সম্পাদকীয় ১...
জোট ভাঙিল
ভারতীয় জনতা পার্টির সহিত দীর্ঘ সতেরো বৎসরের গাঁটছড়া ছিন্ন করিয়া নীতীশ কুমারের সংযুক্ত জনতা দল আপাতত একলা চলার সিদ্ধান্ত লইয়াছে। সিদ্ধান্তের কারণ, বিজেপির প্রচার কমিটির নেতৃত্বে নরেন্দ্র মোদীর অভিষেক, যাহা এনডিএ-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী রূপে মোদীকে অন্য সকলের তুলনায় আগাইয়া দিয়াছে। মোদীকে লইয়া নীতীশ কুমারদের আপত্তি মানিয়া লওয়া বিজেপির পক্ষে সম্ভব ছিল না, কারণ মোদীই দলের জনপ্রিয়তম নেতা হিসাবে অবিসংবাদী হইয়া উঠিয়াছিলেন। নীতীশ বলিয়াছেন, তাঁহারা গুজরাত দাঙ্গা-খ্যাত মোদীকে মানিতে পারিবেন না, কেননা তাহাতে নাকি সাম্প্রদায়িকতার সহিত আপস করা হয়। মোদী ছাড়া অন্য বিজেপি নেতাদের তিনি কেন ধর্মনিরপেক্ষ গণ্য করেন, তাহার ব্যাখ্যা জানা যায় নাই। আবার নীতীশের এনডিএ-ত্যাগকে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ আখ্যা দিয়া বিজেপি যে রাজ্যব্যাপী আন্দোলনে অবতীর্ণ, তাহাও একটু বাড়াবাড়ি। সংযুক্ত জনতা দলই ছিল এনডিএ-তে বিজেপির বৃহত্তম জোট-শরিক। মধুচন্দ্রিমার মেয়াদ ফুরাইয়া গেলে জোর করিয়া বিবাহ টিকাইয়া রাখা যায় না। বিবাহবন্ধন তখন শৃঙ্খল হইয়া ওঠে। দুই দলের পক্ষেই তাই এই বিচ্ছেদ অপরিহার্য হইয়া ওঠে।
ইহার ফলে কেবল বিহারের রাজনীতিই নয়, সমগ্র দেশের রাজনীতিতেই নানাবিধ সম্ভাবনার দরজা খুলিয়া গিয়াছে। নীতীশ কুমার একলা চলার কথা বলিলেও একলা চলার অভিজ্ঞতা তাঁহার সুখকর নয়। বিজেপির সহিত জোটবদ্ধ হওয়ার দুই বৎসর আগে তিনি যখন সাবেক জনতা দল ছাড়িয়া জর্জ ফার্নান্ডেজের সহিত ‘সমতা পার্টি’ গঠন করিয়া ভোটে লড়েন, তখন অবিভক্ত বিহারের ৩২৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে মাত্র ৭টি আসন জিতিতে পারেন। ফার্নান্ডেজের মধ্যস্থতাতেই ১৯৯৬ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির সহিত জোটবদ্ধ হন। জোটধর্ম অনুযায়ী উভয় দলই তাহাতে উপকৃতও হয়। নীতীশ কুমার যেমন বিহারের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হন, বিজেপিও তেমনই বিহারে প্রথমবার ক্ষমতার স্বাদ পায়। উভয় তরফেই এই রাজনৈতিক বাধ্যতা আর নাই। উপরন্তু নীতীশের তীব্র অপছন্দের রাজনীতিক মোদীকে কেন্দ্র করিয়া মনকষাকষিও মীমাংসার অতীত হইয়া গিয়াছে। এই অবস্থায় পুরানো জোট যে ভাঙিবে, তাহা আশ্চর্যের নয়। তবে তাহা যে নূতন জোটের সম্ভাবনা মূর্ত করিবে না, এ কথাও বলা যায় না। বিজেপির বিরোধিতার মোকাবিলা করিয়া বিহারে ক্ষমতা ধরিয়া রাখিতেও এখন নীতীশকে নূতন জোট-শরিকের সন্ধান করিতেই হইবে। কংগ্রেস স্বভাবতই আগ্রহী। নীতীশ-শাসিত বিহারকে অতিরিক্ত আর্থিক প্যাকেজ মঞ্জুর করিয়া ইতিপূর্বেই ইউপিএ সরকার নীতীশকে খুশি রাখিয়াছে। উপরন্তু তাঁহার তীব্র মোদী-বিরোধিতার জন্য নীতীশকে ধর্মনিরপেক্ষতার দরাজ শংসাপত্র দিতেও কংগ্রেস নেতৃত্ব দ্বিধা করিতেছে না।
নীতীশ কুমার যদি কংগ্রেসকে বাছিয়া লন, তবে ইউপিএ জোট নিঃসন্দেহে শক্তিশালী হইবে। লালুপ্রসাদ যাদব ও রামবিলাস পাসোয়ানকে তখন পরিত্যাগ করিতে কংগ্রেস হাইকমান্ডের সম্ভবত বিলম্ব হইবে না। তবে বিহারে কংগ্রেস কোনও ক্রমেই বিজেপির বিকল্প নয়, রাজনৈতিক ভাবে ইহা একটি ক্ষয়িষ্ণু শক্তি, যাহার ক্ষয়ের মূল্যেই অতীতে লালুপ্রসাদ-নীতীশদের আঞ্চলিক, জাত-পাতভিত্তিক সংগঠনগুলির শ্রীবৃদ্ধি। রাজ্য-রাজনীতিতে সেই কংগ্রেসের সহিত জোট কতটা উপকারী হইবে, সে বিষয়ে সন্দেহ তাই থাকিয়াই যায়। বিজেপি যে দ্রুততার সহিত বিহারে নিজের শক্তি ও সমর্থন বাড়াইয়াছে, তাহা সে-দলের গণভিত্তিকে যথেষ্ট মজবুত করিয়াছে। তুলনায় রাজ্যে কংগ্রেসের গণভিত্তি অতিশয় দুর্বল, রাহুল গাঁধীর আবাহনেও তাহা উজ্জীবিত হয় নাই। তাই কংগ্রেসের বৈতরণীও শেষ পর্যন্ত রাজ্য রাজনীতিতে নীতীশকেই ঘাড়ে করিয়া পার করাইতে হইবে। সত্য, বিহারে এখনই শক্তিপরীক্ষার সময় হয় নাই। কিন্তু এনডিএ ছাড়ায় উচ্চবর্ণের ভোট যে নীতীশকে ছাড়িয়া যাইবে, তেমন সম্ভাবনা প্রবল। ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য মিত্রত্যাগের নৈতিকতা দেখাইয়া নীতীশ কুমার কি তখন সংখ্যালঘু ভোট সমাবেশিত করিয়া ক্ষতির পূরণে যত্নবান হইবেন?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.