সম্পাদকীয় ২...
সর্বজ্ঞ সর্বশক্তিমান..
নাগরিকের সুরক্ষা, না কি নাগরিকের ব্যক্তিগত পরিসরের মর্যাদা? কোনটি বড়? রাষ্ট্র কি নাগরিককে সুরক্ষা দিবার লক্ষ্যে অহর্নিশ তাহার ফোনে আড়ি পাতিতে পারে? না কি নাগরিকের ব্যক্তি-পরিসরকে মর্যাদা দিবার কাজটিই মৌলিকতম, তাই কোনও অজুহাতেই, এমনকী প্রাণ বাঁচাইবার লক্ষ্যেও আপামর দেশবাসীর ব্যক্তিগত কথোপকথন, কাজকর্মের খুঁটিনাটি হদিশ জানিবার অধিকারের রাষ্ট্রের নাই? জটিল প্রশ্ন। কিন্তু জটিল বলিয়া এড়াইয়া যাইবার জো নাই, বরং এখনই এই দ্বন্দ্বের মীমাংসা হওয়া দরকার। সম্প্রতি জানা গিয়াছে, বিশ্বের গণতান্ত্রিকতার আধার বলিয়া যে দেশের বিপুল গরিমা, সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নাকি তাহার প্রতিটি নাগরিকের ব্যক্তিগত টেলিফোন আলাপ এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের বিশদতম তথ্য সংগ্রহ করিয়া থাকে— সুনিপুণ গোপনীয়তায়, বিভিন্ন টেলিকম কোম্পানি, ইন্টারনেট ও সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ফার্মের সহিত গোপনতম চুক্তির মাধ্যমে।
দুনিয়াময় আলোড়ন-তোলা এই তথ্য প্রকাশ করিয়াছেন যিনি, তাঁহার নাম এডওয়ার্ড স্নোডেন, আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা বিভাগের অন্যতম দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী হিসাবে এত দিন কাজ করিয়া এই মুহূর্তে যিনি ব্যক্তিগত নিরাপত্তার তাগিদে হংকংবাসী। তাঁহার মতে, যে দেশ এমন ব্যাপক ভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে, সে দেশে তিনি জীবন অতিবাহন করিতে চান না বলিয়াই তিনি মার্কিন দেশছাড়া হইয়াছেন। যে তথ্য তিনি ফাঁস করিয়াছেন, তাহাতে জানা যাইতেছে, সন্ত্রাসদমনের লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট বুশের আমল হইতেই মার্কিন ন্যাশনাল সিকিয়োরিটি এজেন্সি-র নিকট দেশের প্রতিটি নাগরিকের প্রাত্যহিক যোগাযোগের সমস্ত তথ্য আহরণের ছাড়পত্র আছে। কেবল এই ‘মেটাডাটা’ই নয়, জানা গিয়াছে ‘প্রিজম’ নামে এক প্রোগ্রামের অস্তিত্বও, যাহার দ্বারা গুগ্ল, অ্যাপল, ফেসবুক ইত্যাদি ফার্মের গ্রাহকদের সকল রকম তথ্য সরকারকে সরবরাহ করা যায়। এই প্রযুক্তি-গুপ্তচর নেটওয়ার্ক এবং সংশ্লিষ্ট বিচারবিভাগীয় কর্মীদের হাতে রাষ্ট্র অপরিমিত ক্ষমতা দিয়া রাখিয়াছে। স্বভাবতই, মার্কিন দেশে এখন তোলপাড়।
প্রসঙ্গত সে দেশে ৯/১১ সংক্রান্ত মনোবৈকল্য তথা নাগরিক সুরক্ষার প্যারানয়াও যেমন সীমাহীন, গণতান্ত্রিক অধিকারে হস্তক্ষেপের আতঙ্ক ও সম্ভাব্য রাষ্ট্রিক স্বেচ্ছাচারের আশঙ্কাও ততটাই প্রবল। আর, তথ্যপ্রমাণ নূতন হইলেও বিতর্ক তো নূতন নহে, বুশ-আমল হইতেই নিরাপত্তা বনাম অধিকার বিতর্কটি চলিতেছে। সম্প্রতি উইলিয়াম অ্যাসাঞ্জ-এর সূত্রেও তাহা জোরদার হইয়াছে। উইকিলিকস-খ্যাত অ্যাসাঞ্জ-এর পর প্রিজম-খ্যাত স্নোডেনই এখন রাষ্ট্র বনাম নাগরিক ব্যক্তি-অধিকার সংঘর্ষের প্রধান নায়ক কিংবা খলনায়ক। তবে কি না, কেবল তাঁহার নিজের ভাগ্যই এখন অনিশ্চয়তার আবর্তে ঘূর্ণ্যমান নহে। নূতন-প্রাপ্ত তথ্য বনাম পশ্চিমি রাষ্ট্রগুলির প্রতি-যুক্তির মধ্যে ঘুরিতেছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীমা নির্ধারণের নিশানাটিও।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.