্যে আগাইয়া আসিতে প্রস্তুত। কিন্তু আসাদের পক্ষেও ইরান রহিয়াছে, আছে ইরাকের শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনও। লেবাননের জঙ্গি শিয়া গোষ্ঠী হেজবুল্লার সমর্থনকেও হিসাবের মধ্যে রাখা ভাল, কয়েক বছর আগে ইজরায়েলকে তাহারা যে ভাবে পর্যুদস্ত করিয়াছিল! তাই বাশার-আল-আসাদকে ইউরোপীয়-মার্কিন অস্ত্রসাহায্যের জুজু দেখাইয়া বিদ্রোহীদের সহিত আপস-বৈঠকে বাধ্য করা যাইবে, এমন সম্ভাবনা কম। জেনিভায় অনুষ্ঠেয় বৈঠকে আসাদ-পরবর্তী জমানার শাসনপ্রণালী লইয়া সিরিয়ার সকল পক্ষ আলোচনায় বসিবে, এমন স্থির করা হইয়াছে। কিন্তু বৈঠকের দিনক্ষণ স্থির হয় নাই। আসাদ ও তাঁহার বিদ্রোহীদের তরফে কাহারা সেই বৈঠকে প্রতিনিধিত্ব করিবেন, সেটাও আদৌ স্পষ্ট নয়। সর্বোপরি, প্রস্তাবিত আসাদ-পরবর্তী বন্দোবস্তে বিদ্রোহীদের প্রতিনিধিত্ব থাকিলেও আসাদ নিজেও যে থাকিবেন না, এমন নিশ্চয়তাও কিছু নাই। সিরিয়ায় যুযুধান দুই পক্ষ পরস্পরকে বিশ্বাস করিতে না পারিলে কোনও আপসই সম্ভব নয়। পরস্পরের প্রতি যে নৃশংসতা উভয় পক্ষই দেখাইয়াছে, তাহাতে আস্থা ফেরানো সহজ হইবে না। আবার লিবিয়ার অভিজ্ঞতা হইতে পশ্চিমি গণতন্ত্র শিখিয়াছে, বাহির হইতে একটি অপ্রস্তুত রাষ্ট্রে ও সমাজে জোর করিয়া পাশ্চাত্য ধাঁচের গণতন্ত্র চাপাইতে যাওয়ার ঝুঁকি কোথায় এবং কতটা। বিদ্রোহীরাও যে কোনও সমুচ্চ গণতান্ত্রিক আদর্শের জন্য লড়িতেছে, এমন প্রমাণ নাই। জেহাদিরাও যে এই শিবিরে অনুপ্রবেশ করিয়াছে এবং যে-কোনও ভবিষ্যৎ বন্দোবস্তে নিজেদের ‘ভাগ’ চাহিয়া বসিবে, তাহাও এক প্রকার নিশ্চিত। তাই অতি সাবধানে অগ্রসর হওয়া দরকার। সিরিয়া লইয়া সকলের মাথাব্যথা থাকিবে আর ইরানের কোনও আগ্রহ থাকার কথা নয়, এমনও মনে করার কারণ নাই। ইরানকে বাহিরে রাখিয়া সিরিয়ায় শান্তিস্থাপনের কোনও উদ্যোগ সফল হইতে পারে না। |