প্রশ্ন ঘুরছে প্রশাসনে
পঞ্চায়েত জটে কি দিশা দিতে পারবে কোর্ট
যেন নিমন্ত্রিতরা এসে গিয়েছে, কিন্তু ভিয়েন চড়বে কি না ঠিক নেই।
পঞ্চায়েত ভোটের দশাও এখন তেমনই। ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। অর্ধেকের বেশি আসনে মনোনয়নপত্র স্ক্রুটিনির কাজ পর্যন্ত শেষ। কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্য সরকারের বিরোধে নাভিশ্বাস উঠেছে ভোটের। এই অবস্থায় স্বাভাবিক ভাবেই থমকে গিয়েছে যাবতীয় প্রশাসনিক ও উন্নয়নের কাজ। অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন পরীক্ষার্থীরাও। এমনকী, প্রশাসনিক সূত্রে বলা হচ্ছে, ভোট নিয়ে এই দোলাচলে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে মুখ্যমন্ত্রীর প্রচার সফরও।
সকলেরই এক প্রশ্ন, এর জটের মীমাংসা কী ভাবে মিলবে? এবং এর জবাব কারওই জানা নেই।
নির্ধারিত নির্ঘণ্ট অনুযায়ী, প্রথম পর্বে রাজ্যের ৯টি জেলায় ভোট হওয়ার কথা। এই পর্বের জন্য প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া ও তার স্ক্রুটিনির কাজও শেষ। কিন্তু প্রথম দফায় আদালতের নির্দেশ মতো সশস্ত্র বাহিনী যে পাওয়া যাবে না, ভোটের দু’সপ্তাহ আগে সে ব্যাপারে নিশ্চিত প্রশাসন ও কমিশন, দু’পক্ষই। তবু নিয়ম মেনে সোমবার সরকারকে চিঠি দিচ্ছে কমিশন। তাতে বলা হবে, আদালতের নির্দেশ মেনে বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে যে নিরাপত্তা বাহিনীর হিসেব পেয়েছে কমিশন, তাতে প্রথম দফায় ১ লক্ষ ৪৯ হাজার নিরাপত্তাকর্মী লাগবে। এর মধ্যে শুধু বুথ-পাহারা দিতেই লাগবে ৫৭ হাজার ৯১১ জন সশস্ত্রকর্মী। একই ভাবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফার জন্য সশস্ত্র ও অস্ত্রবিহীন বাহিনী লাগবে যথাক্রমে ৬৫ হাজার এবং ৩৫ হাজার করে। রাজ্য সরকার কবে এবং কত সংখ্যায় বাহিনী দিতে পারবে, তা জানাক। কমিশনের আশা, মঙ্গলবারের মধ্যেই রাজ্য সরকার ওই চিঠির উত্তর দেবে। তার পরেই নিরাপত্তা ব্যবস্থার সব তথ্য নিয়ে আদালতে যাবে কমিশন। কমিশন সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতিতে দফা বাড়ানোর আবেদন জানাবে তারা।
প্রশ্ন উঠেছে, দফা বাড়িয়েই কি জট খোলা সম্ভব? নাকি তার ফলে ভোট চলে যাবে আরও গভীর জলে? শনিবার ছুটির দিনেও এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কমিশন ও রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা নিজেদের মধ্যে বহু আলোচনা করেছেন। কিন্তু নির্দিষ্ট করে কোনও সমাধান সূত্র বেরিয়ে আসেইনি, বরং দফা বাড়ানো নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠে এসেছে বিভিন্ন মহল থেকে।
অনেকেই বলছেন, কমিশন তো দফা বাড়ানো নিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হবে। কিন্তু এই ঘটনা বেনজির। এক বার নির্ঘণ্ট ঘোষণা করে ভোট প্রক্রিয়া শুরু করে দেওয়ার পরে এ ভাবে দফা বাড়ানোর কথা পঞ্চায়েত আইনেও বলা নেই। সুতরাং আদালত যে নির্দেশ দেবে তা এক কথায় নজিরবিহীন। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে যদি কেউ উচ্চতর আদালতে যায়, তা হলে কী হবে, কেউ জানে না।
হাইকোর্ট কী নির্দেশ দিতে পারে তাই নিয়েও জল্পনার অন্ত ছিল না। যদি তারা দফা বাড়াতে বলে, তা হলে সেটা কী ভাবে হবে? তখন কি প্রথম দফাকেই শুধু ভাঙা হবে, নাকি তিন দফা ভোট-পর্ব পুরোটাই বাতিল করে নতুন নির্ঘণ্ট ঘোষণা করা হবে? যা-ই হোক না কেন, প্রথম দফা না ভাঙলে যে চলবে না, তা পরিষ্কার। এমন কিছু যদি হয়, তা হলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ীদের ক্ষেত্রে কী হবে?
