|
|
|
|
|
|
|
কমোডিটি এক্সচেঞ্জ |
কেনা দামে বেচলেও ক্ষতি
ক্ষতির ভয়ে কেনা দামে বা অল্প লাভেই পণ্য বেচে বাজার থেকে বেরিয়ে গেলেন।
কিন্তু ভেবেছেন কি, লাভের গুড় খরচ খেয়ে গেল কি না? লিখেছেন অরিন্দম সাহা |
|
একশো টাকা দিয়ে জিনিস কিনে একই দামে তা বিক্রি করলেন। ভাবলেন এতে কোনও ক্ষতি হল না। কিন্তু এ ভাবে যদি আপনি কমোডিটি এক্সচেঞ্জে পণ্য লেনদেন করেন, তা হলে কিন্তু লোকসানই হবে। কেন? কারণ পণ্য লেনদেনের জন্য কিছু চার্জ দিতে হয়। যেমন, লেনদেন খরচ, অ্যাকাউন্ট রক্ষণাবেক্ষণ খরচ, স্ট্যাম্প ডিউটি ইত্যাদি। সেই খরচ যোগ করে লোকসানের অঙ্ক বেশ বড় হতে পারে আপনার জন্য। তাই বিষয়টি বুঝতে আজ পণ্য লেনদেনের বাজারে নির্দিষ্ট কিছু খরচ, কর নিয়ে আলোচনা করব। যাকে সম্মিলিত ভাবে ‘কস্ট অফ ট্রেডিং’ বলা হয়।
সবার প্রথমে বলি এই বাজারে পা রাখার আগে খরচ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা তৈরি করা জরুরি। নিজের ব্রোকার সদস্যের থেকে বিষয়টির বিস্তারিত ও লিখিত বিবরণ চেয়ে নিন। যাতে ভবিষ্যতে ঝামেলা এড়ানো যায়।
স্ট্যাম্প ডিউটি
আগাম পণ্য লেনদেনের চুক্তিপত্রটি একটি আইনি নথি। তাই এর স্ট্যাম্প ডিউটি দিতে হয়।
এই খাতে কত টাকা গুনতে হবে, তা নির্ভর করে দু’টি বিষয়ের উপর
১) আপনি যে-রাজ্যে থাকেন, তারা যদি এই স্ট্যাম্প ডিউটি নেয়।
২) সদস্য ব্রোকার যে-রাজ্যে থাকেন, তারা যদি এই কর নেয়।
স্ট্যাম্প ডিউটি আইনে নির্দিষ্ট করা না-থাকলে সাধারণত এই ডিউটি নেওয়ার সময়ে লগ্নিকারীর বাসস্থান কোন রাজ্যে, তার গুরুত্ব বেশি থাকে। আপনার সঙ্গে এক্সচেঞ্জের চুক্তিপত্রের আকারের (মোট লগ্নির অঙ্ক) ভিত্তিতেই স্ট্যাম্প ডিউটির অঙ্ক ঠিক হয়। ধরে নিন, প্রতি কোটি টাকায় স্ট্যাম্প ডিউটি ২০০ টাকা। তা হলে প্রতি ১০ গ্রাম ২৫ হাজার টাকা দরে ১ কেজি সোনার ডিউটি ৫০ টাকা।
বিভিন্ন রাজ্যে ডিউটি আলাদা হওয়ায় অনেক সময়েই সমস্যা হয়। তবে সারা দেশেয প্রত্যক্ষ কর বিধি চালু হলে তার সমাধান হবে বলে মনে হয়। |
|
ব্রোকারেজ
পণ্য লেনদেনের বাজারে ১ পয়সা, ২ পয়সা শব্দগুলি খুবই প্রচলিত। বেশির ভাগ সময়েই সদস্য ব্রোকারদের পাওনা বা ব্রোকারেজ বোঝাতে এর উল্লেখ করা হয়। এখানে ১ পয়সা মানে ১০০ টাকার (১০,০০০ পয়সা) ০.০১%। অর্থাত্ ১ কোটি টাকার লেনদেনে ব্রোকারেজ হবে ১,০০০ টাকা। এই বাজার যেহেতু ভবিষ্যতের দামের উপর নির্ভরশীল এবং মূলত মার্জিন মানি (লেনদেনের শুরুতেই যে টাকা জমা দিয়ে চুক্তি করতে হয়)-র ভিত্তিতে হিসাব করা হয়, সে কারণে আগাম পণ্য লেনদেনের বাজারে ব্রোকারেজ খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে। কী রকম?
