প্রথম দফা পঞ্চায়েত ভোটের আর মাত্র ১৪ দিন বাকি। কিন্তু চাহিদামতো বাহিনী পাওয়ার আশা এখনও দেখছে না রাজ্য নির্বাচন কমিশন। এ দিন কমিশনের সঙ্গে রাজ্য প্রশাসনিক কর্তাদের বৈঠকেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। এই কথা জানার পরে আজ, মঙ্গলবার কমিশন হাইকোর্টকে জানাবে, চাহিদামতো বাহিনী না পেলে তাদের পক্ষে অবাধ পঞ্চায়েত নির্বাচন করা সম্ভব নয়। তা হলে ভোট হবে কী ভাবে, তার পথনির্দেশ দিতেও হাইকোর্টকে অনুরোধ করবে কমিশন।
পঞ্চায়েত নির্বাচন করানোর জন্য রাজ্য কত সশস্ত্র বাহিনী দিতে পারবে এবং কবে থেকে সেই বাহিনী পাওয়া যাবে, তা স্পষ্ট করতে বলে সরকারকে সোমবার চিঠি দেয় কমিশন। আজ, মঙ্গলবারের মধ্যে সরকারের কাছ থেকে জবাব চায় তারা। এ দিনই রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র জানিয়ে দেন, এখন পর্যন্ত রাজ্যের হাতে ৫৫ হাজারের বেশি বাহিনী নেই। বারাসতের কামদুনিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, “আমাদের সরকার ৪০ হাজার পুলিশ নিয়োগ করেছে। আর না থাকলে কোথা থেকে দেব? পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য ওরা ১ লক্ষ ৪০ হাজার বাহিনী চাইছে। আরে আমার তো কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু না পেলে কোথা থেকে দেব?” এ দিন বিকেলে কমিশনের দফতরে গিয়ে নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যসচিব ছাড়াও ছিলেন স্বরাষ্ট্রসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং এডিজি আইন-শৃঙ্খলা। বৈঠকের পরে মীরা পাণ্ডে বলেন, “বাহিনী কোথা থেকে আসবে, সে ব্যাপারে প্রশাসনের কর্তারা কোনও কথা বলেননি। বিভিন্ন জেলায় আইনশৃঙ্খলার যে অবনতি হয়েছে, তা নিয়েই কথা হয়।”
সন্ধ্যায় মুখ্যসচিব মহাকরণে বলেন, “আমরা তো কেন্দ্রের কাছে আগেই ৩০০ কোম্পানি বাহিনী চেয়েছিলাম। অন্য দিক থেকেও চেষ্টা করা হচ্ছে।” প্রশাসন সূত্রের খবর, অন্য দিক বলতে ওড়িশা, পঞ্জাব ও মধ্যপ্রদেশকে বুঝিয়েছেন মুখ্যসচিব। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “আগেই ওই তিন রাজ্যের কাছে ১৩০ কোম্পানি বাহিনী চেয়েছিলাম। সেই চিঠির কোনও উত্তর না আসায়
আবার চিঠি লিখেছি।” তবে ওই রাজ্যগুলির কাছ থেকে আদৌ কোনও বাহিনী পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে ঘোরতর সংশয়ে রয়েছে রাজ্য প্রশাসনিক মহল।
সন্ধ্যায় শোনা গিয়েছিল, বাহিনী চেয়ে কেন্দ্রকে আরও এক বার চিঠি পাঠিয়েছে রাজ্য। সে কথা উল্লেখ করে কমিশনের চিঠিরও জবাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাতে মহাকরণ সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাত পর্যন্ত এমন কোনও চিঠি কেন্দ্র বা কমিশন, কাউকে পাঠানো হয়নি। সূত্রের বক্তব্য, ছত্তীসগঢ়ের ঘটনার পরে জঙ্গলমহল সংলগ্ন সীমানা সিল করার জন্য সম্প্রতি ১০০ কোম্পানি বাহিনী চাওয়া হয়েছিল কেন্দ্রের কাছে। পাওয়া গিয়েছে মাত্র ৬ কোম্পানি। এখন বাহিনী চাওয়া হবে সীমানা সিল করার জন্যই পঞ্চায়েত ভোটের জন্য নয়। কিন্তু সে চিঠিও এ দিন দেওয়া হয়নি।
চাহিদামতো বাহিনী না পেলে যে পঞ্চায়েত ভোট করা সম্ভব নয়, তা এ দিন আরও একবার স্পষ্ট করে দিয়ে মীরাদেবী বলেন, “কমিশন যে পরিমাণ বাহিনী চেয়েছে, তা পাওয়া না গেলে পঞ্চায়েত নির্বাচন করা সম্ভব নয়।” আরও জানান, “কয়েকটি জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে খুব খারাপ, সে কথা আমরা রাজ্য প্রশাসনকে বলেছি।” দফা বাড়িয়ে কি পঞ্চায়েত নির্বাচন করা সম্ভব? মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়টি ওঠেনি বলে জানিয়েছেন মীরা। তবে এখন দফা বাড়াতে গেলে অনেক জটিলতা রয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। বলেন, “আমরা প্রথম থেকেই চার দফায় নির্বাচন করার কথা বলেছিলাম। এখন তিন দফায় নির্বাচন হবে বলে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়ে গিয়েছে। এর পরে ফের দফা বাড়াতে গেলে অনেক জটিলতা তৈরি হবে।”
এই পরিস্থিতিতে এ দিন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন বিকেলে রাজভবনে ডেকে পাঠান পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে। দু’জনের মধ্যে বৈঠকের পরে সুব্রতবাবু বলেন, “রাজ্যপাল চা খেতে ডেকেছিলেন। আমাদের মধ্যে দার্জিলিং ভ্রমণ নিয়ে কথা হল।” প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যপাল আশ্বাস দিয়েছেন, আজ হাইকোর্ট কী বলে দেখে তার পরে প্রয়োজনে তিনি দু’পক্ষের মধ্যে সমঝোতায় উদ্যোগী হবেন। রাজভবন থেকে বেরিয়ে হাইকোর্টে অ্যাডভোকেট জেনারেলের সঙ্গে দেখা করার বদলে সুব্রতবাবু সোজা চলে যান মহাকরণে। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি ও আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। মুখ্যসচিবও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এ দিন যে চিঠিটি রাজ্যকে পাঠিয়েছে কমিশন, তাতে হাইকোর্টের নির্দেশের দু’টি মূল অংশে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। তা হল, ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে পঞ্চায়েত ভোট শেষ করতে হবে এবং গত ২২ মে কমিশন যে বাহিনীর কথা রাজ্যকে জানিয়েছিল, তা দিতে হবে। রাজ্য যে বারবার ‘পর্যাপ্ত বাহিনীর’ কথা বলেছিল, তার উপরে আস্থা না রেখে এ দিন কমিশন সরাসরি জানতে চেয়েছে, পঞ্চায়েত ভোটের সময় কত সশস্ত্র বাহিনী, কত লাঠিধারী পুলিশ এবং কত হোমগার্ড রাজ্য তাদের দিতে পারবে? চিঠিতে কমিশন আরও জানিয়েছে, রাজ্য তাদের কী জবাব পাঠাচ্ছে, তা তারা হাইকোর্টকে জানাবে। তার পরে কোর্ট বেঞ্চ যা বলবে তাই করবে কমিশন। |