আক্রান্ত পুলিশের পাল্টা লাঠি
ছাত্রের মৃত্যুতে জনরোষ, তাণ্ডব রঘুনাথপুরে
স্কুলছাত্রের দেহ মিলেছিল তারই বাড়ির কাছের কুয়োয়। সেটা শনিবারের ঘটনা। সোমবার মৃত ছাত্রের সহপাঠী ও অন্য পড়ুয়াদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠল পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর থানার চেলিয়ামা এলাকা। ছাত্র-বিক্ষোভ এক সময় চেহারা নেয় জনরোষের। পুলিশের সামনেই মৃত ছাত্র ও তার কাকার বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় পড়ুয়াদের দল ও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। সামলাতে গিয়ে আক্রান্ত হন পুলিশকর্মীরা। পুলিশ পাল্টা লাঠি চালালে ছাত্রছাত্রী-সহ কয়েক জন আহত হন।
রঘুনাথপুর ২ ব্লক সদর চেলিয়ামা গ্রামটি ঝাড়খণ্ড সীমানার কাছে। গ্রামের সরকারপাড়ায় ছোট্ট টালির বাড়িতে থাকত সৌমেন ভট্টাচার্য (১৬) ও তার বাবা, পেশায় চাষি সতন ভট্টাচার্য। পাশে কাকা ধীরেন্দ্রনাথবাবুর দোতলা বাড়ি। জেঠু-জেঠিমা রঘুনাথপুর ১ ব্লকের একটি হাইস্কুলের শিক্ষক। শনিবার সকালে বাড়ির অদূরে একটি কুয়ো থেকে সৌমেনের দেহ মেলে। পুলিশ দেহের ময়নাতদন্ত করায়। মৃতের পরিবারের সদস্য বা আত্মীয়-পরিজন, কোনও তরফেই খুনের অভিযোগ দায়ের না হওয়ায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছিল রঘুনাথপুর থানার পুলিশ। শনিবারই দেহ নিয়ে এসে দাহ করে দেয় সৌমেনের পরিবারের লোকজন।
এই কুয়ো থেকেই মিলেছিল ওই ছাত্রের দেহ।
কিন্তু, স্থানীয় বিজলীপ্রভা হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র সৌমেনকে খুন করা হয়েছে, কোনও ভাবে এলাকায় এই খবর ছড়িয়ে পড়েছিল। পারিবারিক কোনও বিবাদের জেরেই সে খুন হয়েছে, এমনও কথা উঠতে থাকে। সোমবার সকাল থেকেই বিক্ষোভ বাড়ছিল এলাকায়। দুপুরে স্কুল থেকে বেরিয়ে সামনের চেলিয়ামা-রঘুনাথপুর রাস্তা অবরোধ শুরু করে সৌমেনের স্কুলের সমস্ত ছাত্রছাত্রী। তাতে সামিল হয় পাশের বিসি গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রীরাও। তাদের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড। দাবি ওঠে, সৌমেনের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় দোষীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে পুলিশকে। বিক্ষোভ প্রথমে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলেও পরে সামিল হন স্থানীয় বাসিন্দারা। ডান-বাম নির্বিশেষে এলাকার রাজনৈতিক দলের একাধিক নেতা-কর্মীও ছিলেন বিক্ষোভে।
অবরোধ শুরু হওয়ার ঘণ্টাখানেক পরে রঘুনাথপুর থানা থেকে পুলিশ যায় এলাকায়। ততক্ষণে জনতা খেপে উঠেছে। পুলিশকে লক্ষ করে ঢিল-পাটকেল ছোড়া শুরু হয়। মাথা ফাটে এক সাব ইনস্পেক্টরের। আরও জনা বারো পুলিশকর্মী ইটের ঘায়ে আহত হন। পুলিশের জিপে ভাঙচুর হয়। এর পরেই সরকারপাড়ায় সৌমেনের বাড়িতে চড়াও হয় শ’পাঁচেক বিক্ষোভকারী। সৌমেনের বাড়ি ও তার কাকার বাড়িতে তাণ্ডব চলে। দরজা, জানলা, আসবাবপত্র, টালির ছাদ ভেঙে ফেলা হয়। মৃত ছাত্রের পারলৌকিক কাজে যোগ দিতে আসা আত্মীয়দের মোটরবাইকও ভাঙা হয়। সতনবাবু ও তাঁর ভাইকে ধাক্কাধাক্কি করা হয়। আত্মীয়েরা যে যেদিকে পারেন পালিয়ে যান।
বিকেলে বিশাল পুলিশবাহিনী নিয়ে চেলিয়ামা পৌঁছন রঘুনাথপুরের এসডিপিও কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযোগ, পুলিশ ছাত্রছাত্রীদের লাঠিপেটা করে। সৌমেনের সহপাঠী শুভজিৎ বিশ্বাস, অজয় সরকার, সৌরভ দাসদের দাবি, “সৌমেনকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। অথচ ঘটনাকে আত্মহত্যার রূপ দিতে বাড়ির লোকেরা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানায়নি। আমাদের প্রতিবাদে পুলিশ বিনা প্ররোচনায় লাঠি চালিয়েছে। বাদ যায়নি পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীরাও।” কীসের ভিত্তিতে তারা খুনের কথা বলছে, কেনই বা তাদের কেউ বিক্ষোভ-অবরোধ-ভাঙচুরের পথে না হেঁটে থানায় গিয়ে খুনের অভিযোগ দায়ের করেনি, তার সদুত্তর অবশ্য দেননি সৌমেনের সহপাঠী বা এলাকাবাসীা।
ছাত্রটির শেষকৃত্যে আসা আত্মীয়স্বজনের মোটরবাইক পোড়াল বিক্ষুব্ধ জনতা।
বিজলীপ্রভা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক চিত্তরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সৌমেন হঠাৎ মৃত্যুতে আমরা সকলেই আঘাত পেয়েছি। কিন্তু, ছাত্রছাত্রীদের স্কুলের বাইরে গিয়ে রাস্তা অবরোধ বা বিক্ষোভ দেখানো বন্ধ করতে বলেছিলাম। ওরা কথা শোনেনি।” এসডিপিও বলেন, “মৃত ছাত্রের বাবা, কাকা, কাকিমা ও খুড়তুতো দাদাকে উদ্ধার করে রঘুনাথপুর থানায় আনা হয়েছে। এখনও খুনের অভিযোগ হয়নি। ময়না-তদন্তের রিপোর্টও মেলেনি। কেন হঠাৎ এমন জনরোষ ছড়াল, তা স্পষ্ট নয়। আমরা পরিবারের লোকেদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছি।” সতনবাবুর সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তবে, ধীরেন্দ্রনাথবাবুর বক্তব্য, “কিছু মহল চক্রান্ত করে স্কুলের ছাত্রছাত্রী আর স্থানীয় লোকেদের খেপিয়ে তুলেছে। নিজের ছেলে বা ভাইপোকে কি কেউ খুন করতে পারে?” সৌমেনের ঠাকুরমা সবিতা ভট্টাচার্যের কথায়, “নাতিকে কোলেপিঠে আমিই মানুষ করেছি। আমার ছেলেরা যদি ওকে খুন করত, তা হলে আমিই তো প্রথম ওদের পুলিশে ধরিয়ে দিতাম! জানি না, কেন গ্রামের লোকজন আমাদের উপরে হামলা চালাল।”

—নিজস্ব চিত্র



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.