|
|
|
|
গোবলয়ে শক্তি বাড়াতে মরিয়া বিজেপি |
আডবাণী ফিরলে ফেরার ইঙ্গিত নীতীশদের |
স্বপন সরকার ও অত্রি মিত্র • পটনা |
বুধবার বিধানসভায় শক্তিপরীক্ষা নীতীশ কুমারের। তার আগে আজ অবধি কিন্তু সদ্যপ্রাক্তন জোটসঙ্গী বিজেপি স্পষ্ট করেনি, আস্থা ভোটে তাদের অবস্থান কী হবে! এই অবস্থায় রাজধানী দিল্লি এবং পটনায় বিজেপির একটা অংশ শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বোঝাতে মরিয়া যে, দল নীতীশকে ছাড়তে চায় না। অন্য দিকে নীতীশ কুমার এ দিন ইঙ্গিত দিয়েছেন, বিজেপিতে নরেন্দ্র মোদীর পরিবর্তে লালকৃষ্ণ আডবাণী শিবিরের গুরুত্ব বাড়লে তাঁরা এনডিএ-তে ফিরতে পারেন।
এই অবস্থার মধ্যেই আগামিকাল দিল্লিতে আসছেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। কালই দিল্লিতে তাঁর সঙ্গে লালকৃষ্ণ আডবাণীর বৈঠক হওয়ার কথা। বিজেপি সূত্রের খবর, আডবাণী-ভাগবতের আলোচনা ইতিবাচক হলেও মোদীকে দলের প্রচার কমিটির প্রধানের পদ থেকে সরানোর দাবি সঙ্ঘের পক্ষে মেনে নেওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
আডবাণী-সুষমা স্বরাজরা প্রথম থেকেই চাইছেন, মোদীকে দলের প্রচার কমিটির প্রধানের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে জোটসঙ্গীদের আরও কাছাকাছি নিয়ে আসার দিকে মন দিক বিজেপি। তাতে আখেরে লাভই হবে। সদ্য এনডিএ জোট ছাড়ার পরেও আজ নীতীশও কার্যত আডবাণীদের সুরেই কথা বলেছেন। পটনায় জনতা দরবারে নীতীশ এ দিন বলেন, “বিজেপি একা কেন্দ্রে সরকার গড়তে পারবে না। সেই কারণে, তাদের উচিত এনডিএ-তে জোটসঙ্গীর সংখ্যা বাড়ানোর দিকে মনোযোগী হওয়া। তার বদলে বিজেপি জোটসঙ্গীদের খেপিয়ে তুলছে।” |
 |
পটনায় সাংবাদিক সম্মেলনে নীতীশ কুমার। সোমবার। ছবি: পিটিআই |
বিজেপিতে আডবাণীর গুরুত্ব বাড়লে জেডিইউ যে এনডিএ-তে ফেরার কথা ভাববে, সেটাও এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন শরদ যাদব। তিনি বলেন, “বিজেপির ক্ষমতার কেন্দ্রে আডবাণী ফিরলে আমরাও এনডিএ-তে ফেরার কথা ভাবতে পারি।
তবে বিজেপি-তে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতই হল, আপনি বাঁচলে বাপের নাম। সারা দেশে উন্নয়নের রাজনীতিতে মোদীর একটা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সেটাকে হাতিয়ার করে আগামী লোকসভা নির্বাচনে গো-বলয়ে বিজেপির আসন সংখ্যা যতটা সম্ভব বাড়িয়ে নেওয়াই লক্ষ্য হওয়া উচিত দলের। আর সে কারণেই আস্থা ভোটে তাঁরা জেডিইউ-এর বিরুদ্ধেই ভোট দেবেন বলে এ দিন দিল্লিতে জানিয়েছেন বিহারের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা ধর্মেন্দ্র কুমার। রাজ্য বিজেপি নেতারাও বলছেন, আগামী লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে এখন থেকে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন তাঁরা। এই অবস্থায় নীতীশ-বিরোধিতার দিকে বেশি নজর না দিয়ে ঐক্যবদ্ধ ভাবে মানুষের কাছে গিয়ে প্রচার শুরু করাই ঠিক কাজ হবে।
