ভোট নিয়ে অনিশ্চয়তা তুঙ্গে। এ বার দায় নিয়ে শুরু হয়ে গেল রাজনৈতিক চাপানউতোর। এবং এ ক্ষেত্রে শাসক দল তৃণমূল নির্বাচন কমিশন ও বিরোধীদের ঘাড়ে যাবতীয় দোষ চাপাতে চেয়েছে। এই নিয়ে প্রচারে পথেও নামতে তৈরি তারা। বিরোধীরাও চুপ করে বসে নেই। তাদের বক্তব্য, আজ যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তার পুরো দায় শাসকদের। এই নিয়ে প্রচার থেকে শুরু করে রাজ্য নির্বাচন কমিশন ও রাজ্যপালেরও দ্বারস্থ হচ্ছেন তাঁরা।
অনিশ্চিত ভোটের আবহে এ দিন মুখ খুলেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। শনিবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আনেন তিনি। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডের নাম না করে মুকুলবাবুর বক্তব্য, “পঞ্চায়েত ভোটে সিপিএম, কংগ্রেস হারবে বলে পালাতে চাইছে। তাদের পালানোর সুযোগ করে দিচ্ছেন কমিশনার। তিনি মোটেই নিরপেক্ষ নন। গণতন্ত্রের পক্ষে এটা বিপজ্জনক।”
শুধু মুখে আক্রমণই নয়, মুকুলবাবুরা এই নিয়ে প্রচারে পথেও নামছেন। মুকুলবাবু জানান, কাল সোমবার কলকাতায় দলের মহিলা সংগঠন মিছিল করবে। সেখানে বলা হবে, ভোটের পথে প্রধান বাধা কমিশন, সঙ্গী বিরোধীরা। মিছিলের যাত্রাপথ অবশ্য এখনও চূড়ান্ত হয়নি। মিছিলের পরে তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা নির্বাচন কমিশনের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে অভিযোগও জানাবেন।
মুকুলবাবুদের এই রাজনৈতিক প্রচারের বিরুদ্ধে কিন্তু এর মধ্যেই সরব বিরোধীরা। তাঁদের বক্তব্য, পঞ্চায়েত ভোট যে বিশ বাঁও জলে, তার জন্য দায়ী একমাত্র শাসক দল। ভোট আটকে যাওয়ার মূল কারণ, নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে জট। প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, কেন্দ্রের কাছে আবেদন জানালে তারা বাহিনী পাঠাবে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে সে কথা জানিয়েওছেন। কিন্তু রাজ্যই আবেদন করছে না। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “রাজ্য সরকার এখনও সেই আবেদন জানায়নি। এর থেকেই স্পষ্ট, তৃণমূলের সরকার ভোট চায় না।”
একই অভিযোগ সিপিএমেরও। সিপিএম নেতা রবীন দেব মুকুলবাবুর বক্তব্য খারিজ করে পাল্টা আক্রমণ করে বলেছেন, “মিথ্য কথা বলা ও সন্ত্রাস তৃণমূলের স্বভাব। ভোট যাতে সুষ্ঠু হয়, সে জন্য আমরা প্রথম থেকে দাবি জানিয়ে আসছি।” মনোনয়ন পর্বে শাসক দলের অত্যাচারের প্রসঙ্গে এ দিন বসিরহাট রবীন্দ্রভবনে এক সভায় রাজ্যের প্রাক্তন আবাসন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “ভোটের আগেই পঞ্চায়েতের আট-দশ হাজার আসনে জয়ী হয়েও জেলা পরিষদে খারাপ ফলের আশঙ্কায় মমতা এমন ভাবে ভোট বন্ধ করতে চাইছেন, যাতে ওঁর দোষ না হয়। মমতা চাইছেন, নির্বাচন কমিশন কিংবা আদালত ভোট বন্ধ করে দিক।” একই ভাবে যাবতীয় জটিলতার জন্য শাসক দলকে কাঠগড়ায় তুলে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেছেন, “শুরু থেকে তৃণমূলই পঞ্চায়েত ভোট বন্ধ করতে বা পিছোতে চেয়েছে। কারণ সারদা কাণ্ড-সহ ওদের জমানার নানা ভয়ঙ্কর ঘটনার প্রভাব ওই ভোটে পড়বে বলে ওরাই আশঙ্কা করেছিল।”
শাসক দলের প্রচারের মোকাবিলায় এর মধ্যেই পথে নেমেছেন বিরোধীরা। এ দিনই দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেসের সভানেত্রী মালা রায়ের নেতৃত্বে সুষ্ঠু পঞ্চায়েত ভোটের দাবিতে মিছিল হয়। নির্বাচন কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা। অন্য দিকে, বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু জানিয়েছেন, শাসক দলের বাধায় বহু বাম প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি বা দিলেও তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছেন। এ বিষয়ে অভিযোগ জানাতে কাল, সোমবার রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের দ্বারস্থ হবেন তাঁরা। পরশু, মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের দফতরের সামনে তাঁরা অবস্থান করবেন।
বিরোধীদের এই সব অভিযোগ মুকুলবাবু তো বটেই, রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও উড়িয়ে দিয়েছেন। এ দিন মেদিনীপুরে সুব্রতবাবু বিরোধীদের কটাক্ষ করে বলেন, “প্রার্থী দিতে পারেনি বলে ওরা সংবাদমাধ্যমের কাছে যাচ্ছে কেন? পুলিশের কাছে যাচ্ছে না কেন? পুলিশ তো অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেবে।” ১৯৮৩ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত পরিসংখ্যান দিয়ে মুকুলবাবু বলেন, “সিপিএমের সন্ত্রাসে তখন বিরোধীরা হাজার হাজার আসনে প্রার্থী দিতে পারত না। আর এ বার ৬০ হাজার আসনে ১ লক্ষ ৭০ হাজার মানুষ মনোনয়ন জমা দিয়েছে। এদের মধ্যে আমাদের, কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপি এবং নির্দলও আছে।” তাঁর প্রশ্ন, “এর পরেও সন্ত্রাসের অভিযোগ?” |