নেহাত বয়স হয়নি। না হলে ছ’বছর আর এক বছরের নাতনিকেও না কি পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল প্রার্থী করে দিতেন আকবর আলমএমনই ফিসফাস হচ্ছে দলের অন্দরে। রামপুরহাট ১ ব্লকের ২০ আসনের আয়াষ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন সংসদে আকবরের পরিবার থেকেই প্রার্থী ছ’জন। তৃণমূলের আয়াষ অঞ্চল সভাপতি আকবর, তাঁর স্ত্রী জামিলা খাতুন, মেয়ে আসফিয়া খাতুন ও জামাই ইউসুফ আলি খান। আকবরের সম্পর্কিত ভাই রেজাউল করিম এবং তাঁর স্ত্রী হাবিবা খাতুনও একই পঞ্চায়েতে একই দলের প্রার্থী।
গত বার ওই পঞ্চায়েতে ১৭টি আসন ছিল। তৃণমূলেরই দখলে ছিল ১০টি। ছ’টি বামফ্রন্টের ও একটি কংগ্রেসের। আকবর, তাঁর স্ত্রী এবং ভ্রাতৃবধূ পঞ্চায়েতের বিদায়ী সদস্য। ভাই, রেজাউল করিম উপপ্রধান। তৃণমূলের শুরু থেকে দলের সঙ্গে থাকা আকবর পঞ্চায়েত সদস্য ১৯৯৮ থেকে। বাড়ি দাদপুর গ্রামে। ওই গ্রামের তিনটি আসনে এ বার তাঁর স্ত্রী, মেয়ে এবং ভ্রাতৃবধূ প্রার্থী। |
মেয়ে-জামাই নিয়ে সস্ত্রীক আকবর আলম।—নিজস্ব চিত্র |
একমাত্র মেয়ে আসফিয়া বিয়ের পরে স্বামী-মেয়েদের নিয়ে বাবার কাছেই থাকেন। আসফিয়া বলেন, “ছোট থেকেই দেখেছি, বাবা ও মা পঞ্চায়েতের সদস্য। তাতেই আমিও অনুপ্রাণিত। আমিও এলাকার জন্য কিছু করতে চাই।” আসফিয়ার স্বামী ইউসুফ আলি খানও এ বার আয়াষ পঞ্চায়েতে তৃণমূল প্রার্থী। মৃদুভাষী ইউসুফও বলছেন, “বিয়ের পর থেকে শ্বশুরবাড়িতে রয়েছি। শ্বশুরমশাইয়ের কাছে আমি ছেলেরই মতো। ওঁর নির্দেশেই প্রার্থী হয়েছি।”
গ্রাম পঞ্চায়েতের ২০টি আসনেই তৃণমূল ও বামফ্রন্ট প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। কংগ্রেসও লড়ছে দু’টি আসনে। ভোট প্রচারে ‘পরিবারতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র’ করে বিরোধীরা চেঁচানোর মতলবে থাকলেও, আকবর তা গায়েই মাখছেন না। বলছেন, “এলাকায় দলের অন্য প্রার্থীদের নিয়ে নানা মহল আপত্তি তুলছিল। এই পরিস্থিতিতে এলাকার তৃণমূল সমর্থকেরা দাবি তোলেন, আমার পরিবারের সবাইকে মনোনয়ন দেওয়া হোক। তাই আমি আর আপত্তি করিনি।” তাঁর ভাই রেজাউল করিম বলেছেন, “আমরা দু’ভাই-দু’বউ তো পুরনো সদস্য হিসেবেই এ বারেও টিকিট পেয়েছি। কিন্তু আসফিয়া এবং ইউসুফকে প্রার্থী করা ছাড়া, উপায় ছিল না।”
এলাকায় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের একটা বড় অংশ অবশ্য অন্য কথা বলছেন। স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য (এ বার অবশ্য আয়াষ পঞ্চায়েতেই দলের প্রার্থী) বৈদ্যনাথ মণ্ডলের কথায়, “আমরা অন্য প্রার্থী চেয়েছিলাম। বড্ড বেশি পরিবার-পরিবার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ব্লক নেতৃত্ব কথা শোনেননি।”
ব্লক তৃণমূল সভাপতি আনারুল হোসেন বলেন, “ওই দু’টো আসন মিলিয়ে জনা আটেকের নাম উঠে আসছিল। অঞ্চল থেকে দু’টি খসড়ার পরে যে চূড়ান্ত তালিকা পাঠিয়েছে, তাতেই অনুমোদন দিয়েছি।” এলাকার বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “এটা পরিবারতন্ত্র বলব না। আকবর আলম দলের পুরনো কর্মী। তিনি এলাকার উন্নয়ন করবেন, এই আশায় এলাকাবাসী তাঁর পরিবারের প্রার্থীদের মেনে নিয়েছেন।” “প্রার্থী না পেয়ে একই পরিবার থেকে ছ’জনকে টিকিট দিয়েছে তৃণমূল। এটা লজ্জার ব্যাপার”, বিঁধছেন বীরভূম জেলা কংগ্রেস সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি। দাদপুর গ্রামেরই বাসিন্দা তথা ডিওয়াইএফ-এর জোনাল সম্পাদক নজরুল হোদার কটাক্ষ, “ভোটে জিতলে আকবর সাহেবদের বোধ হয় বৈঠক করার জন্য কষ্ট করে পঞ্চায়েত অফিসে যাওয়ার প্রয়োজনও বোধ হয় হবে না। এক-তৃতীয়াংশ সদস্য তো বাড়িতেই। কোরাম ওখানেই হয়ে যাবে।” |