|
|
|
|
|
|
|
মূলধনী লাভ কর |
বাড়ি-গাড়ি-গয়না, লাভ হলেই কর
সম্পদ বাড়িয়ে ভবিষ্যত্ সুরক্ষিত করছেন ভাল কথা। সরকারকে
তার প্রাপ্য অংশ দিতে ভুলছেন না তো? লিখছেন নারায়ণ জৈন |
|
কাউকে যদি তাঁর পাওনা-গণ্ডা ঠিকঠাক না-মেটান, তা হলে আপনার দৈনন্দিন জীবনযাপন কি খুব শান্তিপূর্ণ থাকে? বোধ হয় না। আর সরকারের ঘরে দেয় টাকা বাকি রেখে দিলে তো কথাই নেই। বড়সড় খেসারত দিতে হতে পারে। আর সেটা যাতে না-ঘটে সেই জন্যেই আপনার রোজগার বা লাভের কতটা অংশ সরকারের প্রাপ্য, সেটা জেনে রাখা খুব জরুরি। আয়ের উপর কর তো আছেই। এ ছাড়া হাতে জমি, বাড়ি-সহ কোনও ‘ক্যাপিটাল অ্যাসেট’ এলে, তা থেকে যে-আয় বা মুনাফা করেন সেটাও করযোগ্য। এই লাভ ‘ক্যাপিটাল গেইন্স’ বা মূলধনী লাভ। তাই এর জন্য দেয় কর হল ক্যাপিটাল গেইন্স ট্যাক্স বা মূলধনী লাভ কর। যে অর্থবর্ষে ওই সম্পদের হস্তান্তর হচ্ছে অর্থাত্ ওই লাভ আপনার হাতে আসছে, সেই বছরের আয় হিসেবেই একে ধরা হয়ে থাকে।
মূলধনী লাভের অঙ্ক
কোনও ক্যাপিটাল অ্যাসেট (মূলধন) হাত বদলের ফলে যে দাম পাওয়া যায়, তা থেকে সম্পদটি সংগ্রহের খরচ, উন্নতিসাধন, হস্তান্তরের অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ ইত্যাদি বাদ দেওয়ার পর যদি কোনও লাভ হয়, আয়করের ভাষায় তাকেই বলা হয় মূলধনী লাভ।
ক্যাপিটাল অ্যাসেট কী কী
আপনাকে কীসের উপর ক্যাপিটাল গেইন্স ট্যাক্স দিতে হবে, তা বুঝতে প্রথমে জানতে হবে কোনগুলি ক্যাপিটাল অ্যাসেট-এর মধ্যে পড়ে। মনে রাখবেন, এই সম্পদ যে সব সময়ে কাজ বা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হবে তা নয়। তা স্থাবর, অস্থাবর দু’ধরনেরই হতে পারে। কিছু কিছু ব্যক্তিগত সম্পদও এর আওতায় পড়ে, যেগুলি বিক্রি করলে ওই কর দিতেই হয়। এই তালিকায় রয়েছে
• জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট (কৃষিজমি ছাড়া)।
• যা কেনার জন্য খরচ করতে হয়নি কিন্তু ভাড়া দেওয়ার অধিকার আছে।
• যে স্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করার অধিকার আছে।
• গাড়ি ও অন্যান্য যান (ব্যবসা বা সংস্থায় ব্যবহারের জন্য)।
• শেয়ার, ডিবেঞ্চার ইত্যাদি।
• পার্টনারশিপ ফার্মের অংশীদারি।
• লিজ নেওয়া খনি।
• কৃষিজমির অন্তর্ভুক্ত গাছপালা।
• চালু ব্যবসা বা উদ্যোগ।
• ব্যক্তিগত ব্যবহারের জিনিস যেমন: গয়না, চিত্রকলা, ভাস্কর্য, প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহ, বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম।
কোনগুলি নয়
এ বার জানুন আয়কর আইন অনুযায়ী কোনগুলি ক্যাপিটাল অ্যাসেট নয়। এগুলি বিক্রি বা হস্তান্তর করে আয় বা মুনাফা করলে ক্যাপিটাল গেইন্স ট্যাক্স দিতে হবে না। এই তালিকায় আছে
• স্টক ইন ট্রেড (ব্যবসার মজুত মাল)।
• কনজিউমেবল্ স্টোরস (উত্পাদনের আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম)।
• ব্যবসার কাঁচামাল।
• কৃষিজমি।
• ব্যক্তিগত ব্যবহারের পণ্য হিসেবে ঘড়ি, জামাকাপড়, গাড়ি, দু’চাকার গাড়ি, আসবাবপত্র, টিভি, ফ্রিজ ইত্যাদি।
• বিভিন্ন ধরনের গোল্ড বন্ড।
উদাহরণ
ধরা যাক, আপনি ১০ হাজার টাকায় একটি ঘড়ি কিনেছিলেন ১৯৯৮ সালে। চলতি বছর অর্থাত্ ২০১৩-র মার্চে সেটি ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। যেহেতু ঘড়ি ক্যাপিটাল অ্যাসেট নয়, তাই আপনাকে মুনাফার উপর ক্যাপিটাল গেইন্স ট্যাক্স দিতে হবে না। কিন্তু এখানে ঘড়ির জায়গায় যদি ফ্ল্যাট বেচে কোনও মুনাফা করতেন, তা হলে কিন্তু ওই কর দিতে হত। |
