প্লাস্টিকের ট্যাঙ্ক বোঝাই ট্রাক উল্টে এক মোটরবাইক আরোহীর মৃত্যু, সেই সঙ্গে পথ অবরোধ ওঠাতে লাঠি নিয়ে পুলিশের তাড়া। এই দুইয়ে মিলে মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা আড়াই ঘণ্টা অবরুদ্ধ হয়ে থাকল ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের ব্যস্ততম রাজ্য সড়ক বি টি রোড। শেষ পর্যন্ত অবরোধ যখন উঠল, ততক্ষণে গাড়ির লাইন পড়ে গিয়েছে সোদপুর পর্যন্ত। যানজটে নাকাল হয়ে নাজেহাল স্কুল-কলেজ-অফিসযাত্রীরা।
পুলিশ জানিয়েছে, গৌতম ঘোষ (৪৬) নামে ওই মোটরবাইক আরোহী কামারহাটি প্রসাদনগরের বাসিন্দা। কাশীপুর গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরির কর্মী গৌতমবাবু অফিস যাওয়ার জন্য বেরিয়েছিলেন। প্রবর্তক চটকলের কাছে ডিভাইডারের কাটা অংশের আগে উল্টো দিকের লেনে যাওয়ার জন্য রাস্তার ধারে মোটরবাইক দাঁড় করিয়েছিলেন তিনি। তখনই প্লাস্টিকের ট্যাঙ্কে রাসায়নিক বোঝাই একটি ট্রাক দ্রুত গতিতে একটি বাসকে পাশ কাটাতে গিয়ে সজোরে ব্রেক কষে। প্লাস্টিকের ট্যাঙ্কগুলি দড়ি দিয়ে বাঁধা ছিল। দড়ি খুলে সেগুলি ছিটকে পড়ে রাস্তায়। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকটি ডিভাইডার টপকে উল্টে যায়। |
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কিছু বোঝার আগেই গৌতমবাবুর উপরে ট্যাঙ্ক ও গোটা ট্রাকটা আছড়ে পড়ে। সব সরিয়ে যখন তাঁকে উদ্ধার করা হয়, ততক্ষণে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে গৌতমবাবুর। এর পরেই ক্ষেপে ওঠেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দাবিতে বি টি রোড অবরোধ শুরু করেন তাঁরা। পুলিশ আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে গেলে প্রথমে তাঁদের কথা শুনতেও চাননি অবরোধকারীরা। কয়েক দফায় বোঝানোর পরেও অবরোধ না ওঠায় ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিশবাহিনী নিয়ে যান বেলঘরিয়ার এডিসিপি বিশ্বজিৎ ঘোষ। উত্তেজিত জনতাকে সরাতে পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করে। অবরোধকারীদের অভিযোগ, লাঠি দিয়ে মারা হয়েছে তাঁদের। পুলিশ অবশ্য লাঠিচার্জের ঘটনা অস্বীকার করেছে।
বিশ্বজিতবাবু বলেন, “এখন কমিশনারেটের সব ক’টি ব্যস্ত রাস্তায় সকাল আটটা থেকে ট্রাফিক পুলিশ থাকে। কিন্তু ঘটনা ঘটেছে তার আগে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বি টি রোড একটু ফাঁকা থাকলেই চালকেরা গতি বাড়ান। গতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলের কাছেই অত্যাধুনিক ট্রাফিক সিগন্যাল বসানো হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে সেটি চালু হয়ে যাবে।” এ দিকে, প্রবল যানজটে আটকা পড়ে জেরবার হওয়া যাত্রীরা যানবাহন থেকে নেমে চড়া রোদে ঘামতে ঘামতে হাঁটতে শুরু করেন। কামারহাটি থেকে সোদপুর পর্যন্ত গাড়ির লাইন পড়ে যায়। পরে অবশ্য কলকাতা ও ব্যারাকপুরগামী গাড়িগুলি কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে ঘুরিয়ে দেয় পুলিশ। সড়ক পথ ছেড়ে অনেকে ট্রেন ধরতে কাছাকাছি স্টেশনে হাজির হন। ফলে মাত্রাতিরিক্ত ভিড় হয় ট্রেনেও। সব মিলিয়ে অবরোধ-যন্ত্রণায় নাকাল হন শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দারা। |