শিক্ষক-ইস্তফা নিয়ে বৈঠক চান
প্রেসিডেন্সিতে বাড়তি বেতন অসম্ভব: ব্রাত্য
কের পর এক শিক্ষক প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে যাওয়ায় রাজ্যপালের মতোই উদ্বিগ্ন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। এতটাই যে, শিক্ষকদের এ ভাবে চলে যাওয়া আটকানোর উপায় খুঁজতে উপাচার্য মালবিকা সরকারের সঙ্গে বৈঠক করতে চান তিনি। তবে বেতনের ব্যাপারে যে পৃথক ভাবে কিছু করা সম্ভব নয়, সেটা পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
গত এক বছরে প্রেসিডেন্সির সাত জন শিক্ষক চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। তাঁদের কেউ বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছেন আশানুরূপ বেতন না-পেয়ে। কারও বা অভিযোগ, এখানে গবেষণার যথেষ্ট সুযোগ নেই, নেই উন্নত গবেষণাগার। ব্রাত্যবাবু মঙ্গলবার বলেন, “যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছেন, তাঁরা বেতন ইত্যাদির ব্যাপারে জেনেই এসেছেন। তাই (আর্থিক দিক থেকে) প্রত্যাশা পূরণ না-হওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। তা ছাড়া দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষকেরা বেতন পান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর নির্ধারিত বেতনক্রম অনুযায়ী। কোনও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য তার থেকে আলাদা কিছু করা সম্ভব নয়।”
শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, বেতনের প্রসঙ্গ সরিয়ে রেখে কী ভাবে প্রেসিডেন্সির উন্নয়ন ঘটানো যায়, কী ভাবে শিক্ষকদের চলে যাওয়া আটকানো যায়, সেই ব্যাপারে তিনি উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনায় বসতে আগ্রহী।
উপাচার্য মালবিকাদেবী বলেন, “যে-সাত শিক্ষক চলে গিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে তিন জন বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছেন বেতনের জন্য। বাকিরা ইস্তফা দিয়েছেন ব্যক্তিগত কারণে।” ওই শিক্ষকদের কারও অভিযোগ ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই। উপাচার্যও তা অস্বীকার করছেন না। তবে তিনি বলেন, “এখন যে-বেতনক্রম রয়েছে, তার থেকে টাকা বাড়ানোর প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। আমি বেশি চিন্তিত গবেষণাগার, ক্লাসরুম-সহ পরিকাঠামো উন্নয়ন নিয়েই। গবেষণা বা পড়ানোর ঠিক পরিবেশ না-থাকলে শিক্ষকেরা থাকবেন কেন?”
রাজ্যপাল তথা আচার্য এম কে নারায়ণনের সঙ্গে প্রেসিডেন্সি নিয়ে সোমবারেই কথা হয়েছে উপাচার্যের। কেন এত শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে যাচ্ছেন, উপাচার্যের কাছে তা জানতে চেয়েছিলেন আচার্য। মালবিকাদেবী এ দিন বলেন, “বেতনের বিষয়টি রাজ্যপাল জানেন। তাই এটা তাঁকে আর জানানোর প্রয়োজন হয়নি। আমি তাঁকে পরিকাঠামোর অভাবের বিষয়টি জানিয়েছি।” কয়েক জন শিক্ষক ছেড়ে দিলেও বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেশ কিছু শিক্ষক প্রেসিডেন্সিতে পড়াতে আসতে চান বলেও রাজ্যপালকে জানান উপাচার্য। শিক্ষামন্ত্রীও বলেন, “কয়েক জন শিক্ষক ছেড়ে গেলেও দেশ-বিদেশের অনেক ভাল শিক্ষক পড়ানোর জন্য প্রেসিডেন্সিতে আসতে চাইছেন।”
পদত্যাগীরা কী বলছেন?
প্রেসিডেন্সি থেকে ইস্তফা দেওয়া বিজ্ঞানের এক শিক্ষক এ দিন ঘনিষ্ঠ মহলে বলেন, “বিদেশে বিশ্ব মানের একটি প্রতিষ্ঠানে গবেষণা করছিলাম। প্রেসিডেন্সিতে পড়েছি। তাই এখানে আসার লোভ সামলাতে পারিনি। আমাকে বলা হয়েছিল, গবেষণার ভাল পরিকাঠামো পাব। কিন্তু কোথায় কী! গবেষণাগার তো দূরের কথা, ছ’মাসে বসার জায়গাটুকুও পাইনি। এই সময়ে আগের প্রতিষ্ঠানে একাধিক গবেষণাপত্র তৈরি করতে পারতাম।”
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, যে-প্রতিষ্ঠানকে বিশ্ব মানের করে তুলতে সরকার থেকে সংশ্লিষ্ট সকলেই উদ্যোগী হয়েছেন, সেই প্রেসিডেন্সির পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য চলতি আর্থিক বছরে কোনও টাকাই পায়নি তারা। অথচ জরুরি ভিত্তিতে বেকার বিল্ডিং-সহ বিশ্ববিদা্যলয়ের মূল ভবনের আমূল সংস্কার প্রয়োজন। সংস্কার দরকার বিজ্ঞানের প্রতিটি গবেষণাগারের, শ্রেণিকক্ষেরও। বহু বছরের পুরনো ভবনগুলির অনেক জায়গাতেই ছাদ থেকে চাঙড় খসে পড়ছে। গবেষণাগারগুলিরও অবস্থা তথৈবচ। শিক্ষকদের জন্য আলাদা আলাদা ঘর নেই। এক-একটি ঘরে বেশ কয়েক জন বসেন। কিন্তু যাঁরা পড়াশোনা করতে চান, তাঁদের বসার জন্য আলাদা করে ভাল ব্যবস্থা নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশের মতে, কর্তৃপক্ষ এই কারণেই বেশি চিন্তিত। তাই উপাচার্যও পরিকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর কথা বলতে চান। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, ভবন, গবেষণাগার ইত্যাদির আমূল সংস্কারের জন্য রাজ্য সরকারের কাছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু চলতি আর্থিক বছরে শিক্ষকদের বেতন ছাড়া রাজ্যের কাছ থেকে আর কোনও টাকা মেলেনি।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.