ধরুন আপনি প্রতি ১০ গ্রাম ২৫,০০০ টাকা দরে ১ কেজি সোনা কিনতে চুক্তি করেছেন। ফলে পণ্যের দাম দাঁড়াচ্ছে ২৫ লক্ষ টাকা। কিন্তু এ জন্য মার্জিন মানি ১০% (২.৫ লক্ষ)। অর্থাত্ আপনি আসলে ২.৫ লক্ষ টাকা দিয়েই লেনদেন করছেন। এ ভাবে যদি পণ্য কেনা ও বিক্রি করা যায়, তা হলে মোট ৫০ লক্ষ টাকার লেনদেন হচ্ছে। যার ব্রোকারেজ দাঁড়াবে ৫০০ টাকা।
সাধারণত যে-সব পণ্যের ডেলিভারি নিতে হয় না, তার ব্রোকারেজ ১-৫ পয়সা পর্যন্ত হয়। আর যেগুলি হাতে নেওয়ার সুযোগ আছে, সেখানে এর ১০ গুণ পর্যন্ত ব্রোকারেজ দিতে হতে পারে। ব্রোকার সদস্যের সঙ্গে কথা বলে সেই দর ঠিক করা যায়।
এক্সচেঞ্জগুলি ব্রোকারেজ স্থির করে দেয় না। তবে এমসিএক্স-এ যে- পণ্যগুলির ডেলিভারি নিতে হয় না, সেগুলির ক্ষেত্রে সর্বাধিক ১% ব্রোকারেজ নেওয়া যায়। আর যেগুলির ডেলিভারি নেওয়া হয়, তাদের সর্বাধিক ব্রোকারেজ স্থির করা রয়েছে ২%। এর পর অবশ্য পণ্য হাতে নিতে অন্যান্য খরচ দিতে হয়। বর্তমানে লগ্নিকারী টানতে কম ব্রোকারেজ নেওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন ব্রোকাররা।
ট্রানজাকশন বা টার্নওভার চার্জ
লেনদেনের মাসুল থেকেই আয় করে এক্সচেঞ্জগুলি। যা ‘টার্নওভার চার্জ’ বা ‘টিও’ নামে পরিচিত। প্রতিটি এক্সচেঞ্জে এই চার্জ আলাদা। সাধারণ ভাবে প্রতি কোটিতে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা চার্জ নেয় এক্সচেঞ্জগুলি।
পরিষেবা কর (সার্ভিস ট্যাক্স)
শিক্ষা সেস সমেত লেনদেনের ক্ষেত্রে বর্তমানে ১২.৩৬% হারে পরিষেবা কর ধার্য করা হয়। পণ্য কেনা-বেচার সময়ে ব্রোকারেজ ও টার্নওভার চার্জের উপর পরিষেবা কর হিসাব করা হয়। ব্রোকার সদস্য মোট যত টাকা পান, তার উপরই পরিষেবা করের অঙ্ক স্থির হয়। অর্থাত্ ব্রোকারেজ এবং টিও মিলিয়ে ১,০০০ টাকা হলে সে ক্ষেত্রে পরিষেবা কর দিতে হবে ১২৩.৬০ টাকা।
বিক্রয়কর (সেল্স ট্যাক্স)
পণ্য কেনা-বেচার সময়ে তা হাতে নিতে চাইলে বিক্রয়করের বড় ভূমিকা রয়েছে। লগ্নিকারী যদি প্রথম থেকেই পণ্য হাতে নিতে আগ্রহী হন, তা হলে তাঁকে বিক্রয়কর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ব্রোকার সদস্যের বিক্রয়কর রেজিস্ট্রেশন থাকা বাধ্যতামূলক। অর্থাত্ লগ্নিকারী যদি মনে করেন, এমসিএক্সে সোনা কিনে তিনি তা বাড়ি নিয়ে যাবেন, সে ক্ষেত্রে সদস্যের গুজরাতে বিক্রয়কর রেজিস্ট্রেশন থাকতে হবে। কারণ এমসিএক্স একমাত্র আমদাবাদ থেকে সোনার ডেলিভারি দেয়। সাধারণত সমস্ত ব্রোকার সদস্যই এই রেজিস্ট্রেশন করে থাকেন। ফলে লগ্নির আগে আপনার সদস্যের সঙ্গে কথা বলে নিন।
