কোম্পানি আমানত
পা ফেলুন সাবধানে
ক্যুইটিছাড়া আর যে-সব পথে একটি কোম্পানি ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করতে পারে, তার মধ্যে জন আমানত প্রকল্প অন্যতম। এক সময়ে বেশ জনপ্রিয় ছিল কোম্পানি আমানত প্রকল্প। বছর কয়েক আগে বেশ কিছু কোম্পানি আমানতের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হওয়ায় আগের জনপ্রিয়তা তলানিতে গিয়ে ঠেকে। জনসাধারণকে সুরক্ষা দিতে কোম্পানি আমানত সংক্রান্ত আইন অনেক কঠোর করা হয়। মানুষের আস্থা কমায় এবং আইন কঠোর হওয়ায় বেশির ভাগ কোম্পানি এই পথে অর্থ সংগ্রহ থেকে বিরত হয়। ভাল কিছু কোম্পানি অবশ্য এখনও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে।

জনপ্রিয়তার কারণ
এদের দেওয়া সুদের হার সাধারণত ব্যাঙ্ক, ডাকঘরের সুদের তুলনায় কিছুটা বেশি হয়। এই কারণে এখনও বহু মানুষ কোম্পানি আমানত প্রকল্পে টাকা রাখেন। এই জমা কিন্তু জামিনযুক্ত নয়, অর্থাত্‌ খাতায়-কলমে সুরক্ষিত নয়। এই কারণে টাকা রাখার ব্যাপারে কোম্পানি বাছতে হবে অতি সাবধানে। বিশেষ করে সারদা কাণ্ডের পর। এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে নেওয়ার চেষ্টা করব পুরো ব্যাপারটি।

রাশ আছে কি?
কোম্পানি আমানত প্রকল্প নিয়ন্ত্রিত হয় কোম্পানি আইনের ৫৮-এ ধারার অধীনে রচিত কোম্পানিজ (অ্যাক্সেপ্টেন্স অফ ডিপোজিটস) রুলস দ্বারা। যে-সব সংস্থা ব্যাঙ্ক নয় অথচ অর্থকড়ি সংক্রান্ত ব্যবসায় নিযুক্ত (এন বি এফ সি) তা কোম্পানি আইন ছাড়াও নিয়ন্ত্রিত হয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিয়মাবলি দ্বারা।

আমানত সংগ্রহের শর্ত
যে-সব শর্তে একটি সংস্থা জনসাধারণের থেকে আমানত সংগ্রহ করতে পারে, তা মোটামুটি এ রকম
১) আমানত সংগ্রহ করা যেতে পারে কমপক্ষে ৬ মাস এবং সর্বাধিক ৩৬ মাসের মেয়াদে।
২) আমানতের উপর সর্বাধিক সুদ মিলতে পারে ১২.৫%।
৩) সংগৃহীত আমানতের উপর এক বছরের জন্য ১%, ২ বছর মেয়াদি আমানতের জন্য ১.৫% ও ৩ বছর মেয়াদি আমানতের জন্য ২ শতাংশের বেশি ব্রোকারেজ দেওয়া যাবে না।
৪) যে সব সংস্থার নিট তহবিল (নেট ওন্‌ড ফান্ড) ১ কোটি টাকার কম, তারা জনসাধারণের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করতে পারবে না।
৫) কোনও সংস্থা সংগৃহীত আমানত অথবা তার উপর প্রদেয় সুদ সময় মতো দিতে না-পারলে সেই কোম্পানি আর আমানত সংগ্রহ করতে পারবে না।
৬) জনসাধারণের থেকে আমানত সংগ্রহ করতে হলে সংস্থা সম্পর্কে নির্ধারিত তথ্য দিয়ে ইংরেজি ও স্থানীয় ভাষায় খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিতে হবে। এতে থাকবে সংস্থার ব্যবসা সম্পর্কে তথ্য, ডিরেক্টরদের নাম-ঠিকানা, তিন বছরের লাভ-ক্ষতির তথ্য ও ডিভিডেন্ডের হার, আগের দু’বছরের আর্থিক বিবরণ ইত্যাদি। বিজ্ঞাপনে জানাতে হবে সংগৃহীত আমানত কতটা সুরক্ষিত। বলতে হবে আমানত ফেরতের ব্যাপারে সংস্থা সব শর্ত মেনে চলেছে ও অতীতে সময় মতো সুদ-সহ আমানত ফেরত দিয়েছে।
৭) আমানতের আবেদনপত্রের সঙ্গে সংস্থা সংক্রান্ত নির্ধারিত সব তথ্য সরবরাহ করতে হবে আবেদনকারীকে।
৮) নির্ধারিত সমস্ত তথ্য সহকারে সংস্থাকে আমানতের রসিদ কিন্তু দিতেই হবে।
৯) কোনও সংস্থা মেয়াদ শেষে আমানতের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে ১৮% হারে শাস্তিমূলক সুদ দিতে হবে। ক্ষুদ্র আমানতকারীদের ক্ষেত্রে এই সুদ ২০%। আছে আরও শাস্তির ব্যবস্থা।

