চলো অভিনয় শিখি
প্রায় তিন মাস ডিনো মোরিয়া নিখোঁজ মুম্বই থেকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল তিনি ঘাপটি মেরে দিল্লিতে বসে ছিলেন। না, গা ঢাকা দিয়ে নয়। কারণটা একেবারে আলাদা। ডিনো অভিনয় শিখতে দিল্লি ছুটে গিয়েছেন। তিন মাস ধরে ওয়ার্কশপ করছেন দিল্লিতে। এই তো গত সোমবার ফিরে গিয়েছেন মুম্বইতে। ভুল করবেন যদি মনে করে থাকেন যে এটা শুধু মাত্র ডিনোর খামখেয়ালিপনা। বলিউডের আরও অনেক তারকা রয়েছেন, যাঁরা আজকাল নাটকের ওয়ার্কশপ করছেন। তা সে ছবির প্রয়োজনে হোক বা নিজের খুশিতে। এই তালিকায় আছেন ইমরান খান, আয়ুষ্মান খুরানা, কুণাল কপূর, কল্কি কোয়েচলিন, হুমা কুরেশি প্রমুখ।
‘ভিকি ডোনর’ ছবিটি করার আগেই আয়ুষ্মান দিল্লিতে ভর্তি হয়েছিলেন এন কে শর্মার ওয়ার্কশপে। বলিউডে অভিনয় করার আগে আয়ুষ্মান ছিলেন ভিজে। অভিনয়ের খুঁটিনাটি শিখে তার পর শ্যুটিং করতে নেমেছিলেন ‘ভিকি ডোনর’-এ। আর ফল? সেটা পরিচালক সুজিত সরকার ভালই বুঝতে পেরেছিলেন সেটে। ‘‘তাই এখন আমি কনট্র্যাক্টেই লিখে দিই যে অভিনেতাদের ওয়ার্কশপ করতেই হবে আমার ছবি করতে গেলে। ওয়ার্কশপ না হলেও আমার সঙ্গে রিহার্সাল করাটা একান্ত জরুরি,” বলছেন সুজিত।
নতুন অভিনেতাদের ক্ষেত্রে না হয় ওয়াকর্শপ করাটা এক রকম। কিন্তু ডিনো, ইমরান? এঁরা তো ওয়ার্কশপ করছেন সিনেমায় আসার অনেক পরে। তত দিনে এঁরা বেশ জনপ্রিয়। শুধু অভিনয় নয়, ডিনো তো আবার সানি লিওনের ‘জিসম ২’ প্রযোজনাও করেছেন। ইমরান ‘জানে তু ইয়া জানে না’-র হিটের পরেও ফিরে গিয়েছেন ওয়ার্কশপ করতে। ‘মতরু কা বিজলি কা মন ডোলা’ ছবির জন্য দিল্লিতে ওয়াকর্শপ করেছেন তিনি।

