পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, কটাক্ষ পার্থর
দিনহাটার খুনে ফব বিধায়ক-সহ অভিযুক্ত ৬০ জন
ত্তর ও দক্ষিণবঙ্গে শনিবারের দু’টি খুনের ঘটনাকে ঘিরে রবিবারও তপ্ত রইল রাজ্য রাজনীতি। এরই মধ্যে রবিবার বর্ধমানে এক তৃণমূল কর্মীর অস্বাভাবিক মৃত্যুকে ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর।
শনিবার বিকেলে বীরভূমের লোবার মেটেগ্রামে দুষ্কৃতী হামলায় খুন হন ভাস্কর মজুমদার নামে এক নিরীহ গ্রামবাসী। অভিযোগের তির ছিল শাসকদলের দিকে। সে দিনই বিকেলে কোচবিহারের দিনহাটার খট্টিমারি এলাকায় সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষে মৃত্যু হয় রতন বর্মন নামে এক তৃণমূল কর্মীর। এ ক্ষেত্রে অভিযুক্ত সিপিএম এবং ফরওয়ার্ড ব্লক।
দিনহাটার খুনের ঘটনায় ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক তথা স্থানীয় বিধায়ক উদয়ন গুহ-সহ ৬০ জন বাম নেতা-কর্মীর নামে খুনের মামলা শুরু করেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, অভিযুক্তদের তালিকায় জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি মণীন্দ্র বর্মন, দিনহাটা ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রুহিদাস সরকার, নাজিরহাট ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান সুধীর বিশ্বাস, সিপিএমের বুড়িরহাট লোকাল কমিটির নেতা সুনীল সরকার রয়েছেন। জেলা পুলিশ সুপার অনুপ জয়সওয়াল বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে দিনহাটার বিধায়ক-সহ ৬০ জনের বিরুদ্ধে খুন-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। ১২ জনকে ধরা হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজা হচ্ছে।” পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃতদের মধ্যে আট জন ফব এবং চার জন সিপিএম সমর্থক। গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫ জন বাম প্রার্থীও আছেন ধৃতের তালিকায়।
লোবার ঘটনার প্রতিবাদে দুবরাজপুর থানার সামনে
সিপিএমের অবস্থান-বিক্ষোভ।
দিনহাটায় নিহত তৃণমূলকর্মীর
বাড়িতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়। রবিবার।
রবিবার খট্টিমারিতে নিহত দলীয় কর্মীর বাড়িতে যান তৃণমূলের মহাসচিব তথা শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। মৃতের স্ত্রী পূর্ণিমা বর্মন-সহ পরিজনদের সমবেদনা জানান তিনি। পরে দিনহাটা হাসপাতালে জখম সমর্থকদের দেখতে যান পার্থবাবু। তিনি বলেন, “পঞ্চায়েত ভোটের আগে জনসমর্থন নেই বুঝে সিপিএম খুনের রাজনীতি শুরু করেছে। আমরা এটা চাই না। তৃণমূলকর্মীদের বলছি, প্ররোচনায় পা দেবেন না। পঞ্চায়েতেও পরিবর্তন হবে।” ওই ঘটনার রেশ টেনে উদয়নবাবুর বিরুদ্ধেও চক্রান্তের অভিযোগ তুলেছেন পার্থবাবু। তাঁর বক্তব্য, “উদয়ন গুহের বিরুদ্ধে আগেও বহু মামলা হয়েছে। কে কত বড় নেতা, সেটা বিচার্য বিষয় নয়। হত্যাকারী ও হত্যার চক্রান্তকারীদের একই শ্রেণিভুক্ত করে বিচার করতে হবে। কেউ ছাড়া পাবেন না।” উদয়নবাবু ‘পালিয়ে বেড়াচ্ছেন’ বলেও তাঁর দাবি।
