আবাসন-দুর্নীতি নিয়ে সিআইডি তাঁকে সমন ধরানোয় আরও আক্রমণাত্মক হলেন প্রাক্তন মন্ত্রী সিপিএম নেতা গৌতম দেব। শনিবার একটি বৈদ্যুতিন মাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে গৌতমবাবু বলেন, “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এ কাজ করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে এ কাজ মনিটর করছেন। সিআইডি আমায় যে জেরা করবে, তার লাইভ সম্প্রচার করা হোক। তা হলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।” সিআইডি সূত্রের খবর, ২১ জুন সকালে ভবানী ভবনে প্রাক্তন আবাসন মন্ত্রীকে হাজির হতে বলা হয়েছে। গৌতমবাবু সেখানে যাবেন কি না, তা অবশ্য পরিষ্কার করে বলেননি।
শনিবার একটি টিভি চ্যানেলে গৌতমবাবু দাবি করেছেন, তাঁর আমলে কোনও সংস্থাকেই অন্যায্য সুবিধা দেওয়া হয়নি। এমনকী, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর ছেলে চন্দন বসুর সংস্থাকেও নয়।
তবে তৃণমূল নেতা ও রাজ্যের মন্ত্রী মদন মিত্রের অভিযোগ, “গৌতমবাবুর আমলে চুরি নয়, লুঠ হয়েছে। স্বজনপোষণ করতে গিয়ে একটার পর একটা ফ্ল্যাট, জমি দখল করা হয়েছে। প্রচুর বেআইনি নিয়োগ হয়েছে। এ সবের তো তদন্ত হবেই!”
সিআইডি জানিয়েছে, বাম আমলে আবাসন দফতরে ২০ কোটি টাকার একটি দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তাতে বলা হয়েছে, তৎকালীন আবাসন দফতর মহেশতলা ও পাড়ুইয়ে বিনা টেন্ডারে চন্দন বসুর সংস্থা ‘গ্রিনফিল্ড’কে প্রায় ৪৫ একর জমি পাইয়ে দিয়েছে। অভিযোগ, ওই সংস্থা আবাসন তৈরি না করে তা অন্য একটি সংস্থাকে লিজ দিয়ে দেয়। এর ফলে আবাসন দফতরের ২০ কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। এই মামলায় শুক্রবার বিকেলে সিআইডি-র গোয়েন্দারা গৌতম দেবের বাড়ি সমন নিয়ে যান। বাড়িতে কেউ না থাকায় বিধাননগর (দক্ষিণ) থানায় সমন দিয়ে যান গোয়েন্দারা। পুলিশ সূত্রের খবর, শুক্রবার রাতেই বিধাননগর দক্ষিণ থানা থেকে গৌতমবাবুর বাড়িতে ওই সমন পৌঁছে দেওয়া হয়।
সিআইডি-র অভিযোগের প্রেক্ষিতে গৌতমবাবু এ দিন জানান, আবাসন দফতর কোনও জমি বিক্রি করে না। এমনকী, যৌথ প্রকল্পের জন্যও কোনও বেসরকারি সংস্থাকে জমির মালিকানা দেয় না আবাসন দফতর। তিনি বলেন, “জমি দেওয়ার একটিই পদ্ধতি আছে, সেটাই মানা হয়েছে। দামের ক্ষেত্রেও কোনও সুবিধে দেওয়া হয়নি।”
সিআইডি-র জেরা কি ‘লাইভ’ দেখানো সম্ভব? জবাবে গৌতমবাবু বলেন, “সিআইডি-র সমন ধরাতে যাওয়া যদি টিভিতে দেখানো যায়, তা হলে আমাকে জেরা করাই বা কেন লাইভ দেখানো যাবে না?” মমতা-সরকার তাঁকে ‘প্রেমপত্র’ পাঠিয়েছে বলে কটাক্ষ করেন গৌতমবাবু। তিনি বলেন, “আইন মোতাবেক আমি হিডকোর চেয়ারম্যান থাকলেও সাধারণত সংস্থার সভায় যেতে পারতাম না। অডিটের কাগজ বিধানসভায় পাশ হয়েছে। তখন কেউ প্রশ্ন তোলেননি। এখন খুঁচিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।”
গৌতমবাবুর বলেন, আবাসন দফতরের ফাইল সরকারের হাতেই রয়েছে। তারা খতিয়ে দেখুক। তাঁর কথায়, “সরকার পারলে আমাকে জেলে পুরুক। সিআইডি, পুলিশ, বিচারবিভাগীয় কমিশন, সরকার যাকে দিয়ে তদন্ত করাতে চায় করুক।”
|