কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ একটি চটকলের জমিতে ‘বেআইনি ভাবে’ একটি জলের ট্যাঙ্ক নির্মাণ এবং পার্ক তৈরির অভিযোগ উঠল দক্ষিণ দমদম পুরসভার বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ওই জমির উপরে ট্যাঙ্ক বা পার্ক নির্মাণ করার বিষয়ে পুর-কর্তৃপক্ষ ওই চটকলের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনও কথাই বলেননি। কোনও চুক্তিও করেননি। ওই জমির পাঁচিলের ভিতরে চলছে তৃণমূলের একটি দলীয় কার্যালয়ও। যদিও পুরসভার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, এলাকার প্রচুর মানুষের উপকারে আসবে বলেই ওই চটকলের ফাঁকা জায়গায় জলের ট্যাঙ্ক নির্মাণ করা হচ্ছে।
লেকটাউন থানা এলাকার দক্ষিণদাঁড়ি রোডে রয়েছে বহু পুরনো ‘বার্ডস জুট অ্যান্ড এক্সপোর্ট লিমিটেড’। দক্ষিণদাঁড়িতে ৪৯ একর জমির উপরে ব্রিটিশ আমলে তৈরি এই সংস্থায় এক সময়ে নানা ধরনের প্রিন্টিংয়ের কাজ হত। স্বাধীনতার পরে কেন্দ্রের বস্ত্র মন্ত্রকের অধীনস্থ হয় বার্ডস জুট অ্যান্ড এক্সপোর্ট লিমিটেড। কিন্তু পরবর্তীকালে নানা কারণে এটি রুগ্ণ সংস্থায় পরিণত হয় এবং ১৯৯৯ সালে এই সংস্থার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কেন্দ্রের অধীনস্থ কোনও সংস্থা রুগ্ণ হয়ে গেলে, সেটি কেন্দ্রের ‘বোর্ড অফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ফিনান্শিয়াল রিকনস্ট্রাকশন’ (বিআইএফআর)-এর অধীনে চলে যায়। এই সংস্থাটিও সেই মতো যায় বিআইএফ আর-এর অধীনে। কিন্তু ২০১২ সালে বিআইএফআর ওই চটকলটিকে ফের উৎপাদন শুরু করতে বলে। তারা নির্দেশ দেয়, ওই সংস্থায় যে ৪৯ একর জমি রয়েছে, সেই জমির মধ্যে যেগুলি এখন অতিরিক্ত বলে মনে হচ্ছে সেই অতিরিক্ত জমি বিক্রি করে তারা ফের উৎপাদন শুরু করুক। তবে যত দিন না অতিরিক্ত জমি বিক্রি হচ্ছে, ততদিন কেন্দ্র থেকে আর্থিক অনুদান ওই সংস্থাকে দেওয়া হবে বলেও জানায় তারা। |
চটকলের জমিতে এ ভাবেই তৈরি হয়েছে জলের ট্যাঙ্ক, পার্ক। ছবি: শৌভিক দে। |
চটকল সংস্থাটি জানাচ্ছে, বিআইএফআর-এর নির্দেশে তারা নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করতে উদ্যোগী হয়। কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ফের কাজ শুরু করতে গিয়ে তাঁরা দেখেন, তাঁদের কোনও অনুমতি না নিয়েই দক্ষিণ দমদম পুরসভা তাঁদের জমিতে জলের ট্যাঙ্ক নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। এমনকী, সেখানে তৈরি হয়ে গিয়েছে তৃণমূলের একটি কার্যালয়ও। চটকল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কেন দক্ষিণ দমদম পুরসভা তাঁদের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করে এই কাজ শুরু করেছে, এর কোনও সদুত্তর না পাওয়ায় তাঁরা হাইকোর্টে মামলা করেন। হাইকোর্ট দক্ষিণ দমদম পুরসভাকে নির্মাণ-কাজ থামিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। অভিযোগ, হাইকোর্টের নির্দেশ না মেনে নির্মাণকাজ চালিয়েই যাচ্ছে দক্ষিণ দমদম পুরসভা। বিষয়টি উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসককেও জানানো হয়েছে বলে জানান চটকল কর্তৃপক্ষ। জেলাশাসক পুরো বিষয়টি জেনে, চিঠি দিয়ে দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যানকে আদালতের নির্দেশ মানার অনুরোধ করেছেন।
যদিও দক্ষিণ দমদম পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সুজিত বসু বলেন, “সেখানে ব্যক্তিগত স্বার্থে বা বাণিজ্যিক কোনও কারণে কোনও নির্মাণ হয়নি। এলাকার মানুষদের উপকারে লাগবে বলেই ওই ফাঁকা জায়গায় জলের ট্যাঙ্কটি তৈরি করা হচ্ছে। তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়টি অনেক পুরনো। ওই জমিতে সিপিএমের আমলেও বহু দোকানপাট বসে গিয়েছিল।” সুজিতবাবুর অভিযোগ, “ওই চটকলেরও কয়েক কোটি টাকার ট্যাক্স বকেয়া রয়েছে। তা এখনও মেটানো হয়নি।”
ওই চটকল কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছেন, জনগণের সুবিধার জন্য সেখানে ট্যাঙ্ক নির্মাণের অনুমতি দিতে তাঁদের কোনও আপত্তি নেই। চটকল কতৃর্র্পক্ষের এক অংশের বক্তব্য, তাঁদের জমির যেটুকু অংশে ওই জলের ট্যাঙ্ক, পার্ক ও দলীয় কার্যালয় তৈরি হয়েছে, তার বাজার দর কয়েক কোটি টাকা। নতুন করে চটকলের কাজ শুরু করতে গেলে তাঁদের জমি বিক্রি করাও দরকার। কিন্তু পুরসভা তাদের সঙ্গে কোনও কথা না বলে, চুক্তি না করে ‘বেআইনি ভাবে’ কাজ শুরু করে দেওয়ায় রুগ্ণ সংস্থাটি ফের আর্থিক ক্ষতির সামনে এসে পড়েছে। |