চেলিয়ামায় ছাত্র-মৃত্যুর ঘটনায় খুনের মামলা শুরু করল পুলিশ। স্থানীয় এক বাসিন্দার অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার রাতে ছাত্রটির বাবা, কাকা ও কাকিমার বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করেছে পুলিশ। রঘুনাথপুরের এসডিপিও কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের মামলা শুরু করা হলেও তদন্ত এখন একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়নি।” মৃত ছাত্র সৌমেন ভট্টাচার্যের পরিবার স্থানীয় বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে ভাঙচুরের পাল্টা অভিযোগ করেছেন। অন্য দিকে, পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া ও হামলার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
শনিবার চেলিয়ামার সরকার পাড়ায় একটি কুয়োর মধ্য থেকে উদ্ধার হয় ক’দিন ধরে নিখোঁজ থাকা স্থানীয় বিজলী প্রভা হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র সৌমেন ভট্টাচার্যের দেহ। সোমবার দুপুরে সৌমেনের সহপাঠী ও স্কুলের ছাত্রেরা তার পরিবারের লোকেদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ তুলে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবিতে রাস্তা অবরোধ করে। সামিল হয়েছিল পাশের বিসি গালর্স হাইস্কুলের ছাত্রীরাও। পরে বিক্ষোভের রাশ চলে যায় স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতে। অবরোধ-বিক্ষোভ তুলতে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতে জখম হন পুলিশ কর্মীরা। ভাঙচুর চালানো হয় পুলিশের গাড়িতেও। সৌমেন ও তার কাকুর বাড়িতেও ভাঙচুর চলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে লাঠি চালায় পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দা ও ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, পুলিশ বিনা প্ররোচনায় নির্বিচারে লাঠি চালিয়েছে। বাদ পড়েনি ছোট পড়ুয়ারাও।
পুলিশ জানিয়েছে, পরে এলাকারই এক বাসিন্দা থানায় অভিযোগ করেন, সৌমেনকে খুন করা হয়েছে বলে তাঁদের অনুমান। পরিবারের লোকেরাও জড়িত বলে তাঁর সন্দেহ। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ সৌমেনের বাবা বাবা সত্যেন ভট্টাচার্য, কাকা ধীরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ও কাকিমা শ্যামলী ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করে। পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, দেহটির ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা ছাত্রটিকে খুন করা হয়েছিল, কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারছে না। পুলিশের উপরে হামলার অভিযোগে সোমবার রাতেই স্থানীয় বাসিন্দা ভিক্ষাকর পরামানিককে পুলিশ গ্রেফতার করে। মঙ্গলবার তাঁকে রঘুনাথপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিন জেল হাজতের নির্দেশ দেন। ওই ঘটনায় মাথায় চোট পাওয়া রঘুনাথপুরের কনস্টেবল তন্ময় চট্টোপাধ্যায়কে রঘুনাথপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
তবে সোমবারের ওই জনরোষের কী কারণ, পরের দিনও তা নিয়ে ধন্দে পুলিশ। পুলিশের সূত্র অনুযায়ী, প্রথমদিকে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোঙে সামিল হলেও পরে রাশ হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে তাঁরা আটকানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কাজ হয়নি। পুলিশের এক পদস্থ কর্তা জানান, সৌমেনের দেহ উদ্ধারের পরে এলাকায় চাউর হওয়া গুজবে ওর সহপাঠীরা মানসিক আঘাত পেয়ে রাস্তায় নেমেছিল। কিন্তু পরে তার রাশ টেনে নেয় উচ্ছৃঙ্খল কিছু জনতা। সোমবার থানায় নিয়ে এসে এসডিপিও দীর্ঘসময় জেরা করেন মৃত ছাত্রের বাবা ও কাকাকে। কেন স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের ঘটনায় অভিযুক্ত করছেম, সে বিষয়ে জানার চেষ্টা চলে। তাঁদের কাছ থেকে বিশেষ তথ্য পুলিশ পায়নি।
অন্য দিকে, এ দিন থমথমে ছিল চেলিয়ামা এলাকা। সোমবার রাত থেকেই এলাকায় পুলিশ পিকেট ছিল। এ দিন সকালে পুলিশ টহল দেয়। বিজলীপ্রভা হাইস্কুলেও ছাত্র সংখ্যা ছিল প্রায় অর্ধেক। অন্য দিকে, এ দিন চেলিয়ামা গ্রামে ফেরেননি সৌমেনের পরিবারের লোকেরা। পুলিশ জানিয়েছে, এলাকায় ফিরলেই ফের হামলার সামনে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে তাঁদের অন্যত্র থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
|