মগনলালকে ছাড়া কিন্তু ফেলুদার চলবে না
চারিদিকটা দেখেছেন একবারও।
আমি তো দেখছি।
এই তো সে দিন হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলাম। “লাই ডাউন মিস্টার দত্ত,” একজন প্রায় ধমকের সুরে বললেন। সব টেস্ট করে গিয়ে তাঁর নামটা জিজ্ঞেস করতেই বললেন, “ডা. অগ্রবাল।”
সে দিন হাজির হয়েছিলাম সামপ্লেস এলস-এ গান গাইতে। এক মেয়ে ‘অ্যানি’স সং’ গাইবার রিকোয়েস্ট করল। নাম জিজ্ঞেস করতে বলল, “অঙ্কিতা বনশল।”
সে দিন খেতে গিয়েছিলাম এক রেস্তোরাঁয়। জাস্ট বিয়ারটাতে একটা চুমুক দিয়েছি, কানে ভেসে এল পাশের টেবিলে বসা একদল ছেলের গলা। “তুই বাইরে তো চিকেন খাস, বাড়িতেও খা না বাবা।”
দেখলাম একদল বাঙালি ছেলে তাদের বন্ধুকে বাড়িতে চিকেন খাওয়ার জন্য এনকারেজ করছে। সেই গোবেচারা, একা পড়ে যাওয়া ছেলেটির নাম জিজ্ঞেস করাতে বলল, “আশুতোষ গোয়েন্কা।”
বলছি, আমাদের শহরটা কতটা বদলে গিয়েছে দেখুন।
অগ্রবাল, গোয়েন্কা, বনশলরা আজকে রায়, বন্দ্যোপাধ্যায়, চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার আমাদের এই প্রিয় শহরে।
বাঙালি আর মারোয়াড়ি।
‘বংস’ আর ‘মারুজ’।
আমরা বলছি বটে মিলেমিশে সব একাকার হয়ে গিয়েছে, কিন্তু প্রায় দেড়শ’ বছর আগে রাজস্থান থেকে কলকাতায় যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের সঙ্গে আমাদের বাঙালিদের আজও একটা দুষ্টু-মিষ্টি লাভ-হেট সম্পর্ক।
দুই কমিউনিটি সর্বক্ষণ পাশাপাশি থাকছে, খাচ্ছে, কিন্তু একটা টম অ্যান্ড জেরি এলিমেন্ট আছে আমাদের।
ওদেরও আমাদের ছাড়া চলে না। আমাদেরও তাই।
এই পুরো ব্যাপারটাই আমার কাছে অনেক দিন ধরে ভীষণ ফ্যাসিনেটিং। তাই এই বিষয়ের ওপরই পরের ছবি বানালাম ‘গণেশ টকিজ’ যা পরশু দিন মুক্তি পাচ্ছে। কিন্তু তার আগে অন্য কথা।
গানের মানুষ তো আমি বহু দিনের। তা হলে গান দিয়েই শুরু করি।
এইচএমভি-টা কে কিনল? সেই রমাবাবু। রমাপ্রসাদ গোয়েন্কা। এত বাঙালি গায়ক। এত সুরকার। আমাদের সবাইকে কিন্তু ইনডায়রেক্টলি এমপ্লয় করেছিল আরপিজি। ওঁর জন্যই তো এত দিন আমরা নিশ্চিন্তে গান-বাজনা করতে পেরেছি। হ্যাঁ, আজকে অন্য অনেক কোম্পানি আছে, কিন্তু সেই গ্রামাফোন কোম্পানি যে ভাবে আমাদের গানবাজনার খেয়াল রেখেছে, সে ভাবে আর কে রেখেছে বলুন!
‘গণেশ টকিজ’ ছবির একটি দৃশ্যে রাইমা সেন, চন্দন রায় স্যন্যাল
গান তো হল। তা হলে একটু সিনেমার দিকে ফিরি। আর ডি বনশল-কে মনে আছে?
মানিকবাবুর কতগুলো ছবি প্রোডিউস করছেন ভাবুন। তাও যদি বলেন, এটা তো বহু দিন আগের কথা, তা হলে আজকের টলিউডের দিকে দেখুন।
মণি-শ্রীকান্ত ছাড়া কি আজকের বাংলা ছবি ভাবা যায়?
