পতনের কবল থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না টাকা। ডলারে টাকার দাম মঙ্গলবারও নতুন নজির গড়ে এক ধাক্কায় পড়েছে ১.৫ শতাংশ বা ৯০ পয়সা। বিশ্ব জুড়েই ডলার চাঙ্গা হয়ে ওঠার ফলে দিনের শেষে প্রতি ডলারের দাম দাঁড়ায় ৫৮.৭৭ টাকা, যা ভারতীয় মুদ্রার ইতিহাসে এ পর্যন্ত টাকার সবচেয়ে কম দাম। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা টাকা ৫৯-এরও নীচে নামবে শীঘ্রই।
টাকার পতন রুখতে এ দিন অবশ্য বাজারে ডলার বিক্রির মাধ্যমে হস্তক্ষেপ করেনি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। সাধারণ ভাবে বৈদেশিক মুদ্রার বাজারও এ ধরনের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে। তাদের মতে, এতে সাময়িক ভাবে টাকার পতনে রাশ টানা গেলেও শেষ পর্যন্ত কাজের কাজ কিছু হয় না। |
পাশাপাশি, শেয়ার বাজারের মন্দা ভাবও টেনে নামাচ্ছে টাকাকে। পর পর দু’দিন বাড়ার পর মঙ্গলবার সেনসেক্স পড়েছে ১০৩ পয়েন্ট। বাজার বন্ধের সময়ে মুম্বই বাজারের এই সূচক ছিল ১৯,২২৩.২৮ অঙ্কে। এ দিন বেশি পড়েছে ব্যাঙ্কিং, ভোগ্যপণ্য সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, মূলধনী পণ্য এবং বিদ্যুৎ সংস্থার শেয়ার দর। বাজার সূত্র জানিয়েছে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গত কাল সুদের হার না-কমানোর কারণেই এই সব সংস্থার শেয়ার দর পড়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, টাকার এই তলিয়ে যাওয়ার পিছনে প্রধানত যে-সমস্ত কারণ কাজ করছে, সেগুলি হল
• আগামী কালের বৈঠকে মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্কের আর্থিক ত্রাণ প্রকল্প তুলে নেওয়ার সম্ভাবনা
• ব্যাঙ্কের তরফে ডলারের বিপুল চাহিদা
• আমদানিকারীদের ডলারের চাহিদা বৃদ্ধি
• বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলির ভারতের শেয়ার বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া
• চলতি খাতে লেনদেনে বিপুল পরিমাণ ঘাটতি নিয়ে প্রবল উদ্বেগ
মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ তার আগামী কালের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে আর্থিক ত্রাণ প্রকল্প তুলে নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। পাশাপাশি সিদ্ধান্ত নিতে পারে সুদের হার বাড়ানোরও। আর সেই কারণেই অনিশ্চিত বৈদেশিক মুদ্রার আন্তর্জাতিক বাজার। যার প্রভাব স্বাভাবিক ভাবেই এড়াতে পারছে না ভারতীয় বাজার। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, আমেরিকায় সুদের হার বাড়লে বিদেশি আথিক সংস্থাগুলি মার্কিন মুলুকে বিনিয়োগ করতেই আগ্রহী হবে। সেই কারণেই আগেভাগে তারা ডলার কিনতে শুরু করে দিয়েছে বলে লেনদেনকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে।
আবার পেট্রোপণ্য ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আমদানির জন্য খরচ বাড়ার কারণেও ডলারের চাহিদা বাড়ছে। এর সঙ্গে রয়েছে সোনা আমদানির খরচ। যা বেশ কিছু দিন ধরেই ইন্ধন জোগাচ্ছে টাকার দাম পড়ার ক্ষেত্রে।
এ দিকে, টাকার দামের ওঠা-পড়া নিয়ে অনিশ্চিতায় গত দু’দিনে বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলি বিক্রি করেছে ৭৫০ কোটি টাকার শেয়ার। পাশাপাশি, মে মাসের শেষের দিক থেকে তারা প্রায় ৫০০ কোটি ডলারের ঋণপত্রও বিক্রি করেছে। কারণ, টাকার পড়তি দামের জেরে অলাভজনক হয়ে পড়ছে ঋণপত্র।
প্রসঙ্গত, মে মাসে রফতানি ১.১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২৪৫১ কোটি ডলার। অন্য দিকে আমদানি ৬.৯৯ শতাংশ বেড়ে ছুঁয়েছে ৪৪৬৫ কোটি ডলার। ফলে পণ্য ও পরিষেবা বাণিজ্যে ঘাটতি সাত মাসে সর্বোচ্চ অঙ্কে পৌঁছে দাঁড়িয়েছে ২০১০ কোটি ডলারে। সোমবার প্রকাশিত বৈদেশিক বাণিজ্য সংক্রান্ত এই পরিসংখ্যান চলতি খাতে লেনদেনে ঘাটতি নিয়ে উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। যে কারণে, ডলার কিনে রেখে বিদেশি লগ্নিকারীরা ঝুঁকির বিরুদ্ধে নিজেদের সুরক্ষিত রাখছেন।
|