|
|
|
|
|
|
|
মিউচুয়াল ফান্ড |
ফান্ডে আলাদা খাতির
পকেটের জোর কেমন? রেস্ত জোরালো হলে লগ্নিকে সাজিয়ে তোলার
জন্য ফান্ডে বাড়তি খাতির-যত্নের ব্যবস্থা করতেই পারেন। লিখেছেন নীলাঞ্জন দে |
|
পকেটে যথেষ্ট টাকা আছে এবং আপনি সেই থোড়-বড়ি-খাড়া লগ্নি করতে করতে ক্লান্ত। এই দু’টি কারণই পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস (পিএমএস) বেছে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট। ফান্ডে লগ্নির গতানুগতিক রাস্তা থেকে এটা একটু অন্য রকম। এখানে পিএমএসের তুরুপের তাস দু’টি আপনার প্রয়োজন ও পছন্দ অনুযায়ী লগ্নির উপায় বাতলে দেওয়ার চেষ্টা এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে গিয়ে সেই লগ্নির তদারকি। তবে এই পরিষেবা শুধুমাত্র উচ্চবিত্ত লগ্নিকারী বা হাই নেটওয়ার্থ ইনভেস্টরদের জন্যই তৈরি। চলুন আজ মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নির এই পথটাতেই চোখ রাখি।
এ যেন ডিজাইনার পোশাক
দোকানে গিয়ে নানা রকম পোশাকের মধ্যে একটি বেছে নিলেন। কিন্তু ওই পোশাক একমাত্র আপনার সম্ভারেই থাকল, এই দাবি করতে পারবেন কি? মোটেই না। বরং অন্য কারও কাছে থাকবে না এমন কোনও পোশাক আলমারিতে রাখতে হলে দৌড়তে হবে ডিজাইনারের কাছে। তিনি আপনার সঙ্গে কথা বলবেন। আপনার রুচি, পছন্দ, স্বাদ বোঝার চেষ্টা করবেন। মাপ নেবেন। এবং শেষে আপনার হাতে তুলে দেবেন এমন একটি জিনিস, যা মাত্র একখানাই তৈরি করা হয়েছে। আর এই অর্থে পিএমএস হল আপনার ডিজাইনার পোশাক।
এখানে আপনার তহবিলের দায়িত্ব নিতে থাকবেন একজন পিএমএস ম্যানেজার। যিনি কথা বলে আপনার পছন্দ-অপছন্দ, প্রয়োজন, বাধ্যবাধকতা ও ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা জেনে ও বুঝে বেছে দেবেন ফান্ড। তৈরি করে দেবেন নির্দিষ্ট লগ্নি-কৌশল। এবং সময়ে সময়ে সেটির তত্ত্বাবধান করবেন।
আর এই রকম একটা ডিজাইনার পোশাকের দাম যে আকাশছোঁয়া হবে, সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহ আছে কি! এ বার দেখব এই পরিষেবার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী।
১০ লাখও যথেষ্ট নয়
ফান্ডের বাজারে যাঁরা সীমিত অর্থ নিয়ে লগ্নি করেন, পিএমএস তাঁদের জন্য নয়। লগ্নিকারীর প্রয়োজন ও চাহিদা মতো তহবিল বণ্টনের কৌশল ছকতে ১০ লাখ টাকাও এখানে বেশ কম।
লগ্নি কৌশল
প্রত্যেকের অ্যাকাউন্ট সামলান নির্দিষ্ট ম্যানেজার। লগ্নিকারীর প্রয়োজন ও চাহিদা বুঝে তহবিল বণ্টনের কৌশল নেন তিনি। রাখেন মজবুত ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। আর রীতিমতো গবেষণা করে নির্ধারণ করা এই লগ্নি-কৌশল বিশদে জানাতেই হয় বিনিয়োগকারীকে। |
|
পরিষেবার দুই পথ
লগ্নিকারী নিজেই বিনিয়োগ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। ম্যানেজারের কাজ সে ক্ষেত্রে সঠিক পরামর্শ, তথ্য ও সুবিধা-অসুবিধার খতিয়ান পেশ করা। আবার লগ্নিকারী চাইলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ওই ম্যানেজাররাই।
ব্যক্তিগত খাতির-যত্ন
লগ্নির বিশেষ তদারকি করা হয় পিএমএসে। ম্যানেজার লগ্নিকারীকে নিয়মিত তহবিল সম্পর্কে ওয়াকিবহাল রাখেন। তত্পর থাকেন লগ্নি সংক্রান্ত সাম্প্রতিক খুঁটিনাটি তথ্য তাঁকে জানাতে।
রিটার্ন কি নিশ্চিত?