আয়ুষ্মান খুরানা

কুণাল কপূর

হুমা কুরেশি
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে ইগোতে লাগেনি? যাই হোক বলিউডে একটা নামডাক তো আছে। তার পরেও আবার অভিনয় শিখতে যাওয়া? অসুবিধে হয়নি? ডিনো বলছেন, “না একদম নয়। আমি ওই সব ফালতু ইগোর ধার ধারিনি যখন ঠিক করেছিলাম যে অ্যাক্টিংটা শিখতে যাব। ওয়ার্কশপ করে বুঝলাম যে অভিনয়ের অনেক কিছুই আমার কাছে না-জানা রয়ে গিয়েছিল। ইগো নিয়ে বসে থাকলে তো আমি অনেক কিছুই শিখতে পারতাম না। তাই বেশি না ভেবে আমি এই ক্লাসে জয়েন করে যাই। আর তিন মাস দিল্লিতে থেকে ক্লাস করে আমার নিজের খুব ভাল লাগছে। মনে হচ্ছে অভিনেতা হিসেবে নিজেকে নতুন ভাবে চিনলাম।”
কিছু মাস আগে ‘লাইফ অব পাই’ খ্যাত আদিল হোসেনের কাছে একটা অদ্ভুত অনুরোধ আসে। তিনি যেন এক অভিনেত্রীকে অভিনয়ের ট্রেনিং দেন। বলিউডে সেই অভিনেত্রী বেশ ভালই কাজ করছেন। ফিল্ম মহলেও তাঁর যথেষ্ট পরিচিতি। তবু পরিচালক চেয়েছিলেন যেন আদিল তাঁকে অভিনয় শেখান। তবে আদিল অনুরোধটি রাখতে পারেননি। তাঁর পরিচিত এক থিয়েটার বিশেষজ্ঞর কাছে এই অভিনেত্রীকে পাঠিয়ে দেন। শুরু হয় কুড়ি দিনের রেওয়াজ, দিনে ছ’ঘণ্টা।
তবে অন্য এক পরিচালকের কথা রেখে আদিল অচিরেই একটি ওয়ার্কশপ শুরু করবেন। যাঁকে অভিনয়ে প্রশিক্ষণ দেবেন, তিনি একজন স্বনামধন্য তারকার মেয়ে। সেই উঠতি অভিনেত্রী অনায়াসেই বলতে পারতেন যে এই ওয়ার্কশপ করার তাঁর কোনও প্রয়োজন নেই। দরকার হলে তাঁর বাবার কাছেই যা শেখার শিখে নেবেন। কিন্তু এমন কিছুই তিনি বলেননি। পরিচালক চেয়েছেন তিনি ওয়ার্কশপ করুন আর সেটা নিয়ে কোনও তর্কেই যাননি তিনি। আর এই শেখার আগ্রহটা খুব সদর্থক বলেই মনে করছেন আদিল।
তবে শেখার এই রেওয়াজ সিনেমার জগতে নতুন নয়। আগেও বলিউডে শুনেছি ব্যারি জনকে দিয়ে ‘সালাম বম্বে’-এর অভিনেতাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এমনটাও শোনা গিয়েছে যে ইমতিয়াজ আলির প্রথম ছবি ‘শোচা না থা’র জন্য রয়েস্টেন আবেলকে দিয়ে অভিনেতাদের একটা প্রশিক্ষণ হয়েছিল। “তফাতটা হচ্ছে এখন জনপ্রিয় অভিনেতারাও শিখতে আগ্রহী। এখনকার পরিচালকরা এক ধরনের অভিনয় পছন্দ করেন। যাকে বলে নন-ড্রামাটিক অভিনয়। মেনস্ট্রিম বলিউডেও এই ধরনের অভিনয়টার বেশ চল শুরু হয়েছে। এটাকে বলা যেতে পারে ট্রু রিয়েলিজম। আর পরিচালকরা চান যে এই ধরনের অ্যাক্টিংটা যেন তাঁদের সিনেমার অভিনেতারাও শিখে আসেন ছবি করার আগে। তাই পরিচালকেরা নিজে থেকেই চাইছেন যে প্রতিষ্ঠিত অভিনেতারাও এই ওয়ার্কশপগুলো করুন। এটা করলে সিনেমারই লাভ হবে,’’ বলছেন আদিল।

