পানীয় জল নিয়ে প্রায় দিনই সমস্যায় পড়েন বোলপুর পুর এলাকার বাসিন্দারা। গ্রীষ্মে তা নিয়ে দুর্ভোগ চরমে পৌঁছয়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, পানীয় জলের ঠিক মতো পরিষেবা না দিয়ে এলাকার ড্রেন তৈরিতে জল সরবরাহ করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে পুরসভার পানীয় জল সরবরাহকারী গাড়ি। ফলে ক্ষোভ বাড়ছে এলাকায়। ঘটনাটি বোলপুরের এক নম্বার ওয়ার্ডের মকরমপুর এলাকার। গত কয়েক ধরেই তৃণমূল পরিচালিত বোলপুর পুরসভার পানীয় জল সরবরাহকারী গাড়িগুলিকে এলাকার ড্রেন তৈরির কাজে লাগানো হচ্ছে। তৃণমূল পুরপ্রধান সুশান্ত ভকত অবশ্য বলছেন, “অভিযোগ ঠিক নয়। আমরা শুধুমাত্র জনগণের উৎসব, অনুষ্ঠানে ওই পানীয় জল সরবরাহকারী গাড়িগুলি নির্ধারিত টাকার বিনিময় দিয়ে থাকি। নালা, নর্দমা তৈরি তো জনস্বার্থেই। সেখানে এ ভাবে জল দিতে বাধা কোথায়! তা ছাড়া ওখানে জলের অন্য কোনও উৎসও নেই।”
পুর এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা দীর্ঘ দিনের। সেই সমস্যা মেটাতে ২০০০ সালে বোলপুরে শুরু হয় ইন্দো-জার্মান জল প্রকল্প। প্রায় ৬৬ হাজার বাসিন্দার জন্য প্রায় ৫ হাজার সংযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু জনসংখ্যা যে হারে বাড়ছে (বর্তমানে পুর এলাকার জনসংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার) তাতে সুনির্দিষ্ট সংখ্যক সংযোগের বাইরেও পানীয় জলের যোগান দিতে গিয়ে নাজেহাল হচ্ছে পুর কর্তৃপক্ষ। |
নর্দমার কাজে পানীয় জলের এই গাড়ি ব্যবহার করে বিতর্কে বোলপুর পুরসভা। —নিজস্ব চিত্র। |
এক সময় বোলপুর লাগোয়া অজয় নদে এবং শান্তিনিকেতন সংলগ্ন কোপাই নদীতে পানীয় জলের বিকল্প উৎস খোঁজার ভাবনা চিন্তা করেছিল পুরসভা ও পঞ্চায়েত প্রশাসন। সাম্প্রতিক অতীতে এ নিয়ে এলাকার জনপ্রতিনিধি, পঞ্চায়েত সমিতি, পুরসভা ও স্থানীয় প্রশাসনকে নিয়ে একাধিকবার বৈঠকও হয়েছে। এই রকম এক পরিস্থিতিতে পুরসভার পানীয় জল সরবরাহকারী গাড়ির জলের ড্রেন তৈরির কাজে ব্যবহার, বাসিন্দাদের আরও সংশয় বাড়িয়েছে।
অভিযোগ, এমনিতে দৈনিক যে হারে পানীয় জল সরবরাহ করত পুরসভা তার হার এখন অনেকটাই কমে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ‘টাইম কলে’ দিনে প্রায় তিন ঘণ্টা করে তিন বার জল আসত। কিন্তু বছর খানেক থেকে অনিয়মিত হারে কেবল সকালে ও বিকালে জল সরবরাহ করা হচ্ছে। কোনও কোনও দিন বোলপুর পুরসভার একাধিক ওয়ার্ডে জল সরবরাহ বন্ধ থাকছে। এমন পরিস্থিতিতে শহরের নালা, নর্দমা তৈরির জন্য পুরসভা যে ভাবে পানীয় জল যোগান দিচ্ছে তা স্বাভাবিক প্রশ্নের মুখে ফেলেছে তৃণমূল পুরবোর্ডকে। এ দিকে বোলপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান কংগ্রেসের তপন সাহার দাবি, “আমাদের সময় পানীয় জল সরবরাহ গাড়িকে এমন কাজে ব্যবহার করা হয়নি। তবে পুরো বাসিন্দাদের স্বার্থে বিবাহ, উৎসব অনুষ্ঠানে টাকার বিনিময়ে পানীয় জল সরবরাহ করা হত। ইদানিং তো পুর এলাকায় যথেষ্ট জল কষ্ট রয়েছে। তা সত্ত্বেও এমন কী করে হয়, বুঝতে পারছি না।”
পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি মহম্মদ জাহাঙ্গির হোসেন বলেন, “আমরা পুরপ্রধানের কাছে এ নিয়ে জানতে চাইব। পানীয় জল ছাড়া অন্য কাজে কেন ওই গাড়ি ব্যবহার করা হবে। আমরা রাস্তা, নালা, নর্দমা তৈরির বিরোধিতা করছি না। কিন্তু তার জন্য পুরসভা অন্য ব্যবস্থা করুক।” এই ভাবে ওই গাড়ি ব্যবহার করা হলে অনেকেই নানা সংক্রমণেরও আশঙ্কা করছেন। |