মুর্শিদাবাদ ও কোচবিহারে প্রকল্প
জমির ফাঁসে জুট পার্ক, ফিরেই গেল দিল্লির অর্থ
পাঁচ বছর আগে চুক্তি করেও জমি-জটে আটকে গিয়ে দু’-দু’টি ‘জুট পার্ক’ তৈরির কাজ শুরুই করতে পারেনি পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় বরাদ্দের ৭২ লক্ষ টাকাও ফেরত চলে গিয়েছে। মহাকরণ এখন তা ফিরিয়ে আনতে চাইলেও আপাতত এই মুহূর্তে তার আশা বিশেষ নেই বলে সরকারি সূত্রের ইঙ্গিত।
আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে চটজাত পণ্য-সামগ্রী বানিয়ে রফতানির লক্ষ্যে মুর্শিদাবাদ ও কোচবিহারে দু’টি জুট পার্ক তৈরির পরিকল্পনা হয়েছিল বাম আমলে, ২০০৭-এ। যৌথ উদ্যোগে প্রকল্প রূপায়ণের উদ্দেশ্যে একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করে রাজ্যের ক্ষুদ্রশিল্প উন্নয়ন নিগম। চুক্তিতে বলা হয়েছিল, যৌথ উদ্যোগের সংস্থাটি দু’টো পার্কে পরিকাঠামো বানিয়ে দেবে। চট-শিল্পে জড়িত বিভিন্ন সংস্থাকে সেখানে দীর্ঘমেয়াদি লিজের ভিত্তিতে জায়গা দেওয়া হবে।
দু’টি পার্কের পরিকাঠামো নির্মাণে খরচ ধরা হয়েছিল ৬০ কোটি টাকা। ঠিক হয়, কেন্দ্রীয় সরকারের ‘জুট টেকনোলজি মিশন’-এর আওতায় পার্ক দু’টিকে এনে প্রকল্প-ব্যয়ের ৪০% দিল্লি জোগাবে। রাজ্য করবে জমির বন্দোবস্ত। সেই মতো কেন্দ্র প্রথম কিস্তির ৭২ লক্ষ পাঠিয়েও দেয়। কথা ছিল, চলতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে জুট পার্ক তৈরি হয়ে যাবে। কিন্তু জমির সংস্থান হতে দেরি হওয়ায় প্রকল্প ঝুলে রয়েছে।
এবং সময়সীমা লঙ্ঘিত হওয়ায় দিল্লির নির্দেশমতো রাজ্যকে ফিরিয়ে দিতে হয়েছে প্রথম কিস্তির ৭২ লক্ষ টাকা। প্রশাসনিক সূত্রের খবর: এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষুব্ধ। মেয়াদ-উত্তীর্ণ প্রকল্পের টাকা ফেরত চেয়ে তাঁর নির্দেশেই মহাকরণ থেকে কেন্দ্রকে চিঠি পাঠানো হয়। কিন্তু পাল্টা চিঠি দিয়ে দিল্লি জানিয়ে দিয়েছে, দুই তরফে আলোচনার পরেই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
অর্থাৎ এখনই কেন্দ্রীয় অনুদান আসার সম্ভাবনা নেই। বরাদ্দের অর্থ এ ভাবে হাতছাড়া হওয়ায় পরোক্ষে ‘সরকারি গাফিলতির’ দিকেও আঙুল তুলছে প্রশাসনের কোনও কোনও মহল। ক্ষুদ্র-কুটিরশিল্প দফতরের সচিব রাজীব সিংহের কথায়, “এমন একটা প্রকল্প রূপায়ণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে ধারাবাহিক ভাবে যোগাযোগ রেখে কাজের যে রূপরেখা তৈরি করা উচিত ছিল, তা হয়নি। এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট আগ্রহ ও অভিজ্ঞতার অভাবকে দায়ী করব।”
জমির-জটে কী ভাবে জড়াল জুট পার্কের উদ্যোগ?
মহাকরণের খবর: মুর্শিদাবাদের রেজিনগরে ক’বছর আগে সুগার কর্পোরেশন-কে তিরিশ একরের একটা জমি দিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ শিল্প পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগম। সেটি কোনও কাজে না-লাগায় ঠিক হয়,
ওই জমিতেই জুট পার্ক গড়ে তোলা হবে। কিন্তু সরকারি নিয়ম মেনে জমি হস্তান্তরেই বিস্তর সময় লেগে গিয়েছে। যার কারণ হিসেবে ক্ষুদ্রশিল্পের এক কর্তার ব্যাখ্যা, “একটি প্রকল্পের খাতিরে সরকারের জমি সুগার কর্পোরেশন-কে দেওয়া হয়েছিল। একই জমি আবার অন্য প্রকল্পে বরাদ্দ করার প্রয়োজনীয় নিয়ম মানতে গিয়েই অনেকটা সময় চলে যায়।” ক’মাস আগে জমিটি ক্ষুদ্রশিল্প দফতরের হাতে এসেছে বলে জানাচ্ছেন ওই আধিকারিক।
রেজিনগরের জমি সদ্য হস্তান্তরিত হলেও জমির অভাবে কোচবিহারে জুট পার্ক প্রকল্পটাই বাতিলের খাতায় চলে যেতে বসেছে।
কী রকম?
রাজ্য ক্ষুদ্রশিল্প উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান সব্যসাচী বাগচি জানাচ্ছেন, জুট পার্ক করতে কোচবিহারের চকচকায় শিল্প পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগম একটা জমি দেবে বলে প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছিল। কিন্তু পরে বোঝা গিয়েছে, তা আদৌ পাওয়া যাবে না। কেন যাবে না, তার ব্যাখ্যা দিয়ে শিল্প পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগমের সচিব পবিত্রকুমার মণ্ডলের বক্তব্য, “চকচকায় আমাদের একটা শিল্পতালুক আছে। সেখানকার ফাঁকা জমি নিয়ে আমাদের নানা পরিকল্পনাও রয়েছে।”
এ হেন পরিস্থিতিতে কোচবিহারের জুট পার্ক প্রকল্পটাই বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সব্যসাচীবাবু। ক্ষুদ্র-কুটিরশিল্প সচিব রাজীববাবু অবশ্য এখনই পরিকল্পনা বাতিলের কথা মানতে নারাজ। তবে আপাতত কোচবিহারের পরিকল্পনা মাথা থেকে সরিয়ে রেজিনগর নিয়েই ভাবছেন ক্ষুদ্রশিল্প-কর্তারা। তাঁদের আশা, আগামী বছর ফের কেন্দ্রীয় সহায়তা মিলবে।
রেজিনগরে জুট পার্ক তৈরি কবে নাগাদ শুরু হতে পারে?
ক্ষুদ্রশিল্প মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলছেন, “হাওড়ার উপনির্বাচন ও পঞ্চায়েত ভোটের জন্য আটকে যাচ্ছি। এ সব মিটলেই কাজে হাত পড়বে।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.