ডিনো মোরিয়া

ইমরান খান
থিয়েটার বিশারদ এন কে শর্মা দিল্লিতে থাকেন। অনেক বলিউডের তারকাকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তিনি। বলছেন, “আমি যখন এদের শেখাই, তখন চেষ্টা করি ওদের ‘ইনার স্ট্রেংথ’টা ফুটিয়ে তুলতে। বুঝিয়ে দিতে যে কোথায় ওদের সত্যিকারের শক্তি লুকিয়ে আছে। আর তার সঙ্গে সঙ্গে এটাও চেষ্টা করি যাতে ওরা নিজেদের খুঁতগুলোও বুঝতে পারে। এই দু’টো জানা থাকলে বড় পরদাতে অভিনয় করাটা সহজ হয়ে যায়।”
তবে শুধুমাত্র নিজেদের তাগিদেই যে এই সব থিয়েটার ওয়ার্কশপ করছেন তারকারা, তা কিন্তু নয়। ইন্ডাস্ট্রির নতুন ধরনের সিনেমা বানানোর চাহিদায় ইন্ধন জোগানোর জন্যই এটা দরকার। বলিউডে ছবি বানানোর ধারাটাও পালটেছে। হিরো মানে আর শুধুমাত্র ক্যান্ডিফ্লস ছবিতে হিরোইনের পিছনে দৌড়ে বেড়ানো নয়। ছোট ছোট শহরের ছবি নিয়ে গল্প বানাচ্ছে বলিউড। “আর সেই সব গল্পে নতুন নতুন সব চরিত্রে বলিউড তারকাদের নেওয়া হচ্ছে। এরা অনেকেই এই সব চরিত্রগুলোর সঙ্গে পরিচিত নন। তাদের লাইফস্টাইল, তাদের কথা বলার ধরন এগুলো সবই এদের কাছে একেবারেই নতুন। তাই এরা ছুটে আসছেন থিয়েটার অভিনেতাদের কাছে,” বলছেন এন কে শর্মা।
আর টলিউড?
অপর্ণা সেন বা বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর ছবিতে ওয়ার্কশপের চল তো বহু দিনের পুরনো। কিন্তু মেনস্ট্রিম ছবি করতে গিয়ে কি কেউ ভেবেছেন, দু’মাস থিয়েটার ওয়ার্কশপ করে দেখি?

চেষ্টা করি ওদের ‘ইনার স্ট্রেংথ’টা ফুটিয়ে তুলতে। বুঝিয়ে দিতে কোথায় ওদের শক্তিটা লুকিয়ে আছে
এন কে শর্মা
আমি কনট্র্যাক্টেই লিখে দিই যে অভিনেতাদের ওয়ার্কশপ করতেই হবে আমার ছবি করতে গেলে
সুজিত সরকার
পরিচালক রাজ চক্রবর্তী অবশ্য বলছেন যে, তিনি প্রত্যেকটি ছবিতে ওয়ার্কশপ করিয়েছেন। “বলিউড ওয়ার্কশপ করছে বলে আমাদেরও ওয়ার্কশপ করতে হবে, এমনটা নয়। আমি ‘চিরদিনই...তুমি যে আমার’ থেকেই ওয়ার্কশপ করাই। এতে সময় নষ্ট হয় না। অভিনেতারা অনেক বেশি প্রস্তুত থাকে। অনেক ভুলত্রুটি শুধরে যায়। দেবরঞ্জন নাগ, পদ্মনাভ দাশগুপ্ত আমার ছবির জন্য ওয়ার্কশপ করেছেন। এখন আমি নিজেই করি। পরের ছবিটি শুরু করব নতুন ছেলেমেয়েদের নিয়ে। ওদের নিয়েও ওয়ার্কশপ করে তার পর শ্যুটিং শুরু করব,” বলছেন রাজ।
নাট্যকর্মী সোহাগ সেন বলছেন, “মেনস্ট্রিম টলিউডে আমি এক বার একটা ওয়ার্কশপ করেছিলাম প্রভাত রায়ের ‘হ্যাংওভার’-এর জন্য। বুম্বা আমার কাছে এসেছিল বুদ্ধদেবের ‘স্বপ্নের দিন’ করার আগে। তবে সেটা তো অন্য ধরনের ছবি ছিল। সিনেমার ধারা পালটাচ্ছে। আশা করি ভবিষ্যতে টলিউডের কমার্শিয়াল ছবি করার আগে ওয়ার্কশপ করার প্রচলনটাও শুরু হবে।”
টলিউড শুনছে কি?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.