সুষ্ঠু ও অবাধ পঞ্চায়েত ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। প্রার্থী ও রাজনৈতিক কর্মীদের নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েও কার্যক্ষেত্রে তা দিতে না পারার দায়িত্ব যে কমিশনকেই নিতে হবে, তাদের মুখোমুখি হয়ে সে কথাই জানিয়ে এলেন বাম নেতৃত্ব। সুষ্ঠু ও অবাধ ভোটের লক্ষ্যে পঞ্চায়েতের মনোনয়ন পর্ব নতুন করে করার দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা। কমিশন অবশ্য নতুন করে মনোনয়নের দাবি খারিজ করেছে। বস্তুত, কমিশনের দফতরের অদূরে মঙ্গলবার অবস্থান করে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডের উপরে চাপ বাড়ানোরই চেষ্টা করেছে বামেরা। |
নীল-সাদা ছাতার তলায় বিমান বসু।—নিজস্ব চিত্র। |
অবাধ ও সুষ্ঠু পঞ্চায়েত ভোট, নতুন করে মনোনয়নের প্রক্রিয়া এবং তৃণমূল স্তরে গণতন্ত্র রক্ষার দাবি নিয়ে এ দিন বিমান বসুর নেতৃত্বে কমিশনে যান বামফ্রন্টের নেতারা। আগে পুলিশের কথা মেনে তাঁদের অবস্থান কর্মসূচি হয়েছে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড এবং সরোজিনী নায়ডু সরণির সংযোগস্থলে। অবস্থান-মঞ্চ থেকেই বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমানবাবু বলেন, কমিশন গত ১৭ মে সর্বদল বৈঠক ডেকে সুষ্ঠু পঞ্চায়েত নির্বাচন ও সংশ্লিষ্ট সকলের নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু মনোনয়ন-পর্ব চলাকালীনই গত রবিবার পর্যন্ত নানা জেলায় মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। অপহরণের ঘটনা ঘটেছে, হামলা ও হুমকির জেরে মনোনয়ন তুলে নিয়েছেন বহু প্রার্থী। আদালতের নির্দেশ তাদের পক্ষে থাকা সত্ত্বেও এ ক্ষেত্রে কমিশন কাঙ্খিত ভূমিকা পালন করতে পারেনি বলে বিমানবাবুর অভিযোগ। তাঁর কথায়, “রাজ্য সরকার যে নির্বাচন চায় না, সেটা প্রথম থেকেই বোঝা যাচ্ছে। এখনও জানি না, নির্বাচন আদৌ হবে কি না! আশ্বাস দিয়েও পালন করতে না-পারার দায় ও দায়িত্ব কমিশনকে নিতে হবে। তারা তাদের এক্তিয়ার সম্পর্কে সচেতন। কিন্তু ভূমিকা পালনে ব্যর্থ।”
শাসক দলের সন্ত্রাসের জন্য বহু জায়গাতেই বিরোধী প্রার্থীদের সরে দাঁড়াতে হয়েছে। শাসানি উপেক্ষা করে যাঁরা লড়াই চালাচ্ছেন, তাঁদের অনেকেই এলাকায় থেকে প্রচার চালাতে পারছেন না। এই যুক্তি সামনে রেখেই মীরাদেবীর কাছে গিয়ে নতুন করে মনোনয়ন প্রক্রিয়ার দাবি জানিয়েছেন বিমানবাবুরা। কমিশন অবশ্য তাঁদের বিশেষ উৎসাহিত করেনি। বিমানবাবু বলেন, “নির্বাচন কমিশনারের কথায় অসহায়তাই যেন প্রকাশ পেল! তিনি বলেছেন, সাধ্যমতো তাঁরা চেষ্টা করছেন। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন তো দেখা যাচ্ছে না!” বিমানবাবুর সঙ্গে ছিলেন সিপিএমের রবীন দেব, সিপিআইয়ের ধীরেন দাশগুপ্ত, আরএসপি-র মনোজ ভট্টাচার্য, ফরওয়ার্ড ব্লকের হাফিজ আলম সৈরানি প্রমুখ। নিরাপত্তার বন্দোবস্ত সুনিশ্চিত করতে না-পারায় কমিশনের এ দিন সমালোচনা করেছে বিজেপি-ও। দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেছেন, “নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবস্থা ঠিকমতো হওয়ার আগেই কমিশন এই প্রক্রিয়ার মধ্যে গেল কেন?” মালদহের হবিবপুরে কয়েক দিন আগে খুন হন বিজেপি-র এক স্থানীয় নেতা। সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করেই এ রাজ্যে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সহ-পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহের বক্তব্য, “যে কোনও গণতন্ত্রেরই মূল কথা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন। তৃণমূলের সরকার সেটা লঙ্ঘন করছে।”
প্রসঙ্গত, আগামী ২১ জুন (শুক্রবার) বামফ্রন্ট সরকারের প্রতিষ্ঠা দিবস পালনের অনুষ্ঠানের জন্য ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হল ব্যবহারের অনুমতি পাওয়া যায়নি। কমিশনের অদূরে অবস্থান কর্মসূচি থেকেই বিমানবাবু এ দিন ঘোষণা করেছেন, কলেজ স্ট্রিট চত্বরেই তাঁরা সভা করবেন রাস্তায়। বামফ্রন্টের বৈঠকে আজ, বুধবার ওই অনুষ্ঠানের কর্মসূচি চূড়ান্ত হবে। |