এমন একটি জটিল পরিস্থিতিতে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন অনেকেই। যেমন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের পরীক্ষার্থীরা। ইতিমধ্যে তাঁদের পরীক্ষা প্রায় এক মাস পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন নতুন করে ভোটের নির্ঘণ্ট হলে সেই পরীক্ষা নিয়েও তৈরি হবে ঘোর অনিশ্চয়তা। শিক্ষকদের মতে, ইতিমধ্যে পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ায় তার প্রভাব পড়বে পরের বছরের শিক্ষাবর্ষে। পরীক্ষা আরও পিছোলে আগামী বছর ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
এবং পর্যবেক্ষক। কমিশনের নির্দেশে মনোনয়নপত্র পেশ শুরু আগেই বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়েছেন পর্যবেক্ষকেরা। সকলেই মূলত রাজ্য প্রশাসনের মধ্যসারির কর্তাব্যক্তি। ভোটের নির্ঘণ্ট মেনে মে-র শেষ থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত তাঁদের পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে হবে। এমনিতেই ভোটের দিন ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় সরকারের উন্নয়নমূলক যাবতীয় কাজ বন্ধ। তার সঙ্গে অফিসারদের অনুপস্থিতিতে দৈনন্দিন কাজও লাটে উঠেছে। তাই ভোটের দিন বাড়লে হাল আরও খারাপ হবে বলে মনে করছে মহাকরণ।
ভোটের জন্য জেলাগুলির প্রায় গোটা পুলিশ বাহিনীকেই কাজে লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু প্রথম দফার দু’সপ্তাহ আগেও ছবিটা পরিষ্কার না হওয়ায় ভোটের নিরাপত্তা নিয়ে কোনও নকশাই তৈরি করতে পারছে না জেলা প্রশাসন। কমিশনের এক কর্তা জানান, নতুন করে জেলা পুনর্বিন্যাস করলে আদালত নির্ধারিত ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচনের কাজ শেষ করাও সম্ভব হবে না।
এই অনিশ্চয়তার মধ্যেও অবশ্য সরকার-প্রশাসন এবং শাসক-বিরোধী দলের মধ্যে তরজা অব্যাহত। যেমন শুক্রবার কমিশনকে চিঠি পাঠিয়ে সরকার ফের দাবি করেছে, ভোটের প্রক্তিয়া চলাকালীন জেলাশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারদের নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার রাজ্যেরই, কমিশনের নয়। কমিশন এ দিন তার উত্তর দিয়ে বলেছে, জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের নির্বাচন সংক্রান্ত যাবতীয় কাজের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে কমিশনেরই, রাজ্য সরকারের নয়। তবে ওই দুই পদাধিকারী সরকারের অন্য যে সব কাজ করবেন, তার নিয়ন্ত্রণ থাকবে রাজ্যের হাতেই।
ভোটের দফা বদল প্রসঙ্গে এ দিন মেদিনীপুরে পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা ভোটের দফার কোনও পরিবর্তন করব না। ওরা (কমিশন) কোর্টে গেলে সেখানে কী হবে জানি না।” তিনি বলেন, “আমরা যথেষ্টই তৈরি। শান্তিপূর্ণ ভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিয়েছি।” প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোট হবে কি না, তা কেউ বলতে পারছে না। ভোট সরকারের উপর নির্ভর করছে।”

জটিলতার ৬ প্রশ্ন
• এক দিনে ৯ জেলায় ভোট না করে কি দু’তিন দফায়?
• সে জন্য কি সরকারের সম্মতি দরকার?
• নতুন করে কি বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে?
• তা হলে কি পুরনো বিজ্ঞপ্তি বাতিল হয়ে যাবে?
• সে ক্ষেত্রে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ীদের কী হবে?
• জট খুলতে কি শেষ কথা বলবে আদালতই?

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.