|
|
|
|
অম্বুবাচীর জন্য কামাখ্যায় প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে |
রাজীবাক্ষ রক্ষিত • গুয়াহাটি |
হাতে বাকি আর তিনদিন। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় অম্বুবাচী উৎসবের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে কামাখ্যা। ইতিমধ্যে মন্দির চত্বরে প্রায় তিরিশ হাজার ভক্ত ও সন্ন্যাসীর সমাগম হয়েছে। নীলাচল পাহাড়ের মাথায় এখনই ভক্তদের ঠেলাঠেলিতে ঠাঁই নাই দশা। ২২ জুন বন্ধ হয়ে ২৬ জুন, অম্বুবাচী শেষ হলে খুলবে কামাখ্যা মন্দির।
কামাখ্যায় গিয়ে ভক্তদের ভিড় ছাড়া কিন্তু মনেই হবে না অম্বুবাচী আসছে। মন্দির ঢেকে প্যান্ডেল নেই। সাধুদের জায়গা দখলের লড়াই নেই। বিষ্ঠার গন্ধ বাতাস ভারী করে তোলেনি এখনও! অম্বুবাচী মেলায় কামাখ্যা ও নীলাচল পাহাড়ের এমন সাফসুতরো চেহারার রহস্যটা কী?
এতদিন অবধি মেলার চারদিন কামাখ্যার মাঠ, তারা মন্দির, সৌভাগ্য কুণ্ড, দশনামি আখড়া, কৌটি লিঙ্গ, নমথ কালী মন্দির, কামাখ্যা হাই স্কুলের সামনে সন্ন্যাসীদের থাকবার জন্য প্যান্ডেলের ব্যবস্থা করা হত। কামাখ্যা অবধি এবং কামাখ্যা থেকে ভুবনেশ্বরী মন্দির যাওয়ার পথে শৌচালয়ের সারি বসত। এরপর বৃষ্টি হলেই দুর্গন্ধযুক্ত জল গড়িয়ে নামত। দেশি ও বিদেশি পর্যটকের সামনে মুখ পুড়ত অসম সরকারের। সেই নারকীয় দৃশ্য ও পরিস্থিতিকে বদলে দিতে চলেছে রাজ্য পর্যটন দফতর। দফতরের অধিকর্তা অঞ্জন চক্রবর্তী জানান, এ বছর মন্দির চত্বরে না থাকবে সন্ন্যাসীদের প্যান্ডেল, না বসবে অস্থায়ী শৌচাগার। এ বছর কামাখ্যা স্টেশনের বাইরে, সোনারাম স্কুলের মাঠ ও পুরনো পাণ্ডু স্টেশনের চত্বরে সন্ন্যাসীদের আখড়া ও ভক্তদের আস্তানা তৈরি করা হয়েছে। শৌচালয়, স্বাস্থ্যকেন্দ্রও বসবে নীচেই। খাওয়ার জন্য লঙ্গরের ব্যবস্থা করবে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি। নীচে থেকে ভক্তদের বিনামূল্যে বাসে করে মন্দিরে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা থাকছে। তাই উপরের চত্বর, পরিবেশ কলুষিত হওয়া থেকে অনেকটাই বাঁচবে। |
|
কামাখ্যা মন্দিরে ভক্তরা। ছবি: উজ্জ্বল দেব। |
নীচের আস্তানায় অবশ্য চল্লিশ ফুটের জটা, কলকে হাতে বাবাদের সারি, ব্যায়াম বাবা, নাগা বাবারা ইতিমধ্যেই জায়গা দখলের লড়াইয়ে সামিল। লাল শাড়ি আর ত্রিশূল হাতে মায়েরাও কোঁদলে পিছিয়ে নেই। বহুরূপীর দল বাংলা থেকে কামাখ্যার পাহাড়ে হাজির। পাহাড়ের মাথার মতোই গুয়াহাটির রাজপথও আপাতত সাধু-সন্ন্যাসীদের দখলে। ব্রহ্মপুত্রের পাড়, প্রমোদ উদ্যানগুলিও গেরুয়ার রঙে রঙীন। ভিনরাজ্য এবং ভিনদেশ থেকে কামখ্যার ডাকে সাড়া দেওয়া সাধু, সন্ন্যাসী, গৃহী, গৃহত্যাগীদের ভিড় পথে, বাসে, অটোয়।
পর্যটন দফতরের মুখপাত্র সমীর তাঁতীর মতে, এ বছর অন্তত লাখ ছয়েক মানুষের সমাগম হতে চলেছে নীলচল পাহাড়ের বুকে। নীলাচল পাহাড়ে মোতায়েন হচ্ছেন প্রায় হাজারখানেক নিরাপত্তারক্ষী ও স্বেচ্ছাসেবক। তাঁতী বলেন, “এই বছর কামাখ্যার অম্বুবাচী, উমানন্দ ও শিবসাগরের শিবদোলে শিবরাত্রি, বরপেটা ও বরদোয়ার দোলোৎসব এবং পোয়া মক্কার উর্স উৎসবের জন্য সরকার ৪ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল দিয়েছে। এর মধ্যে, কামাখ্যার জন্যই ব্যয় হবে প্রায় অর্ধেক। কুম্ভ মেলাকে নিয়ে উত্তরপ্রদেশ যেমন তীর্থ পর্যটনকে তুলে ধরছে, অসমে কামাখ্যাকে কেন্দ্র করে আমরা সেই ভাবেই তীর্থ-পর্যটনকে তুলে আনতে চাই। এই কাজে পর্যটন, জনস্বাস্থ্য কারিগরী, স্বাস্থ্য ও পুলিশ বিভাগ হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে।” |
|
|
|
|
|