বাম জমানায় সরকারি কর্মচারীদের একাংশের পদোন্নতি ঘিরে অনিয়মের ফাঁস কাটাতে অবশেষে উদ্যোগী হল বর্তমান রাজ্য সরকার। শ্রম দফতরের যে ২০০ জন আধিকারিক অ্যাড-হক ভিত্তিতে উচ্চ পদের সুবিধা পেয়েছিলেন বামফ্রন্ট সরকারের আমলে, তাঁদের পদোন্নতি নিয়মানুগ বলে ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। গত সপ্তাহে জারি-হওয়া সরকারি নির্দেশিকার ফলে ওই আধিকারিকদের পেনশন ও অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে জটিলতা কেটে যাবে বলে সরকারি সূত্রের খবর। পাশাপাশিই, বাম আমলে ওই অ্যাড-হক পদোন্নতির জন্য কারা দায়ী, তা চিহ্নিত করার
জন্য তদন্তের সরকারি নির্দেশও
জারি হয়েছে।
বাম সরকারের আমলে শ্রম দফতরের এক শ্রেণির আধিকারিকের দীর্ঘ দিনের বঞ্চনার অভিযোগ মেটাতে গিয়ে তাঁদের আচমকা পদোন্নতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এগ্রিকালচারাল মিনিমাম ওয়েজেস ইনস্পেক্টর (এমডব্লিউআই)-দের জন্য ‘সুপার নিউমেরারি’ পদ তৈরি করে ১৬০ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল ২০১০ সালে। তারও আগে ১৯৯৯ ও ২০০৬-এও দু’দফায় কিছু অফিসারকে উঁচু পদে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ‘গ্রেডেশন তালিকা’ ছাড়াই তিন বছর আগের পদোন্নতির সিদ্ধান্তের জেরে ওয়েস্ট বেঙ্গল লেবার সার্ভিসের সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত অফিসাররা রাজ্য প্রশাসনিক আদালতের (স্যাট) দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তথ্যের অধিকার আইনে তাঁদের প্রশ্নের জবাবে শ্রম দফতরের তরফে জানানো হয়েছিল, ‘গ্রেডেশন তালিকা’র বিষয়টি আগেই আদালতের বিচারাধীন থাকায় এমডব্লিউআই-দের পদোন্নতির সময় তা তৈরি ছিল না। গোটা বিষয়টি নিয়ে এক দিকে যেমন প্রশাসনিক স্তরে অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল, তেমনই পদোন্নতিপ্রাপ্ত অনেকের পেনশন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা আটকে ছিল। রাজ্য অর্থ দফতরের সম্মতি-সহ সরকারের নতুন নির্দেশের (নং: ২১৪৮-জি ই / জি / ৩এ-৩০/০৮ (পার্ট), তাং: ১১/০৬/২০১৩) ফলে তাঁদের পেনশন পেতে আর সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
বাম জমানার সিদ্ধান্তের জেরে সমস্যায় পড়া আধিকারিকদের একাংশের চিন্তামুক্তি ঘটিয়ে এক দিকে যেমন তাঁদের বার্তা দিতে চেয়েছে বর্তমান সরকার, তেমনই অনিয়ম ঘটানোর দায়ে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থাও করতে চাইছে তারা।
রাজ্যের শ্রম সচিব অমল রায়চৌধুরীর কথায়, “নিয়মানুগ করা ছাড়াও
পৃথক নির্দেশিকা জারি করে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারা ওই সমস্যার জন্য দায়ী, তদন্তে চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া হবে। ভবিষ্যতে আর যাতে এমন না ঘটে, তা
দেখাও সরকারের উদ্দেশ্য।”
অমলবাবুর আরও বক্তব্য, “ওই আধিকারিকদের ব্যাপারে অনেক দিন ধরেই চিন্তাভাবনা চলছিল। অর্থ দফতরের সম্মতিও প্রায় দু’বছর আগেই এসে গিয়েছিল। চাকরি করে ওঁরা পেনশন পাবেন না, এটা ঠিক নয়। নতুন নির্দেশের ফলে ওঁদের পদোন্নতি নিয়মানুগ বলেই ধরা হবে।” পেনশনের অভাবে সমস্যায় পড়ে কিছু দিন আগে এক জনের মৃত্যুর
খবরও শ্রম দফতরে পৌঁছেছিল। তার পরেই ওই আধিকারিকদের নিয়মানুগ করার জন্য তৎপরতা শুরু হয়
বলে সরকারি সূত্রের খবর। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনের আচরণবিধি জারি থাকার সময় এমন সিদ্ধান্ত কি নেওয়া যায়?
শ্রম সচিবের মতে, “এটা নতুন কোনও ঘোষণা নয়। একটা চালু প্রক্রিয়াকেই নিয়মানুগ করা হয়েছে। তাতে কোনও সমস্যা নেই।” তবে ওয়েস্ট বেঙ্গল লেবার সার্ভিসের সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত অফিসারদের একাংশ এই সিদ্ধান্তে খুশি নন। তাঁদের বক্তব্য, “কারও পেনশন আটকে থাকুক, আমরা চাই না। কিন্তু মাথার উপরে হঠাৎ কাউকে বসিয়ে দেওয়ার প্রবণতা মানা যায় না। গ্রেডেশন তালিকা উপেক্ষা করে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তাতেই সিলমোহর পড়ায় অনেকের মনোবল ধাক্কা খাবে। তাতে কাজে প্রভাব পড়বে।” সে ক্ষেত্রে ফের স্যাটের দ্বারস্থ হওয়ার কথাও ভাবছেন কেউ কেউ। |