উদয়নবাবুর প্রতিক্রিয়া, “আমি নিজেকে বড় নেতা মনে করি না। আমি কলকাতা কিংবা দিনহাটায় থাকি। আমি অন্যায় করিনি যে পালিয়ে থাকব! কারও কথায় প্ররোচিত না হয়ে পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষ প্রমাণ করতে পারলে গ্রেফতার করুক।” বাম নেতারা দাবি করেছেন, উদয়নবাবু শনিবার সকাল ৯টা নাগাদ কোচবিহার শহরে আসেন। জেলা বামফ্রন্টের বৈঠক সেরে তিনি জেলা অফিসে সাংবাদিক বৈঠক করেন বিকেলে। পরে তিনি ট্রেনে কলকাতার উদ্দেশে রওনা হন। উদয়নবাবুর বক্তব্য, “দিনহাটায় জেতা সম্ভব নয়, সেটা বুঝেই তৃণমূল মিথ্যে মামলা সাজাচ্ছে। সবটাই আসলে এলাকা বিরোধী শূন্য করার ছক।” শনিবারের ঘটনা নিয়ে সিপিএমের তরফেও দিনহাটা থানায় পাল্টা অভিযোগ করা হয়েছে।
অন্য দিকে, লোবার ঘটনায় গৌতম দাস ও সুফল হাঁসদা নামে যে দু’জনকে ধরেছে দুবরাজপুর থানার পুলিশ, তাঁরা এলাকায় তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক হিসেবেই পরিচিত। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য সে কথা মানতে চাননি। দুবরাজপুর আদালত এ দিন ধৃতদের পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়। ওই খুনের প্রতিবাদে এ দিন ১২ ঘণ্টার দুবরাজপুর বন্ধের ডাক দিয়েছিল সিপিএম। দুবরাজপুর পুর-শহরে বন্ধের খুব একটা প্রভাব না পড়লেও মেটেগ্রামের অবস্থা
ছিল যথেষ্টই থমথমে। সিপিএম নেতাদের অভিযোগ, ওই গ্রামে যেহেতু তাঁদের দলের সমর্থক বেশি থাকায় এবং পঞ্চায়েত ভোটে তাঁদের দলের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করার আক্রোশে পরিকল্পিত ভাবে আক্রমণ করেছিল তৃণমৃল। দোষীদের ধরার দাবিতে এ দিন দুবরাজপুর থানার সামনে বিক্ষোভও দেখায় বামফ্রন্ট।
তৃণমূলের ১৫০-২০০ জনের একটি সশস্ত্র দুষ্কৃতী দল শনিবার বিকেলে ওই গ্রামে তাণ্ডব চালায় বলে অভিযোগ। তখনই গুলি লাগে ভাস্করবাবুর মাথায়। রবিবারও ঘর গোছাতে পারেননি মেটেগ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা। পুলিশের
ভূমিকায় ক্ষোভও রয়েছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অরুণ মিত্র ও দুবরাজপুরের ফব বিধায়ক বিজয় বাগদি বলেন, “দু’জনকে ধরে কী হবে? হামলা চালিয়েছিল ২০০ জন সশস্ত্র দুষ্কৃতী। পুলিশ তাদের ধরুক!”
বর্ধমান শহর লাগোয়া নলা গ্রামে এ দিন সকালে এদিন সকাল ১১টা নাগাদ একটি আমগাছে গলায় গামছার ফাঁস দেওয়া অবস্থায় মেলে বাবলু মোল্লা (৪৫) নামে এক তৃণমূল কর্মীর দেহ। স্থানীয় তৃণমূল নেতা নজরুল মণ্ডলের অভিযোগ, “বাবলু আমাদের সক্রিয় কর্মী। এ দিন নলা গ্রামে তিনি দলীয় পতাকা টাঙ্গাতে গিয়েছিলেন আদিবাসী পাড়ায়। তাঁকে সিপিএমের লোকেরা তাড়া করে। খুনের হুমকি দেয়। তার পরেই তাঁর দেহ মেলে। আমাদের সন্দেহ, বাবলুকে খুন করা হয়েছে।” ওই ঘটনায় সন্ন্যাসী মাঝি নামে এক সিপিএম কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ খুনের মামলা শুরু করেছে। সিপিএমের বক্তব্য, আত্মহত্যার ঘটনাকেও তৃণমূল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে খুন বলে দেখাতে চাইছে।
এক কংগ্রেস কর্মীকে মারধরের অভিযোগে শনিবার রাতে তপ্ত হয়ে ওঠে নদিয়ার চাকদহ স্টেশন এলাকা। তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে চৌমাথার কাছে পথ অবরোধ করেন কংগ্রেস কর্মীরা। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে ব্যাপক যানজট হয়। ওই রাতেই উত্তের ২৪ পরগনার হাড়োয়ায় সিপিএম ও তৃণমূলের সংঘর্ষে আট জন জখম হন। গুরুতর জখম ছ’জনকে আরজিকর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রবিবার ক্যানিংয়ের জীবনতলার কালিকাতলা এলাকায় সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষে দু’পক্ষের সাত জন আহত হন। ছ’জনকে পুলিশ আটক করেছে।
—নিজস্ব চিত্র।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.