রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে যে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে, রবিবার তা রাখঢাক না করেই জানিয়ে দিলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে। আর এর জন্য যে রাজ্য সরকারই দায়ী, তা-ও স্পষ্ট করে দিলেন তিনি। এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে মীরাদেবীর বক্তব্য, কোনও কারণে পঞ্চায়েত ভোট স্থগিত হলে তার দায় রাজ্যকেই নিতে হবে।
নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে কমিশন এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে বিরোধ এখনও তুঙ্গে। রাজ্য কত বাহিনী দিতে পারবে, তা জানতে চেয়ে আজ, সোমবার চিঠি দিচ্ছে কমিশন। জবাব পাওয়ার পরে তারা আদালতের দ্বারস্থ হবে বলে কমিশন সূত্রে খবর। প্রশাসন সূত্রে বলা হচ্ছে, যে পরিমাণ বাহিনী কমিশন চাইছে, বিশেষ করে প্রথম দফার জন্য, তা সরকারের হাতে নেই। যে বিপুল পরিমাণ ঘাটতি থাকছে, তা জোগাড় করা নিয়েও আশার আলোও নেই। বস্তুত, পঞ্চায়েত ভোটের জন্য ঠিক কত পরিমাণ সশস্ত্র বাহিনী দেওয়া সম্ভব হবে, তা নিয়ে এ দিনও নির্দিষ্ট ভাবে কিছু জানাতে পারেনি রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর। এ দিন রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, এই সংখ্যা এখনই বলা সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতিতে দফা বাড়ানোর আবেদন করতে পারে কমিশন। অথবা ভোট-পর্ব আপাতত স্থগিতও হয়ে যেতে পারে। |
রাজ্য চাহিদামতো বাহিনী না-দিলে কী করে ভোট করব,
বুঝতে পারছি না। রাজ্যকেই দায়িত্ব নিতে হবে।
মীরা পাণ্ডে
রাজ্য নির্বাচন কমিশনার |
পঞ্চায়েত নির্বাচন সংগঠিত করার দায়িত্ব রাজ্য নির্বাচন কমিশনের। এ ব্যাপারে যাবতীয় দায়ও তাদের।
সুব্রত মুখোপাধ্যায়
পঞ্চায়েতমন্ত্রী |
|
ভোট স্থগিত হতে পারে, এই আশঙ্কা থেকেই কমিশন এবং বিরোধীদের ঘাড়ে দায় চাপাতে পাল্টা প্রচারে নেমেছে তৃণমূল। শনিবারই তৃণমূল নেতা মুকুল রায় এই নিয়ে সরব হয়েছিলেন। যার জবাবও দিয়েছিলেন সিপিএমের রবীন দেব, কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্যরা। এ বার মীরাদেবী সরাসরি মুখ খুলে বুঝিয়ে দিলেন, ভোট যদি শেষ পর্যন্ত স্থগিত হয়ে যায়, তবে তার দায় নিজেদের ঘাড়ে নিতে নারাজ তাঁরা।
রবিবার মীরাদেবী বলেন, “প্রথম দফায় ৯টি জেলায় নির্বাচনের নির্ঘণ্ট তৈরি করেছে রাজ্য সরকার। ওই ৯টি জেলার নির্বাচন প্রক্রিয়া অবাধ এবং সুষ্ঠু করার জন্য যে পরিমাণ পুলিশ প্রয়োজন, তার ব্যবস্থা করতে পারবে বলেই মনে হয় নিশ্চিত ছিল তারা। কিন্তু এখন কত বাহিনী দিতে পারবে, তা নিয়ে স্পষ্ট কিছুই জানাচ্ছে না।”
প্রথম দফার ভোটের আর ১৪ দিন বাকি। এই যদি পরিস্থিতি থাকে, তা হলে ভোট করা সম্ভব কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে মীরাদেবীর। তিনি বলেন, “রাজ্য সরকার আমাদের চাহিদা মতো বাহিনী না দিলে কী করে পঞ্চায়েত ভোট করব, তা বুঝতে পারছি না। তারা কত বাহিনী দিতে পারবে, তা-ও এখনও পর্যন্ত জানায়নি।” শেষ পর্যন্ত পঞ্চায়েত ভোট স্থগিত হয়ে গেলে কী হবে?
মীরা পাণ্ডে বলেন, “রাজ্যকেই এর দায়িত্ব নিতে হবে। আমরা তো অনেক আগে থেকেই পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়েছি।”
বাহিনী নিয়ে টালবাহানার মধ্যেই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। তিন দফার নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র পেশ, প্রথম দু’দফার জন্য মনোনয়ন পরীক্ষার কাজও শেষ হয়ে গিয়েছে। এ দিকে পঞ্চায়েত ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পর থেকে জেলায় জেলায় উন্নয়নের কাজ প্রায় বন্ধ। নির্বাচনী প্রস্তুতিতেও বহু টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। ভোট স্থগিত হয়ে গেলে অর্থের অপচয়ের প্রসঙ্গও উঠবে। ভোট স্থগিতের পথে না গিয়ে দফা বাড়িয়ে যদি নির্বাচন প্রক্রিয়া চালু রাখার চেষ্টা হয়, তা হলেও থাকছে একাধিক প্রশ্ন। সে ক্ষেত্রে কি যে সব জায়গায় বিভিন্ন প্রার্থী মনোনয়নপত্র পেশ করতে পারেননি, তাঁরা ফের সুযোগ পাবেন? মীরাদেবী এ দিন জানান, কোনও ক্ষেত্রেই ওই সব প্রার্থীকে আর মনোনয়নপত্র পেশের সুযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, “আইনে সে রকম কোনও বিধান নেই।”
রাজ্য নির্বাচন কমিশনার যে ভোট নিয়ে যাবতীয় সংশয়ের দায় সরকারের ঘাড়ে চাপিয়েছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন সংগঠিত করার দায়িত্ব রাজ্য নির্বাচন কমিশনের। এ ব্যাপারে যাবতীয় দায়ও তাদের।” কিন্তু পর্যাপ্ত বাহিনী না পেলে ভোট হবে কী করে? সুব্রতবাবু বলেন, “বাহিনী পাওয়া না পাওয়াটা আমার দেখার কথা নয়। ওটা রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরই দেখছে।”
এর মধ্যে পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে সংঘর্ষ বাড়ছে। মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। রাজ্য এবং কমিশনের মধ্যে বিরোধ ক্রমশ বাড়ছে। |