এত উঁচু দামের এই পরিষেবার কথা শুনে এই প্রশ্নটা মাথায় আসতেই পারে। এমনকী এটাও ভাবতে পারেন যে, সাধারণ ভাবে ফান্ডে লগ্নি করার থেকে পিএমএসে করলে হয়তো রিটার্ন বেশি মেলে। কিন্তু এই দু’টোর কোনওটারই নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না।
ঝুঁকি নিতে তৈরি থাকুন
যেহেতু অনেক টাকার ব্যাপার, তাই ঝুঁকিও বেশি। শেয়ার বাজারের ওঠা-নামা, মূল্যবৃদ্ধি, ডলার-টাকা বিনিময় হার, সুদ ইত্যাদি এ ক্ষেত্রে খুব বড় শর্ত। কোনও সময়ে লগ্নির উপর আঘাত এলে লোকসানের অঙ্কটাও বড় হতে পারে। কাজেই মানসিক ভাবে বড় ঝুঁকি নেওয়ার জন্য তৈরি থাকলে পিএমএস মারফত ফান্ডে লগ্নি করুন।
|
পিএমএস প্রকল্পে ফান্ড কিনবেন কেন? |
• আপনি মিউচুয়াল ফান্ডে বিপুল অর্থ লগ্নি করছেন। তাই ওই তহবিলে বিশেষ নজর রাখা হয় এই পরিষেবা মারফত।
• আপনার পছন্দ বা প্রয়োজনকে এখানে সকলের থেকে আলাদা করে বিচার করা হয়।
• পিএমএস ম্যানেজারদের ধরাবাঁধা ছকের বাইরে বিশেষ ভাবে তহবিল বণ্টনের স্বাধীনতা আছে।
• চাইলে আপনার চাহিদা মতো ফান্ড পছন্দ করা ও কেনার সিদ্ধান্ত নেবেন পিএমএস ম্যানেজার।
• ইচ্ছে হলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন আপনি নিজেই। সে ক্ষেত্রে ম্যানেজার শুধুমাত্র ফান্ডের সুপারিশ করে সঠিক দিশা দেখাবেন।
• বিশেষ ধরনের কিছু পরিষেবা পাবেন, যা সাধারণ ভাবে মিউচুয়াল ফান্ড কিনলে পাওয়া যায় না।
• ফান্ডের লেনদেন, খরচ, মূলধনী লাভ (ক্যাপিটাল গেইন্স), মুনাফা ও লোকসান, মূল্যায়ন-সহ বিভিন্ন তথ্যের খুঁটিনাটি খুব সহজে জানানোর ব্যবস্থা থাকে। |
মাথায় রাখুন |
খরচের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন |
বাজারে প্রতিযোগিতা আছে |
সাধারণত পারফর্ম্যান্সের ভিত্তিতেই বিপুল ফি ধার্য করেন ম্যানেজাররা। ফান্ডের পারফর্ম্যান্স যত ভাল হয়, ফি তত বাড়তে থাকে। লেনদেনের খরচ এমনিতেই এখানে অনেক বেশি। তার উপর ম্যানেজাররা যদি দ্রুত লেনদেন করে রিটার্ন বাড়ানোর চেষ্টা করেন, তবে তার ভিত্তিতেও ফি আরও অনেকটা বেড়ে যায়। |
বাজারে বিভিন্ন সংস্থার আনা নানা পিএমএসের মধ্যেও লগ্নিকারীদের নজর টানা নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা চলে। যদিও সেগুলির সংখ্যা কম বলে লগ্নিকারীকে মাত্র কয়েকটির মধ্যে থেকেই দেখেশুনে বেছে নিতে হয়। তবে সাধারণ ফান্ডের থেকে পিএমএসে বেশি রিটার্ন মিলবে, এমন আশ্বাসে না-ভোলাই ভাল। |
|
|
লেখক উইশলিস্ট ক্যাপিটাল অ্যাডভাইজর্সের ডিরেক্টর
(মতামত ব্যক্তিগত) |
|
|
|
|
|