দেওয়ালে ‘খুনি’ সিপিএমের শাস্তি চেয়েও জোটে নকশাল
লীয় নেতা খুনে সিপিএমের লোকজনের শাস্তির দাবিতে লেখা দেওয়াল এখনও জ্বলজ্বল করছে। মাত্র দু’বছর আগে বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল তারা। পাণ্ডবেশ্বরে সেই পিসিসি-সিপিআই (এমএল)-ই এ বার পঞ্চায়েত ভোটে জোট বেঁধেছে সিপিএমের সঙ্গে। নকশাল নেতাদের দাবি, জোট নয়, পরিস্থিতির নিরিখে আসন সমঝোতা করেছেন তাঁরা।
কেন্দ্রা পঞ্চায়েতে এ বার মোট আসন ১৮টি। তার মধ্যে চারটিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে চলেছেন তৃণমূল প্রার্থীরা। বাকি ১৪টি আসনের মধ্যে পিসিসি-সিপিআই (এমএল) এবং সিপিএম ছ’টি করে ও সিপিআই একটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। এই সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের দাবি, শাসকপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করতেই আসন সমঝোতা হয়েছে। অন্য একটি আসনে রয়েছেন কংগ্রেসের প্রার্থী।
কেন্দায় সিপিআই (এমএল)-এর দেওয়াল লিখন।—নিজস্ব চিত্র।
সিপিএমের সঙ্গে নকশালের জোট অবশ্য পাণ্ডবেশ্বরের বাসিন্দারা আগেও দেখেছেন। ১৯৮৩ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত টানা তিন দফায় বাম ও নকশাল হাত মিলিয়ে পঞ্চায়েতের ক্ষমতায় ছিল। প্রতি বারই প্রধান হন পিসিসি-সিপিআই (এমএল)-এর সদস্য। উপপ্রধান ছিলেন সিপিআই-এর। দু’দলের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে শুরু করে ১৯৯৮ থেকে। সে বার ভোটে পিসিসি-সিপিআই(এমএল) এবং তৃণমূল মিলে পঞ্চায়েতের অর্ধেক আসন দখল করে। টসে জিতে পঞ্চায়েত পরিচালনার ভার পায় তারাই। মাস ছয়েক পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন এক মাত্র বিজেপি সদস্যও।
২০০৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটের আগে সিপিএম এবং নকশালের মধ্যে বিবাদ চরমে ওঠে। সে বছর ৮ জানুয়ারি বিকেলে খুন হন নকশাল নেতা গণেশ পাল। তাঁর পরিবারের তরফে অভিযোগ করা হয়, ছত্তিশগণ্ডায় সিপিআই(এমএল) লালঝাণ্ডার ছত্তিশগণ্ডা অফিসে বৈঠকের জন্য গণেশবাবু বাড়ি থেকে বেরোন। কার্যালয়ের সামনে থেকে গণেশবাবুকে টেনে নিয়ে গিয়ে খুন করে সিপিএমের ১৪ জন নেতা-কর্মী মিলে, অভিযোগ করেছিলেন তাঁর ভাই হারাধন পাল। ওই ঘটনার পরপরই গণেশ-হত্যায় অভিযুক্ত এক সিপিএম নেতার দুই ভাইকে খুন করে অজয়ের চরে দেহ পুঁতে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে নকশালদের বিরুদ্ধে। রাতে সিপিএমের চার জন ও নকশালদের ৫৮ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এর পরে ২০০৩-এ কেন্দ্রা পঞ্চায়েতে ক্ষমতা দখল করে বামফ্রন্ট। ২০০৮ সালেও তারা ক্ষমতায় ধরে রাখে। সে বার অন্য কোনও দল ব্লক অফিসে গিয়ে মনোনয়ন জমা দিতে পারেনি। মহকুমাশাসকের অফিসে গিয়ে ছ’জন নকশাল প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেন। তবে ভোটে সব আসনেই জেতেন বাম প্রার্থীরা। নকশালেরা সন্ত্রাস ও ছাপ্পা ভোটের অভিযোগে সরব হয়। ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে হরিপুরে খুন হন গণেশবাবুর ভাই, নকশাল নেতা সুনীল পাল। সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগ ওঠে। ২০১১ সালে বিধানসভা ভোটেও তৃণমূলের সঙ্গে জোট বাঁধে পিসিসি-সিপিআই (এমএল)। কিন্তু হাওয়া ঘুরতে থাকে রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকেই। নানা ব্যাপারে তৃণমূলের পাণ্ডবেশ্বর ব্লক সভাপতি নরেন চক্রবর্তী গোষ্ঠীর সঙ্গে নকশালদের দূরত্ব বাড়ে। শেষে এ বার পঞ্চায়েত ভোটের আগে তারা ফের গাঁটছড়া বাঁধে বামেদের সঙ্গে।
গণেশ পালের স্ত্রী করুণাময়ী পাল অবশ্য বলেন, “এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না।” পিসিসি সিপিআই (এমএল)-এর পাণ্ডবেশ্বর লোকাল সম্পাদক সাধন দাসের দাবি, “ওই সব খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তি অবশ্যই চাই। সন্ত্রাসের জেরে এ বার সব আসনে প্রার্থী দেওয়া যায়নি। পরিস্থিতির নিরিখে সিপিএম এবং সিপিআইয়ের সঙ্গে আমরা আসন সমঝোতা করেছি। তবে এটিকে জোট বলা যাবে না।” সিপিএমের দামোদর-অজয় জোনাল সম্পাদক তুফান মণ্ডল অবশ্য সাফ বলেন, “যে মামলা চলছে তার ফয়সালা তো আদালতেই হবে। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি বিচার করে নকশালদের সঙ্গে আমাদের জোট হয়েছে।” জোট প্রসঙ্গ এড়িয়ে কংগ্রেসের পাণ্ডবেশ্বর ব্লক সভাপতি গোপীনাথ নাগের বক্তব্য, “সাংগঠনিক সমস্যা ও সন্ত্রাস উপেক্ষা করে যে ক’টিতে পেরেছি প্রার্থী দিয়েছি।”
তৃণমূলের ব্লক সভাপতি নরেন চক্রবর্তী বলেন, “সিপিএমের অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে নকশালদের দেওয়াল লিখন এখনও এলাকায় দেখা যাচ্ছে। এরই মধ্যে ওরা সিপিএমের সঙ্গে হাত মেলাল। মানুষ সবই বুঝছেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.