|
মূলধনী লাভ দু’ধরনের
মালিকানার মেয়াদের ভিত্তিতে ‘ক্যাপিটাল অ্যাসেট’-এর দু’টি ধরন:
(ক) দীর্ঘকালীন: ধরা যাক আপনি কোনও ক্যাপিটাল অ্যাসেট কেনার ৩৬ মাস পরে তা বিক্রি বা হস্তান্তর করলেন। সে ক্ষেত্রে এটি দীর্ঘকালীন ক্যাপিটাল অ্যাসেটের মর্যাদা পাবে। এবং ওই বিক্রি বা হস্তান্তর থেকে যে- মুনাফা করবেন আপনি, তা দীর্ঘকালীন মূলধনী লাভ হিসেবে গণ্য হবে।
তবে আপনার ওই ক্যাপিটাল অ্যাসেট যদি স্বীকৃত স্টক এক্সচেঞ্জে নথিভুক্ত শেয়ার বা নির্দিষ্ট কিছু মিউচুয়াল ফান্ড হয়, তা হলে আবার নিয়মটি আলাদা। ওই সম্পদগুলি কেনার পর ১২ মাসের বেশি সময় ধরে রাখলেই তার বিক্রি বা হস্তান্তর থেকে আয় হওয়া মুনাফাকে দীর্ঘকালীন মুলধনী লাভ হিসেবে ধরা হয়।
(খ) স্বল্পকালীন: অন্য দিকে, যে সমস্ত ক্যাপিটাল অ্যাসেট ৩৬ মাসের কম সময় ধরে রেখেই বিক্রি বা হস্তান্তর করা হয়, সেগুলি স্বল্পকালীনের দলে। এবং তা বিক্রি বা হস্তান্তর থেকে প্রাপ্ত লাভ অবশ্যই স্বল্পকালীন মূলধনী লাভ।
মেয়াদ অনুযায়ী কর
দীর্ঘকালীন ও স্বল্পকালীন মূলধনী লাভের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ—
• এর ফলে দেয় করের পরিমাণে তারতাম্য হয়। দীর্ঘ মেয়াদে আয়কর কম দিতে হয় আর স্বল্পকালীন লাভ সাধারণ আয়ের সঙ্গে যোগ হয়ে যায়। ফলে কর বেশি হতে পারে।
• দীর্ঘকালীন ক্যাপিটাল অ্যাসেট কেনার খরচ ও তার থেকে লাভ হিসাব করার সময়ে মূলবৃদ্ধির সূচক (এর পরেই বলছি এই সূচকের কথা) প্রয়োগের সুবিধা নেওয়া যায়। যা করের হার কমাতে সাহায্য করে। |
|
মূল্যবৃদ্ধি-সূচক
ইংরেজিতে একে বলা হয় ‘কস্ট ইনফ্লেশন ইনডেক্স’। আগেই বলেছি দীর্ঘকালীন মূলধনী সম্পদ কেনার খরচ হিসাব করার সময় মূল্যবৃদ্ধি-সূচক প্রয়োগ করা যায়।
মূল্যবৃদ্ধি-সূচকের ভিত্তি বছর ধরা হয় ১৯৮১-’৮২ অর্থবর্ষ। ওই বছরের জন্য নির্দিষ্ট ১০০ পয়েন্ট। ওই ভিত্তি বছর ধরেই পরের বছরগুলির সূচক ধার্য হয় মূল্যবৃদ্ধির হার অনুযায়ী। যেমন, ২০১২-’১৩ অর্থবর্ষের সূচক বেড়ে হয়েছিল ৮৫২ পয়েন্ট। আর চলতি ২০১৩-’১৪ অর্থবর্ষের ৯৩৯ পয়েন্ট। আয়কর দফতর প্রতি বছর প্রকাশ করে এই সূচক।
মূল্য-সূচকের ভিত্তিতে ক্যাপিটাল অ্যাসেটের দামের তারতম্যের বিষয়টি এ বার আপনাদের বলি। ধরা যাক, ১৯৮১-’৮২ সালে ১০ লক্ষ টাকা খরচ করে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। এর মধ্যে বিক্রেতাকে দিতে হয়েছে ৯.২০ লক্ষ এবং স্ট্যাম্প ডিউটি ও রেজিস্ট্রেশনের জন্য লেগেছে ৮০ হাজার টাকা। এ বার ২০১২-’১৩ সালে মূল্যবৃদ্ধির সূচক অনুযায়ী সেটির দাম ধরা হবে ৮৫ লক্ষ ২০ হাজার টাকা (১০ লক্ষ X ৮৫২/১০০)। এ বার ধরা যাক, গত মার্চে সেটির স্ট্যাম্প ডিউটি মূল্য নির্ধারিত হল ১ কোটি টাকা। তা হলে করের হার কী হবে?
ধরে নিই আপনি দলিলে ফ্ল্যাটের দাম দেখিয়েছেন ৯০ লক্ষ টাকা। কিন্তু আয়কর দফতর আইন করেছে যে, দলিলে ফ্ল্যাটের দাম যত দেখানো থাকে, তা থেকে যদি স্ট্যাম্প ডিউটি বেশি হয়, তা হলে স্ট্যাম্প ডিউটি মূল্য ধরেই ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্স হিসাব হবে। সে ক্ষেত্রে এক কোটি থেকেই বাদ দেওয়া হবে ৮৫.২০ লক্ষ টাকা। অর্থাত্ দীর্ঘমেয়াদে মূলধনী লাভের অঙ্ক হবে ১৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। এর উপর ২০% হারে কর দিতে হবে।
|
(চলবে)
লেখক আইনজীবী ও কর বিশেষজ্ঞ |
|
|
|
|
|