মুখ্যমন্ত্রীকে নিজেদের কথা জানাতে না-পেরে সোমবার ব্যথিত হয়েছিলেন কামদুনির মহিলারা। মঙ্গলবার মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিতে না-পেরে হতাশা উগরে দিলেন সরকারি মহিলা কর্মীরা!
রাজনৈতিক দলের আশ্রিত কর্মী সংগঠনের ব্যানারের নীচে দাঁড়িয়ে নিজেদের দাবি-দাওয়ার সমর্থনে মিছিল-বিক্ষোভ-ধর্না দেখতেই এত দিন অভ্যস্ত ছিল মহাকরণ। কিন্তু এ দিন কোনও ঝান্ডা ছাড়াই মহিলা-নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখা গেল সরকারের সদর দফতরে! শ’দুয়েক মহিলা কর্মী মহাকরণের মধ্যে মিছিল করে, স্লোগান দিয়ে, সভা করে নারী নির্যাতনের প্রতিবাদ করলেন। জানিয়ে দিলেন, সাসপেন্ড হতেও ভয় পান না তাঁরা।
এ দিন দুপুরে মহাকরণের চারতলায় পায়ে-পায়ে গড়াতে শুরু করে মিছিল। আওয়াজ ওঠে ‘অবিলম্বে মেয়েদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে,’ ‘বারাসত-সহ সর্বত্র অপরাধীদের শাস্তি দিয়ে দৃষ্টান্ত তৈরি করতে হবে।’ কারও হাতে দলীয় পতাকা নেই। সরকারি ফাইলের পিচবোর্ডের উপরে লাগানো সাদা কাগজে লেখা প্ল্যাকার্ড। মিছিল শেষে ওঁরা চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিতে। দোতলায় তালাবন্ধ লোহার গেটের ওপারে প্রায় দেড় ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখার পরে পুলিশ এসে সাত জনের নাম নিয়ে যায়। মিনিট পনেরো পরে ফিরে এসে জানায়, মুখ্যমন্ত্রী দেখা করবেন না। দু’জন গিয়ে স্মারকলিপি দিয়ে আসতে পারেন তাঁর অফিসে। |
এই বার ভাঙে ধৈর্যের বাঁধ। মুখ্যমন্ত্রীর ঘর থেকে পঞ্চাশ মিটার দূরে ভিড়ের মধ্যে থেকে চিৎকার ভেসে আসে, “মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হয়ে মহিলাদের ভয় পাচ্ছেন কেন? আমরা তো তাঁর-ই কর্মী। বাইরের কেউ নই।” বিক্ষোভের আঁচ ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। সমস্বরে আওয়াজ ওঠে, “আমরা আতঙ্কিত, বাইরে বেরোতে ভয় পাচ্ছি। বাড়ির অল্পবয়সী মেয়েদের বাইরে পাঠিয়ে চিন্তায় থাকছি। দু’পা হেঁটে এসে মুখ্যমন্ত্রী কেন আমাদের কথা শুনবেন না?” অনেকে বলে ওঠেন, “এর পর হয়তো আমাদের সবাইকে সিপিএম বলা হবে। চাইলে আমাদের সবার নাম লিখে নিন। সবাইকে সাসপেন্ড করুন।”
নিজেদের আর্থিক দাবিদাওয়ার বাইরে কেন এমন প্রতিবাদে সামিল হলেন সরকারি কর্মীরা? হাঁটতে হাঁটতেই এক জন জবাব দিলেন, “সরকারি কর্মী তো পরে। আগে আমি একটা মেয়ে। আমি নিজের আর আমার মতো আরও অনেক মেয়ের সম্মান সুরক্ষিত রাখার দাবি জানাতে এসেছি।” আর এক জন বলে উঠলেন, “মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চয়ই বুঝছেন, আমরা রাজনীতি করতে আসিনি।”
মিছিলে কোনও পুরুষ কর্মী ছিলেন না। তবে মনে মনে সমর্থন জানিয়েছেন অনেকেই। তাঁদেরই এক জন বললেন, “আমার বাড়িতেও দু’টো মেয়ে আছে। খুব চিন্তায় থাকি, জানেন!” |