বর্তমান পরিস্থিতিতে ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব কি না, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার কলকাতা হাইকোর্টের উপরেই ছেড়ে দিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
ভোটের আর ১৩ দিন বাকি। হাইকোর্ট যে হিসেব ঠিক করে দিয়েছিল, সেই অনুযায়ী সশস্ত্র বাহিনী রাজ্য এখনও দিতে পারেনি। দিতে পারবে কি না, তা-ও জানায়ানি কমিশনকে। কেন্দ্র কত বাহিনী দেবে, এখনও ধোঁয়াশা। এই অবস্থায় ২ জুলাই থেকে অবাধ নির্বাচন কী ভাবে করা সম্ভব, মঙ্গলবার নতুন মামলা দায়ের করে হাইকোর্টকেই তার উপায় বার করার আর্জি জানিয়েছে কমিশন।
নতুন মামলাটি শুনানির জন্য গ্রহণ করেছে প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ। আজ, বুধবার সকালে ওই মামলার শুনানি হবে। সেই শুনানির সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিকে হাজির থাকার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। রাজ্যের চাহিদা অনুযায়ী বাহিনী কেন দেওয়া হচ্ছে না, কেন্দ্রের প্রতিনিধির কাছে তা জানতে চাওয়া হতে পারে।
কমিশনের পক্ষে নতুন আবেদনটি পেশ করেন আইনজীবী লক্ষ্মীচাঁদ বিয়ানি। মনোনয়ন পত্র জমা ও প্রত্যাহার পর্বে কোথায় কত রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা ঘটেছে, তার সবিস্তার পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে ওই আবেদনে। বলা হয়েছে, ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রক্রিয়া শেষ করতে বলেছিল হাইকোর্টই। সেই অনুযায়ী বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল। ইতিমধ্যেই মনোনয়ন পর্ব শেষ হয়েছে। এখন মূল নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হবে। কমিশনের এক সূত্রের বক্তব্য, মনোনয়ন পর্বে যথেষ্ট বাহিনী না পাওয়ায় বেশ কিছু ঘটনা ঘটে গিয়েছে। রাজ্যে মারা গিয়েছেন তিন জন। মূল নির্বাচন পর্বে তারা যে সেই ঝুঁকিটা নিতে রাজি নয়, তা এ দিন হাইকোর্টকে পরিষ্কার বলে দিয়েছে কমিশন। তাদের আর্জি, সুষ্ঠু নির্বাচন কী ভাবে হবে, তা হাইকোর্টই ঠিক করে দিক।
স্বভাবতই এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে দফা বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে অবশ্য বলেন, “আদৌ দফা বাড়ানো সম্ভব কি না, সেটা খতিয়ে দেখছি।” দফা বাড়ানো হলে কতটা বাড়ানো হবে জানতে চাওয়া হলে মীরাদেবী বলেন, “কত বাহিনী পাচ্ছি, সেই অনুযায়ী সবটা বিবেচনা করতে হবে।” যদিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে বাহিনী চেয়ে রাজ্য সরকার ফের চিঠি দিয়েছে বলে এ দিনই মহাকরণে জানান মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র। বাহিনী পাঠাতে মধ্যপ্রদেশ, পঞ্জাব এবং ওড়িশার কাছে ফের অনুরোধ করা হয়েছে বলেও তিনি জানান। মীরাদেবী বলেন, রাজ্য তাঁদের চিঠি দিলেও তাতে বাহিনীর বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা নেই।
হাইকোর্টের কাছে পথনির্দেশ চাওয়ার পাশাপাশি ভোটের সময়ে রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা যাতে তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকেন, সে ব্যাপারেও হাইকোর্টের পরিষ্কার নির্দেশ চেয়েছে কমিশন। হাইকোর্ট অবশ্য আগেই পঞ্চায়েত নির্বাচনের ক্ষেত্রে কমিশনকে পূর্ণ ক্ষমতা দিয়েছে। কিন্তু কমিশনের অভিযোগ, প্রশাসনিক অফিসারদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে রাজ্য পূর্ণ সহযোগিতা করছে না।
হাইকোর্টের বিচারপতি রঘুনাথ ভট্টাচার্যের মৃত্যুতে এ দিন ১০ মিনিটের বেশি কাজ হয়নি আদালতে। তাই আজ, বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধান বিচারপতির এজলাসে ওই মামলার শুনানি হবে।
পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের দায়ের করা অন্য একটি মামলার শুনানি এ দিন শুরু হয় বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের এজলাসে। প্রদেশ কংগ্রেস নেতা তুলসীদাস মুখোপাধ্যায়ের দায়ের করা ওই মামলায় আবেনকারীর আইনজীবী প্রদীপ তরফদার অভিযোগ করেন, যথেষ্ট নিরাপত্তা বাহিনী না থাকায় কংগ্রেসের অনেক প্রার্থীই মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি। অনেককে জোর করে মনোনয়পত্র প্রত্যাহার করানো হয়েছে। যাঁরা ভোটে লড়ছেন, তাঁদের অনেকেই এলাকায় প্রচারে যেতে পারছেন না।
কমিশনের আইনজীবী লক্ষ্মীচাঁদ বিয়ানি বলেন, তাঁরা প্রথম থেকেই নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের কথা বললেও রাজ্য সরকার তা এখনও দিতে পারেনি। মঙ্গলবার রাজ্যের পক্ষে কোনও আইনজীবী ছিলেন না। অবাধ পঞ্চায়েত নির্বাচন যাতে হয়, রাজ্য সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশন উভয়েরই তা দেখা দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ, বুধবার এই মামলাটিরও পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে।
|