আমরা বাঙালিরাও যে ওঁদের ভালবাসি না তা নয়। আজকে আমার ছেলে নীলের (‘গণেশ টকিজ’য়ের সুরকার ও) কত মারোয়াড়ি বন্ধু। কিন্তু বাঙালির কিছু স্টিরিওটাইপ ধারণা থেকে গিয়েছে মাড়োয়ারিদের সম্পর্কে। আমরা আজও মনে করি মারোয়াড়ি মানেই বড় বাজারে গদির ওপর বসে ‘বেওসা’ সামলাবে। আর আমরা? আমরা করব কালচার, আঁতলামি।
এ সব ধ্যান ধারণা নিয়েই ‘গণেশ টকিজ’ ছবিটা। এখানে চন্দন (রায় সান্যাল) একটি মারোয়াড়ি ছেলে, রাইমা একজন বাঙালি মেয়ে। তাদের কালচারাল ডিফারেন্স, তাদের পরিবারে একে অপরের প্রতি কিছু ধারণা, এটাই মূল ছবির বিষয়বস্তু।
এ ছবি বানাতে গিয়ে অনেক কিছুই রিয়েলাইজ করলাম। উপলব্ধি করলাম, আমাদের একে অপরের জন্য বানানো এই স্টিরিওটাইপগুলো কত মজার।
আজও আমাদের কাছে মারোয়াড়ি ‘আমার’ বলে না, ‘হামার’ বলে। আজও মনে করি মারোয়াড়িরা শুধু ব্যবসা করে আর আমরা পড়াশোনা। অল ইন্ডিয়া পরীক্ষাগুলোর মেরিট লিস্টে বনশল, ঝাওয়ারদের নাম দেখে মাছভাত খাওয়া বাঙালিদের চোখ কপালে ওঠে। আজও মারোয়াড়ি আর পানপরাগ আমাদের কাছে সমার্থক শব্দ।
ওরাও কিন্তু বাঙালিদের একই রকম ইমেজ বানিয়ে রেখেছে। ওদের কাছে বাঙালি মানেই সফ্ট, বাঙালি মানেই ব্যবসা করতে পারে না, বাঙালি মানেই কালচার-টালচার করে। ব্যস...
দুটো স্টিরিওটাইপে কিছু সত্যতা থাকলেও অনেক ধারণাই কিন্তু আজকে ধুয়ে মুছে সাফ।
সে দিন টিভিতে ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ দেখছিলাম। দেখতে দেখতে ভাবলাম সবচেয়ে বিখ্যাত বাঙালি মারোয়াড়ি-জুটি অবশ্যই ফেলুদা আর মগনলাল মেঘরাজ। সব সময়ই ফেলু মনে করে এসেছে তার সব চেয়ে ধুরন্ধর প্রতিপক্ষের নাম মগনলাল। সেখানেও ‘বং’ ভার্সেস ‘মারু’।
আবার ফিরি ছবির প্রসঙ্গে।
‘গণেশ টকিজ’ ছবির ব্যাকড্রপে রয়েছে একটি বিয়েবাড়ি। মারোয়াড়ি আর বাঙালির। সেই বিয়েবাড়ির নানা স্টিরিওটাইপ, মজার ঘটনা, খুনসুটি সবই রয়েছে ছবিতে।
আমার আজও মনে আছে, আমার বাবা কিন্তু সারাজীবন মারোয়াড়িদের ‘মাউরা’ বলে এসেছে। নীল অবস্য তা বলে না।
নীলের কলকাতায় ওরা ‘মারুস’। আমরা ‘বংস্’।
আজকে আমরা ডাল-বাটি-চুরমা খাচ্ছি, ওরা শুক্তো।
কলকাতা শহরে এ যেন এক অন্য আমরা-ওরা।
টম অ্যান্ড জেরি।
‘বংস’ আর ‘মারুজ’।

মারোয়াড়ি বাঙালি
ভাল
অলস নয়, কৃতজ্ঞতাবোধ, পেটে যা মুখে তাই

খারাপ
খাদ্যরসিক নয়, পয়সার প্রতি প্রাধান্য, কৌতুকবোধের অভাব
চাপমুক্ত থাকতে বলুন। সাধ্যমতো সাহায্য করার আশ্বাস তাকে দিন।
ভাল
কৌতুকবোধ, খাদ্যরসিক, বেড়াতে যাওয়া

খারাপ
অলস, হিংসুটে,
পিএনপিসি



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.