বাড়ির অদূরেই একটি পুকুর থেকে উদ্ধার হল এক বধূ ও তাঁর শিশুকন্যার দেহ। মঙ্গলবার সকালে নলহাটি থানার সিমলান্দি গ্রামের ওই ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম শকুন্তলা পাল (২২) ও তাঁর দু’ বছরের মেয়ে মনীষা পাল। বাড়ি ওই গ্রামেরই পাল পাড়ায়। এই ঘটনায় শকুন্তলাদেবীর বাবা নলহাটি থানায় জামাই, শ্বশুর ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ শকুন্তলাদেবীর শাশুড়ি অনিমা পালকে গ্রেফতার করলেও অন্য অভিযুক্তেরা এখনও পলাতক।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর চারেক আগে নলহাটির আটগ্রামের কার্তিক পালের মেয়ে শকুন্তলার সঙ্গে সিমলান্দির বাসুদেব পালের বিয়ে হয়েছিল। মনীষা তাঁদের একমাত্র সন্তান। কার্তিকবাবুর দাবি, “মাটির হাঁড়ি ও অন্যান্য জিনিস তৈরি করতে পারত না বলে শ্বশুরবাড়ির লোকজন মেয়ের উপরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন। জামাই ও শাশুড়ি মেয়েকে প্রায় দিনই মারধর করতেন। মেয়ে আমাকে সে কথা জানিয়েওছিল।”
শকুন্তলাদেবীর বাবার দাবি, এ দিন সকাল থেকেই শ্বশুরবাড়ির লোকজন মেয়ের বিষয়ে তাঁকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। তা থেকেই তাঁর সন্দেহ দানা পাকে। কার্তিকবাবুর দাবি, “এ দিন সকাল ৬টা নাগাদ বেয়াই উত্তম পাল আমাকে ফোন করে বলেন, ‘বৌমাকে সকালের বাসে চাপিয়ে দিলাম। আপনি নলহাটিতে নামিয়ে নেবেন।’ ওই কথা শুনে আমি নলহাটি কলেজ মোড় বাসস্ট্যান্ডে মেয়ের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। কিন্তু বহু ক্ষণ অপেক্ষা করার পরও মেয়েকে আসতে দেখিনি।” সে কথা জানিয়ে তিনি উত্তমবাবুকে ফোন করেন। উত্তমবাবু তাঁকে আরও কিছু ক্ষণ সেখানে দাঁড়াতে বলেন। কার্তিকবাবুর দাবি, “মেয়ের জন্য অপেক্ষা করতে করতেই হঠাত্ দেখি বেয়াই মশাই নিজেই সাইকেল চালিয়ে এ দিকে আসছেন। তাঁকে মেয়ের খোঁজ করতে তিনি এ বার বলেন, ‘বৌমা আর নাতনির খোঁজ আমি নিজেই করছি।’ সেই কথা জানিয়ে তিনি আমাকে অবাক করে দিয়ে ফের নিজের বাড়ির দিকে রওনা দেন।” এর কিছুক্ষণ পরে সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ সিমলান্দি গ্রামেরই এক বাসিন্দা তাঁকে ফোন করে পুকুর থেকে মেয়ে ও নাতনির দেহ উদ্ধারের কথা জানান বলে কার্তিকবাবু জানিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, শ্বশুরবাড়ির লোকজনই মেয়ে ও নাতনিকে শ্বাসরোধ করে খুন করে পুকুরে ফেলে দিয়েছে।
যদিও ফোনে যোগাযোগ করা হলে মৃত বধূরর শ্বশুর উত্তম পাল বলছেন, “জামাইষষ্ঠীর পরের দিন শকুন্তলার বাপের বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শরীর খারাপ থাকায় যেতে পারেনি। সোমবার দুপুরে বৌমা রাগ করে ভাত খায়নি। রাতে অবশ্য অনেক বুঝিয়ে তাঁকে খাওয়ানো হয়েছিল। মঙ্গলবার সকালে উঠে ছেলে খেয়াল করে বৌমা ও নাতনি বিছানায় নেই।” তাঁরা দু’জনের খোঁজ শুরু করেন। তাঁর পাল্টা দাবি, “কোথাও দেখতে না পেয়ে বেয়াই মশাইকে ফোন করে বলি বৌমা, নাতনিকে পাওয়া যাচ্ছে না। নলহাটিতে ভোর ছ’টার বাসটা তাঁকে দেখতে বলি। যদি বৌমা বাপের যাচ্ছে, তাই ভেবে।” কার্তিকবাবুর দাবি তিনি মানতে চাননি। এ দিকে পুলিশ জানিয়েছে, দেহ দু’টি ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। |