টাকা রাখবেন কোথায়

আইন এত কড়া হওয়া সত্ত্বেও বেশ কিছু সংস্থা এখনও বাজার থেকে আমানত সংগ্রহ করছে। এদের সবাই সমান নির্ভরযোগ্য নয়। কোন কোন এন বি এফ সি-কে আমানত সংগ্রহের অনুমতি দেওয়া হয়েছে তার তালিকা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ওয়েবসাইটে আছে। কোনও কোনও উন্নতমানের সংস্থা নিজের জন্য আমানত প্রকল্পকে কোনও মূল্যায়ন সংস্থাকে দিয়ে রেটিং করিয়ে নেয়। রেটিং দেখে ইঙ্গিত পাওয়া যেতে পারে একটি আমানত প্রকল্প কতটা নির্ভরযোগ্য। রেটিংপ্রাপ্ত কিছু সংস্থার তালিকা সঙ্গে দেওয়া হল:
নাম প্রাপ্ত রেটিং
এইচ ডি এফ সি
মহীন্দ্রা ফিনান্স
শ্রীরাম ট্রান্সপোর্ট
পি এন বি হাউসিং
সুন্দরম হোম ফিনান্স
অ্যাপোলো হসপিটাল
সিডবি
অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক
এল আই সি হাউসিং
হাডকো
ফেনার ইন্ডিয়া
নেটওয়ার্ক ১৮ মিডিয়া
এএএ
এএএ
এএ+
এএ+
এএ+
এএ+
এএএ
এএএ
এএএ
এএ
এএ-
এ-

কোম্পানি বাছাই

কোম্পানি বাছতে হবে অতি সাবধানে। কয়েকটি ভাল হলেও অনেক সাধারণ মানের কোম্পানি আমানত সংগ্রহ করছে বাজার থেকে। উন্নত মানের কোম্পানিতে টাকা রাখায় ঝুঁকি কম। কোম্পানি বাছতে যা যা দেখবেন:
১) লক্ষ্য রাখুন আগের তিন বছরে কোম্পানির আয়, লাভ এবং ডিভিডেন্ডের উপর। দেখুন, সব দিক থেকে সংস্থার শ্রীবৃদ্ধি হচ্ছে কি না।
২) সংস্থা শেয়ার বাজারে নথিবদ্ধ হলে স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইট থেকে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির অনেক তথ্য পাওয়া যেতে পারে।
৩) এন বি এফ সি-র ক্ষেত্রে রেটিং নেই এমন সংস্থায় টাকা রাখা ঠিক হবে না। ‘এএএ’ রোটিং হলে টাকা রাখা অনেকটা নিরাপদ।
৪) একই সংস্থায় মোটা আমানত রাখা ঠিক নয়।
৫) বাজারের তুলনায় অনেকটা বেশি সুদের প্রতিশ্রুতি দিলে, সে-সব কোম্পানিকে সন্দেহের চোখে দেখুন।
৬) ভুঁইফোঁড় সংস্থায় টাকা না-রাখাই বাঞ্ছনীয়।
৭) সময় মতো আমানত ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে সংস্থার অতীত সুনাম যাচাই করে নিন। দেখে নিন গ্রাহক পরিষেবার দিকটাও।
৮) সামান্য বেশি সুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ প্রকল্পে না-ঝোঁকাই ভাল। দেখতে হবে ১-২% অতিরিক্ত সুদ পেতে গিয়ে আসল যেন মার না-যায়।
৯) যে-সব সংস্থা গৃহঋণের ব্যবসায় যুক্ত, তাদের মধ্যে কয়েকটির আমানত প্রকল্প বেশ জনপ্রিয়।
১০) কোম্পানি আমানতের উপর প্রাপ্ত সুদ করযুক্ত। গোড়াতেই দেখে নিন করের পর প্রকৃত আয় কী হচ্ছে।

লেখক ম্যাকলিওড রাসেল ইন্ডিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কোম্পানি সেক্রেটারি
(মতামত ব্যক্তিগত)


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.