|
|
|
|
জগৎবল্লভপুর |
ভোটের লড়াই ঢুকে পড়েছে বাড়ির অন্দরে
নিজস্ব প্রতিবেদন |
এক পরিবারের তিন মহিলা প্রার্থী হয়েছেন তিন দলের।
জগৎবল্লভপুরের শঙ্করহাটি-১ পঞ্চায়েতের বল্লভবাটি গ্রাম। রাজ্যের অন্যান্য জায়গায় মতো পঞ্চায়েত নির্বাচনের উত্তাপে গা সেঁকছে এই এলাকাও। শুরু হয়ে গিয়েছে প্রচার, ছোট ছোট সভা, ও দেওয়াল লিখন। এই গ্রামের লড়াই এ বার চর্তুমুখী। তৃণমূল, সিপিএম, বিজেপি ও কংগ্রেস। জোট ভেঙে যাওয়ার পর এই চিত্র অবশ্য কোনও ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু ব্যতিক্রমটা ধরা পড়বে প্রার্থিতালিকায় চোখ বোলালে। তৃণমূল, সিপিএম, বিজেপির প্রার্থী হলেন একই পরিবারের সদস্য, বর্তমানে পাশাপাশি তিন টালির চালের বাড়ির বাসিন্দা পুতুল দাস, জয়ন্তী দাস ও মঞ্জু দাস। তৃণমূলের টিকিটে ভোটে লড়ছেন পুতুল। বিজেপি প্রার্থী জয়ন্তী সর্ম্পকে তাঁর জা। মঞ্জু দাঁড়িয়েছেন সিপিএমের হয়ে। তিনি আবার সম্পর্কে পুতুল-জয়ন্তীর খুড়তুতো শাশুড়ি।
১৯৯৮ সাল থেকেই বল্লভবাটি গ্রামের ওই বুথে জিতে আসছে বিজেপি। গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল। এ বার মহিলা সংরক্ষিত ওই বুথটি।
জয়ন্তীদেবীর কথায়, “গ্রামের লোক আমাকে দাঁড়াতে বলল। স্বামী বিজেপি কর্মী। তাই প্রার্থী হলাম। তবে আমি জানতাম না যে আমার জা ও কাকিমা প্রার্থী হবেন”। লড়াইয়ের ময়দানে নিজের আত্মীয়ের মুখোমুখি হওয়ায় মন খারাপ তাঁর। তবে তার মধ্যেও বাড়ি বাড়ি ঘুরে চলছে প্রচার। বিজেপি প্রভাবিত গ্রামে জয়ের ব্যাপারে যথেষ্ট আশাবাদী তিনি। মঞ্জু বলেন, “আমি জানতাম না আমার আত্মীয়েরা প্রার্থী হবে। তবে লড়াইটা মতাদর্শের।” পুতুল আবার বলেন, “ছোট থেকেই আমি বামবিরোধী মানসিকতায় বিশ্বাসী। তাই সুযোগ পেয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছি।” |
সহাবস্থান। দাস পরিবারের তিন মহিলা। ছবি: সুব্রত জানা। |
একই পরিবার থেকে তিন দলের প্রার্থী হওয়ায় প্রচারে কোনও সমস্যা হচ্ছে না? কী বলছেন প্রার্থীরা?
ভোট এসেছে, ভোট চলেও যাবে। হয় তো তিন যুযুধান আত্মীয়ের মধ্যে একজন জিতবেন। কিংবা জয়ী হবে অন্য কেউ। কিন্তু ভোট ও তার ফলাফল পারিবারিক সর্ম্পকে অবশ্য কোনও প্রভাব পড়বে না বলেই দাবি দাস পরিবারের তিন মহিলার। একই সঙ্গে বেরোচ্ছেন প্রচারে। এক জনের কথা শেষ হলে অন্য জন নিজের মতাদর্শের কথা বলছেন গ্রামের বাড়ি ঘুরে ঘুরে।
কী বলছেন তিন দলের নেতারা? তাঁরা জানাচ্ছেন, ব্যক্তিগত সম্পর্ক রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে না। ভোট হবে প্রতীকে। তিন দলের নেতারাই দাবি করছেন, ওই পরিবার থেকে প্রথম প্রার্থী তাঁরাই ঠিক করেছেন। গত বিধানসভা নির্বাচনে জগৎবল্লভপুর বিধানসভা আসনে সিপিএম প্রার্থী জাফর আহমেদের কথায়, “যে যার গণতান্ত্রিক মত প্রয়োগ করেছে। কিন্তু শাসক দল ভোট করতে দেবে কিনা সেটাই সন্দেহ।” স্থানীয় বিজেপি নেতা তাপস চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “আমাদের দেখেই সিপিএম ও তৃণমূল ওই পরিবার থেকে প্রার্থী করেছে।” জগৎবল্লভপুরের তৃণমূল বিধায়ক আবুল কাশেম মোল্লার কথায়, “আসনটি মহিলা সংরক্ষিত। বাকি দলগুলি অন্য কোনও প্রার্থী পায়নি। তাই ওই পরিবার থেকেই প্রার্থী করেছে।”
মঙ্গলবার দুপুরে এলাকায় গিয়ে দেখা গেল বাড়ি-লাগোয়া পুকুরে এক সঙ্গে বাসন মাজতে ব্যস্ত পরিবারের তিন মহিলা। মুখ টিপে হেসে তাদেরই এক জন বললেন, “রাজনীতি তো আছেই। তবে ঘরকন্যে তো আমাদেরই সামলাতে হবে!” |
|
|
|
|
|