সালিশি বসিয়ে গ্রাম থেকে বাস তোলা হল শিক্ষকের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ফালাকাটা |
সালিশি সভা ডেকে এক শিক্ষককে গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। ৫ বছরের ছেলে এবং স্ত্রীকে নিয়ে একটি হাইস্কুলের পার্শ্বশিক্ষক এখন পাশের গ্রামে নিজের বাড়িতে ফিরে গিয়েছেন। তবে সেখান থেকেই তিনি যে গ্রাম থেকে তাঁর বাস তুলে দেওয়া হয়েছে, সেখানকার স্কুলে নিয়মিতই যাতায়াত করছেন।
ডুয়ার্সের ধূপগুড়ির আংরাভাসা সজনাপাড়া গ্রামের বংশীবদন স্কুলের ওই পার্শ্বশিক্ষকের নাম সত্যেন্দ্রনাথ রায়। তৃণমূলের স্থানীয় অঞ্চল সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, মাস ছ’য়েক আগেই সত্যেন্দ্রনাথবাবুর সঙ্গে দলের এখন আর কোনও সম্পর্ক নেই। সত্যেন্দ্রনাথবাবুর বিরুদ্ধে স্থানীয় মানুষের একাংশের অভিযোগ, গ্রামের এক তরুণীর শ্বশুরবাড়িতে নিয়মিত ফোন করে তাঁর সম্পর্কে কটূ মন্তব্য করতেন। সে কথা ওই তরুণী তাঁর বাপের বাড়িতে জানান। সে কথা গ্রামে জানাজানি হয়ে যাওয়ার পরে ১৩ জুন স্কুলেই গ্রামের সালিশি সভা ডাকা হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই সভায় ডান-বাম সব দলের নেতা-কর্মী মিলিয়ে ৭০ জন উপস্থিত ছিলেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, সত্যেন্দ্রনাথবাবুকে ওই গ্রামের বাস তুলে চলে যেতে হবে। সেই সঙ্গে সালিশি সভার বিষয়টি নিয়ে কোথাও কোনও রকম অভিযোগ যেন না করেন, সে বিষয়েও তাঁর কাছ থেকে একটি মুচলেকা লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। ওই শিক্ষককে স্কুলে না রাখার জন্য প্রধানশিক্ষককেও আবেদন করা হবে বলেও সালিশি সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
সালিশি সভার সিদ্ধান্তে বিব্রত ওই শিক্ষক বলেন, “যাঁর সম্পর্কে অপবাদ দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, তিনি আমার আত্মীয়া। তাঁর দাম্পত্য জীবন ভাঙতে তার স্বামী সম্পর্কে আমি মন্তব্য করব কেন? যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা ঠিক নয়। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। সালিশি সভার সিদ্ধান্ত না মেনে উপায় নেই। ওই গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছি।”
ধূপগুড়ির বিডিও সৌমেন্দ্র দূতরাজ জানিয়েছেন, এই ঘটনার কথা প্রশাসন জানে না। তাঁর কথায়, “তবে সালিশি সভা ডেকে কাউকে গ্রাম থেকে বার করে দেওয়া গুরুতর অপরাধ। কেন এমন কাণ্ড হল খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
স্থানীয় তৃণমূল নেতা নরেন্দ্রনাথবাবু নিজেই ওই সালিশি সভায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, “গ্রামের এক মেয়ের সংসার ভাঙতে তাঁর স্বামীকে ফোন করে নানা মন্তব্য করেন সত্যেন্দ্রবাবু। এ ভাবে তিনি একজনের সংসার ভাঙতে পারেন না। বিষয়টি নিয়ে আমরা সালিশিতে বসি। সেখানে আরও একজন পঞ্চায়েত সদস্য সহ গ্রামের সর্ব স্তরের বাসিন্দারা মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ওই শিক্ষককে গ্রামে থাকতে দেওয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।” এলাকার সিপিএম কর্মী তথা ডিওয়াই এফ নেতা মনোজ রায় বলেন, “সত্যেন্দ্রবাবুর স্কুলের প্রধান শিক্ষককেও তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা আর্জি জানাব।”
স্কুলেই বসেছিল সে দিনের সালিশি সভা। তবে স্কুল তখন ছুটি ছিল। প্রধানশিক্ষক সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য দাবি করেছেন, তিনি এই বিষয়ে কিছুই জানেন না।
তৃণমূলের শিক্ষা সেলের ধূপগুড়ি ব্লকের সভাপতি সুবীর চৌধুরী বলেন, “পারিবারিক কোনও বিবাদ নিয়ে ঘটনাটি ঘটেছে বলে শুনেছি। বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি।” ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বিজেপি-র মনোহর মণ্ডল বলেন, “বিষয়টি আমি জানি না। খোঁজ নিচ্ছি।” |