জোট করে কাজিয়া দুই ঝাড়খণ্ডী দলের
মঝোতা সত্ত্বেও জঙ্গলমহলের একাধিক আসনে একে অপরের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছে ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন) এবং ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টি। দু’টি দলই একে অপরের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে। অথচ পঞ্চায়েত ভোটে আসন রফা করার জন্য কিছুদিন আগে কংগ্রেসের উদ্যোগে আঞ্চলিক স্তরে গঠিত একটি বৃহত্তর মঞ্চে ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন) এবং ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টি রয়েছে বলে দু’টি দলের নেতৃত্বেরা জানিয়েছিলেন। রাজনৈতিক মহলের অবশ্য বক্তব্য, রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণেই ওই দু’টি ঝাড়খণ্ডী দল জোটের শর্ত ভেঙেছে। তবে জোট ভাঙার দায় ঝাড়খণ্ড পার্টির (নরেন) উপর চাপিয়েছে ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টি।
জঙ্গলমহলের ঝাড়খণ্ডী ও আঞ্চলিক দলগুলিকে নিয়ে কংগ্রেসের উদ্যোগে কিছুদিন আগে ‘জঙ্গলমহল গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা মঞ্চ’ নামে একটি বৃহত্তর মঞ্চ গঠন করা হয়েছিল। শাসক দল তৃণমূলকে চাপে রাখতে পঞ্চায়েত ভোটে আসন সমঝোতা করার লক্ষ্যে এই মঞ্চ গঠন করা হয়েছিল বলে ঝাড়গ্রামের একটি অতিথিশালায় সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছিলেন জেলা কংগ্রেসের নেতারা। ওই সাংবাদিক বৈঠকে ঝাড়খণ্ড পার্টির (নরেন) সভানেত্রী চুনিবালা হাঁসদা এবং ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অসিত খাটুয়াও হাজির ছিলেন। কিন্তু মনোনয়ন প্রত্যাহারের পর চুনিবালা ও অসিতবাবুরা এখন পরস্পরের বিরুদ্ধে তোপ দাগছেন। অসিতবাবুর অভিযোগ, “সমঝোতা মেনে বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির শিমুলপাল অঞ্চলের তিনটি আসনের মধ্যে দু’টিতে আমরা প্রার্থী দিই। একটি আসন চুনিবালার দলকে ছাড়া হয়। কিন্তু ওই আসনে চুনিবালা প্রার্থী না-দিয়ে আমাদের আসন দু’টিতে প্রার্থী দিয়েছেন। বেলপাহাড়ি ব্লকের ৬৪ নম্বর জেলা পরিষদ আসনটি আমাদের ছাড়া হয়েছিল। কিন্তু ওই আসনটিতেও প্রার্থী দেন চুনিবালা। রফাসূত্র মেনে আমরা কিন্তু ৬৫ নম্বর আসনে চুনিবালার দলের বিপক্ষে প্রার্থী দিইনি। বেলপাহাড়ি ব্লকের শিমুলপাল গ্রাম পঞ্চায়েতের ১০টি আসনে প্রার্থী দিয়েছেন চুনিবালা। আমরা ৭টি আসনে প্রার্থী দিয়েছি।” জোট হয়নি আরও কিছু আসনে। বিনপুর ১ (লালগড়) পঞ্চায়েত সমিতির রামগড় অঞ্চলের একটি আসনে গতবার অনুশীলন পার্টির প্রার্থী জিতেছিলেন। এ বার ওই আসনে প্রার্থী দেয় ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)। নিজেদের জেতা আসন ছাড়তে রাজি হয়নি অনুশীলন পার্টি। তারাও ওই আসনে প্রার্থী দিয়েছে। রামগড় গ্রাম পঞ্চায়েতের দু’টি আসনেও ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টি এবং ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন) প্রার্থী দিয়েছে।
২০০০ সালে চুনিবালার নেতৃত্বাধীন ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন) থেকে বেরিয়ে গিয়ে আদিত্য কিস্কু-অসিত খাটুয়ারা ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টি গঠন করেছিলেন। দু’টি ঝাড়খণ্ডী দলের মধ্যে আকচা-আকচি দীর্ঘ দিনের। চুনিবালার দলের মূল দাবি, জঙ্গলমহলকে ঝাড়খণ্ড রাজ্যে অন্তর্ভুক্তিকরণ। অন্য দিকে, ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টির মূল দাবি, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়াএই তিন জেলার জঙ্গলমহলের স্বশাসন। দীর্ঘ দু’দশক ধরে ঝাড়খণ্ড পার্টির (নরেন) সঙ্গে কংগ্রেসের নির্বাচনী জোট রয়েছে। ফলে কংগ্রেসের বৃহত্তর মঞ্চে আদিত্য কিস্কু-অসিত খাটুয়াদের সঙ্গে চুনিবালা থাকতে রাজি হন। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, জোটে গেলেও চুনিবালা অনুশীলন পার্টির সঙ্গে জোট ছিন্ন করার সুযোগ খুঁজছিলেন।
আঞ্চলিক দল হওয়ার কারণে চুনিবালার দলের নিজস্ব কোনও প্রতীক নেই। অনুশীলন পার্টিরও নিজস্ব প্রতীক নেই। তবে বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনগুলিতে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-এর প্রার্থীরা ‘কুঠার’ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এবার অনুশীলন পার্টিও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কিছু আসনে ‘কুঠার’ প্রতীক পেয়েছে। ফলে, চুনিবালার সব প্রার্থীরা এবার ‘কুঠার’ প্রতীক পাননি। শিমুলপাল পঞ্চায়েতে তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ তিন নির্দল প্রার্থীকে শেষ মুহূর্তে নিজেদের প্রার্থী বলে অনুশীলন পার্টি ঘোষণা করায় তাঁরা ‘কুঠার’ প্রতীক পেয়ে যান। ওই ৩টি আসনে চুনিবালার প্রার্থীদের জন্য ‘লাঙল’ বরাদ্দ করেছে প্রশাসন। এতে বেজায় চটে যান চুনিবালা। তাঁর অভিযোগ, “ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টি প্রার্থী খুঁজে না পেয়ে যাঁকে তাঁকে নিজেদের প্রার্থী বলে চালাচ্ছে। যে সব আসন নিয়ে ওরা অভিযোগ করছে, ওই আসনগুলিতে প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে অনুশীলন পার্টির সঙ্গে কোনও সমঝোতা-আলোচনা হয়নি। যা করেছি বেশ করেছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.