গোদের উপর বিষফোড়া।
একেই বৃদ্ধির হার থমকে থাকায় চাহিদায় ভাটা। তার উপর এ বার টাকার দর তলানিতে ঠেকায় হাঁসফাঁস দশা বৈদ্যুতিন ভোগ্যপণ্য (কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স) সংস্থাগুলির। এতটাই যে, পরিস্থিতি সামাল দিতে চাহিদা আরও কমার ঝুঁকি নিয়েও দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে তারা।
ইতিমধ্যেই টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর, মাইক্রোওয়েভ, ওয়াশিং মেশিনের মতো গেরস্থালি পণ্যের (হোম অ্যাপ্লায়েন্স) দাম তিন থেকে পাঁচ শতাংশ বাড়িয়েছে এলজি ইলেকট্রনিক্স। এয়ার কন্ডিশনারের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্লু স্টার। পরিস্থিতি না-বদলালে তাদেরও এই একই পথে হাঁটতে হবে বলে স্পষ্ট জানাচ্ছে প্যানাসনিক-সহএকগুচ্ছ সংস্থা।
সংশ্লিষ্ট শিল্পের দাবি, এ দেশে যত ভোগ্যপণ্য বিক্রি হয়, তার অধিকাংশই আমদানি নির্ভর। কারণ, হয় তা পণ্য হিসেবেই বিদেশ থেকে আনা হয়। নইলে নিয়ে আসা হয় তার যন্ত্রাংশ (এই সংখ্যাই বেশি)। এখানকার কারখানায় যা জুড়ে (অ্যাসেম্বল) পণ্য তৈরি করে সংস্থাগুলি। কিন্তু গত দেড় মাসে ডলারের তুলনায় টাকার দর প্রায় ৮% পড়ে যাওয়ায়, এই আমদানির খরচ বেড়ে গিয়েছেবহু গুণ। আর সেই কারণেই নিদেনপক্ষে লোকসান এড়াতেক্রেতা টানতে হিমসিম খাওয়া এই বাজারেও জিনিসের দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে তারা।
|
টাকার দরে পতনের কারণে চলতি বছরে ইতিমধ্যেই বৈদ্যুতিন ভোগ্যপণ্যের দাম দু’বার বেড়েছে। এখন পরিস্থিতি সামাল দিতে তৃতীয় বারও তা না-বাড়িয়ে আর উপায় নেই বলে প্যানাসনিক ইন্ডিয়ার প্রধান মণীশ শর্মার দাবি। তাঁর কথায়, “আর মাত্র ৩০ দিনের মজুত ভাণ্ডার রয়েছে। এর মধ্যে পরিস্থিতি না-বদলালে দাম বাড়াতে বাধ্য হব। জিনিসের দাম বেড়ে যাবে প্রায় তিন শতাংশ।” উল্লেখ্য, এর আগেও টাকার দর পড়ে যাওয়ায় রেফ্রিজারেটর, ওয়াশিং মেশিন, ডিশ ওয়াশার ইত্যাদির দাম ৪% বেড়েছে। টেলিভিশনের দর বেড়েছে ২-৩%।
হায়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষও জানাচ্ছেন, জুলাইয়েই তিন থেকে পাঁচ শতাংশ হারে ফ্রিজ, টিভি, ওয়াশিং মেশিনের দাম বাড়ছে। এখনই দাম না-বাড়ালেও, পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে স্যামসাং ইন্ডিয়া।
আমদানি খরচের এই বিপুল বৃদ্ধি সামাল দিতে অবশ্য ইতিমধ্যেই দাম বাড়িয়েছে এলজি। ভারতে সংস্থার প্রধান ওয়াই ভি বর্মা বলেন, “হোম অ্যাপ্লায়েন্সের দাম বাড়ানো হয়েছে তিন থেকে পাঁচ শতাংশ।” তাঁর দাবি, “যতটা সম্ভব খরচ বাঁচিয়ে দাম ধরা হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও টাকার দর যে-ভাবে পড়ছে, তাতে পণ্যের দাম না-বাড়িয়ে উপায় নেই।”
জুলাই থেকেই বিভিন্ন মডেলের এসি-র দাম ২.৫-৭.৫ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এয়ার কন্ডিশনার নির্মাতা ব্লু স্টার-ও। দাম বাড়তে পারে মোবাইল ফোনেরও। লাভা, মাইক্রোম্যাক্সের মতো দেশি মোবাইল নির্মাতাদের আশঙ্কা, এ ভাবে টাকার বিনিময় মূল্য পড়তে থাকলে, আমদানির খরচ সামাল দিতে দাম বাড়াতে বাধ্য হবে তারা। |