ব্রোকার সদস্য রেজিস্ট্রেশন না- করাতে চাইলে লগ্নিকারীকে ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টদের মাধ্যমে পণ্য নিতে হবে। যদি ব্রোকার সদস্যের বিক্রয়কর অগ্রিম দেওয়া থাকে, তবে আলাদা করে এই কর দিতে হয় না।
পণ্য হাতে না-নিলে কিন্তু এই কর দিতে হয় না। কমোডিটি মার্কেটে এমনিতেই লগ্নিকারীর সুযোগ থাকে লাভের টাকা ঘরে তুলে বাজার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার। বা লোকসান পুষিয়ে দেওয়ার। সে ক্ষেত্রে টাকায় হিসাব হয় বলে আলাদা বিক্রয়কর দিতে হয় না।
অনেক রাজ্য বিক্রয় করের সঙ্গেই অন্যান্য কর যুক্ত করে। লগ্নির আগে সে বিষয়ে ভাল করে জেনে নিন।
কমোডিটি ট্রানজাকশন ট্যাক্স (সিটিটি)
শেয়ার বাজারে লেনদেন করার সময় যেমন সিকিউরিটিজ ট্রানজাকশন ট্যাক্স (এসটিটি) দিতে হয়। তেমনই পণ্য লেনদেনের বাজারে কমোডিটি ট্রানজাকশন ট্যাক্স (সিটিটি) চালুর প্রস্তাব রাখা হয়েছিল বাজেটে। কৃষিপণ্য বাদে সমস্ত পণ্যে ০.০১% সিটিটি বসানোর প্রস্তাব রয়েছে। বিক্রেতাকেই এই কর দিতে হবে। ফলে ১ কোটি টাকার পণ্য কিনে পরে তা বিক্রি করলে সিটিটি হবে ১,০০০ টাকা।
এই কর কিন্তু এখনও চালু হয়নি। শুধুমাত্র প্রস্তাব আনা হয়েছে। কেন্দ্রের সম্মতি পেলে তখনই তা চালু হবে।
উপরের আলোচনা থেকে একটা কথা পরিষ্কার, লগ্নির পর ‘নো প্রফিট-নো লস’ অর্থাত্ লাভও হবে না, অথচ ক্ষতিও হবে না এই অবস্থায় আসতে হলেও আপনাকে পণ্যের দাম বাড়ার অপেক্ষা করতে হবে। তার পর পণ্যের দাম বাড়লে তবেই আপনি প্রকৃত লাভের মুখ দেখবেন। এই বাজারে পা রাখার আগে অবশ্যই উপরের বিষয়গুলি যাচাই করে ভেবে-চিন্তে এগোনো উচিত। এমনকী চাইলে আপনি ব্যাঙ্ক, ডাকঘরের প্রকল্পের সঙ্গে তুলনা করেও দেখতে পারেন। যে-টাকাই লগ্নি করুন না-কেন, তা আপনার কষ্টের টাকা। ফলে তার অপব্যবহার হোক, তা কাম্য নয়। |
লেখক এমসিএক্স স্টক এক্সচেঞ্জ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট
(মতামত ব্যক্তিগত) |
|
|
|
|
|