বিজেপির অন্দরে অনেকেই মনে করছেন, বাবরি মসজিদ ভাঙার সময়ে বিজেপির বিরোধিতা করে বিহারে ফায়দা তুলেছিলেন লালুপ্রসাদ যাদব। এ বারে নরেন্দ্র মোদীর বিরোধিতা করে সেই ফায়দা তুলতে পারেন নীতীশও। মোদীপন্থীদের পাল্টা যুক্তি, বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক হয়ে সারা দেশে নিজেদের আসন বাড়াতে পেরেছিল বিজেপি। বিহারে জেডিইউয়ের একাংশও নীতীশকে এখন বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহের সঙ্গেই তুলনা করছেন। জেডিইউয়ের এক নেতার কথায়, “বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহ আর বিজেপির লড়াইয়ে দীর্ঘমেয়াদিতে লাভ হয়েছিল বিজেপিরই। এখানে বিজেপির লাভ না হলেও এই লড়াইয়ে লাভের গুড় আগামী লোকসভা নির্বাচনে খেয়ে যেতে পারেন লালুপ্রসাদ।” এই আশঙ্কা থেকেই বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব যত বাড়ছে, নীতীশ ততই কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জেডিইউ সূত্রের খবর।
কংগ্রেসও বিষয়টি ভাল ভাবেই জানে। সেই কারণে এ দিন মন্ত্রিসভা রদবদলের পরে দিল্লিতে নীতীশ কুমারকে ধর্মনিরপেক্ষ বলে প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। একই সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনাও করেছেন তিনি।
নীতীশ অবশ্য আজ দিনভর ঘরে-বাইরে নিজেদের অবস্থান বোঝাতে ব্যস্ত রইলেন। সকালে জনতা দরবারে মোদীর নাম না করে নীতীশ বলেন, “আমাদের সম্পর্ক ভাল ছিল। কিন্তু বাইরের হস্তক্ষেপ শুরু হওয়ার পর থেকেই সম্পর্কের অবনতি হল। পরিস্থিতি এমন হল যে, এক সঙ্গে চলা সম্ভব হল না। বিজেপি-র নির্দেশ মেনে চলা যায় না।”
আজ নিজের বাসভবনে জেডিইউয়ের বিধায়ক এবং সাংসদদের ডেকেছিলেন নীতীশ। সেখানে দু’জন সাংসদ ছাড়া বাকি সবাই উপস্থিত ছিলেন। কী পরিস্থিতিতে তাঁরা বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করেছেন, তা তাঁদের ব্যাখ্যা করেন নীতীশ। তিনি দলের নেতাদের বলেন, “আমরা বারবার বিজেপি-কে কোনও ধর্মনিরপেক্ষ নেতাকে সামনে নিয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু বিজেপি সেই পরামর্শ শোনেনি। তাই এ ছাড়া আমাদের কাছে অন্য কোনও রাস্তা ছিল না।”
পাশাপাশি আগামী লোকসভা নির্বাচনের জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দেওয়ার নির্দেশ দেন নীতীশ। তিনি বলেন, “আপনারা নিজেদের এলাকায় গিয়ে সংগঠন বাড়ানোর দিকে মন দিন। আগামী লোকসভা নির্বাচনে আমাদের সব আসনেই একা লড়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। সেই কারণে এখন থেকেই মানুষের কাছে গিয়ে আমাদের কথা বলতে শুরু করে দিন।” এখন থেকে বিধায়কদের বিশেষ ভাবে ‘হোম টাস্ক’-ও দেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেন নীতীশ।
আর এ সবের একটাই কারণ। নীতীশ ভাল করেই জানেন, এ যাত্রায় তাঁর সরকার টিকে যাবে। কিন্তু আগামী লোকসভা নির্বাচনই তাঁর ‘লিটমাস টেস্ট’। সেই যুদ্ধে জয়ের জন্য তাই এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন নীতীশ।
|
পুরনো খবর: জোট ছাড়লেন নীতীশ, বিজেপি বলল বিশ্বাসঘাতক |
|
|
 |
|
|