সশরীরে হাজির ছিলেন না। তবু ছিলেন। বিরোধী, শাসক দুই শিবিরেই! শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। কখনও নামে, কখনও নামহীন ভাবে।
তিনি নমো। নরেন্দ্র মোদী।
তাঁকে কেন্দ্র করেই বিজেপি-জেডিইউয়ের মধ্যে ভাঙনের শুরু। প্রথম থেকেই নরেন্দ্র মোদীকে জোটের নেতা হিসেবে মেনে নিতে নিজের আপত্তি জানিয়েছেন নীতীশ কুমার। এবং তা প্রকাশ্যে জানাতেও দ্বিধা করেননি। যা নিয়ে গত কয়েক বছরে বারবার বিব্রত হয়েছে বিজেপি। কিন্তু গোয়ায় বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে মোদীকে দলের প্রচারক হিসেবে বেছে নেওয়ার পর সেই লড়াই চরমে ওঠে। এনডিএ ছাড়ে নীতীশের দল জেডিইউ। বিহারেও ভেঙে যায় বিজেপি-জেডিইউ জোট।
আজ বিহার বিধানসভার আস্থা ভোটে তাই প্রথম থেকে শেষ অবধি আলোচনায় রইলেন নরেন্দ্র মোদী। এ দিন বিহার বিধানসভা কখনও কেঁপে উঠেছে ‘নরেন্দ্র মোদী জিন্দাবাদ’ স্লোগানে। কখনও ‘নরেন্দ্র মোদী মুর্দাবাদ’ আওয়াজে।
আস্থা ভোট নিয়ে বিতর্কের শুরুতে বিজেপি নেতা নন্দকিশোর যাদব বক্তৃতা দিতে উঠতেই ‘নমো জিন্দাবাদ’, ‘নরেন্দ্র মোদী জিন্দাবাদ’ আওয়াজ দিতে শুরু করেন বিজেপি বিধায়কেরা। নন্দকিশোরের বক্তৃতারও অনেকটাই জুড়ে ছিলেন মোদী। নীতীশ কুমারের উদ্দেশে বিজেপির পরিষদীয় দলের নেতা নন্দকিশোর যাদব বলেন, “নরেন্দ্র মোদীর অপরাধ কোথায়! গরিবের ছেলে, বাবার চায়ের দোকান ছিল, সেখান থেকে উঠে এসে তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন। তাঁর কী অপরাধ? আপনিই তো পিছড়েবর্গের কথা বলেন। নরেন্দ্র মোদী তো সেই পিছড়েবর্গ থেকেই উঠে এসেছেন। আপনি তো প্রধানমন্ত্রী পদের লড়াইয়েও ছিলেন না! তবে কেন বিরোধিতা করলেন?” নন্দকিশোরের কথা শেষ হতেই শুরু হয়ে যায় বিজেপির বিধায়কদের হইচই। ফের শুরু হয় মোদীর নামে স্লোগান।
বক্তৃতায় নরেন্দ্র মোদীর নাম করেন আরজেডি নেতা আব্দুল বারি সিদ্দিকিও। নীতীশ এবং বিজেপি-কে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “এত দিন আমরা এক বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করতাম। এখন থেকে দু’টো বিজেপি-র বিরুদ্ধে লড়াই করব! এক দল লালকৃষ্ণ আডবাণীর বিজেপি, অন্যটি নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি!” নির্দল বিধায়ক জ্যোতি লক্ষ্মীর মুখেও ছিল মোদীর নাম! নীতীশের কড়া সমালোচনা করে এই মহিলা বিধায়ক বলেন, “নরেন্দ্র মোদী তো প্রধানমন্ত্রী হবেন। কিন্তু আপনি তো জেলে যাবেন!”
সরকার পক্ষের হয়ে জবাব দিতে উঠে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার কিন্তু একবারের জন্যও মোদীর নাম মুখে আনেননি। নন্দকিশোর যাদবের প্রশ্নের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “পিছড়েবর্গের নেতা তিনিই হন, যিনি পিছড়েবর্গের অধিকারের জন্য লড়াই করেন। রামমোহন লোহিয়া পিছড়েবর্গের না হয়েও তাই তাঁদের নেতা ছিলেন। আর ওঁরা যাঁর কথা বলছেন, তিনি তো কর্পোরেটদের নেতা। কর্পোরেট জগতের তৈরি হাওয়ায় দেশ চলবে না। কিছু দিনের জন্য বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। আর যদি হয়, তা হলে দেশ দ্বিখণ্ডিত হয়ে যাবে।”
তিন বছর আগে এই জুন মাসেই পটনায় বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের সময়ে মোদীর দেওয়া বিজ্ঞাপনকে ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্কের প্রসঙ্গও আজ তোলেন নীতীশ। তিনি বলেন, “কোনও রাজ্যকে সহায়তা করলে কেউ তা ফলাও করে প্রচার করে নাকি! এক রাজ্যের পাশে অন্য রাজ্যের দাঁড়ানোটাই এ দেশের ঐতিহ্য। কিন্তু উনি তো কোশী বন্যায় ৫ কোটি টাকা সাহায্য করে ফলাও করে তা প্রচার করলেন! আমি দুঃখ পেয়েছিলাম। বিহারের আত্মসম্মানে লেগেছিল। তাই ওই টাকা আমি ফেরত দিয়ে দিয়েছি।”
আর এই প্রসঙ্গেই ফের বিজেপির বর্তমান নেতৃত্বের সমালোচনা করেন নীতীশ। তিনি বলেন, “এ দেশের রেওয়াজ মানুষের সঙ্গে বিভেদ করে উন্নয়ন করা নয়। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়ন করা। অটলবিহারী বাজপেয়ী সবাইকে নিয়ে চলতেন। আর এখন তো আরএসএস সরাসরি ঘোষণাই করেছে তারা হিন্দুত্বের রাস্তায় চলবে!”
এ ভাবেই না থেকেও বিহার বিধানসভায় দিনভর অদৃশ্য ভাবে উপস্থিত রইলেন নরেন্দ্র মোদী। বিজেপি শিবির বলছে, এ বার মোদীকে সশরীরে হাজির করে নীতীশকে আরও বিড়ম্বনায় ফেলা হবে। বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, “এ তো সবে শুরু! এত দিন তো নীতীশের নিষেধাজ্ঞা মেনে আমরা মোদীকে এখানে প্রচারে আনিনি। এ বার লোকসভা ভোটে কিন্তু মোদী বিহারে প্রচারে আসবেন। আমরা হয়তো নীতীশের গড় নালন্দা থেকেই মোদীর প্রচার শুরু করব।”
তাই, বিহারের রাজনীতিতে মোদীর ছায়া দীর্ঘতর হওয়ারই সম্ভাবনা।
|