|
|
|
|
রাহুলই উত্তরসূরি বললেন মনমোহন, সঙ্গে বার্তা নীতীশকে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
লোকসভা ভোটের ঢাকে কার্যত কাঠি পড়ে যাওয়ার পরে রাহুল গাঁধীকেই নিজের উত্তরসূরি হিসেবে তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার রদবদলের পরে রাষ্ট্রপতি ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তৃতীয় ইউপিএ সরকার গঠিত হবে বলে আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাহুল ‘সহজাত নেতা’ এবং গাঁধী পরিবারের এই তরুণ প্রজন্ম তাঁর আসন নিলে তিনি খুশিই হবেন। এই মন্তব্যকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে এই কারণে যে, এর আগে অন্তত দু’বার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তৃতীয় ইউপিএ সরকার গঠিত হলে তার নেতৃত্ব দেওয়ার সম্ভাবনা খারিজ করে দেননি মনমোহন।
কংগ্রেস নেতৃত্বই জানাচ্ছেন, বড় কোনও অঘটন না-ঘটলে প্রধানমন্ত্রী পদে এটাই মনমোহনের শেষ দফা। সে কথা বুঝেই আজ কার্যত স্বেচ্ছাবসরের বার্তা দিয়েছেন তিনি। বিজেপি যখন কর্মী-সমর্থকদের চাপে বাজপেয়ী-আডবাণী জমানার ইতি ঘটিয়ে মোদী যুগের পথে এগোচ্ছে, তখন কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের আবেগকে মর্যাদা দিয়ে রাহুলকে নেতৃত্ব দিতে আহ্বান জানালেন মনমোহন। বললেন, “রাহুল গাঁধী কংগ্রেসের সহজাত নেতা। আশা করি এ বার তিনি ইউপিএ-র নেতৃত্বও দেবেন। এ-ও বিশ্বাস করি, আমার পর প্রধানমন্ত্রী পদে তিনিই যোগ্য নেতা।” বস্তুত, গত কাল কংগ্রেস সংগঠন এবং আজ মন্ত্রিসভার রদবদলের পিছনে রাহুলের হাতের ছাপ স্পষ্ট।
রাহুলকে ভবিষ্যতের নেতা হিসেবে তুলে ধরার পাশাপাশি সামনের লোকসভা ভোটে যিনি তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ হতে চলেছেন, সেই নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধেও যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ক’দিন আগে পর্যন্ত মোদী-প্রসঙ্গ এড়িয়ে যেতে চাওয়া মনমোহন আজ যেন জবাব দেওয়ার জন্য তৈরি হয়েই এসেছিলেন। তিনি বলেন, “কংগ্রেস মোদীকে ভয় পায় না। মোদী বলতে কী বোঝায়, মানুষ তা জানেন।” এখানেই শেষ নয়, মোদীর উত্থানের জেরে সদ্য এনডিএ ছাড়া নীতীশ কুমারকে ধর্মনিরপেক্ষ আখ্যা দিয়ে বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর জন্য ইউপিএ-র দরজা খোলা রাখার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন মনমোহন।
নীতীশ গত কাল আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপি-র সঙ্গ ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই কংগ্রেস নেতারা তাঁকে ঠারেঠোরে বার্তা দিতে শুরু করেছিলেন। আর প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টই বলেন, “রাজনীতিতে চিরশত্রু বলে কিছু হয় না। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেই এ (নীতীশের) ব্যাপারে কংগ্রেস সিদ্ধান্ত নেবে।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আঞ্চলিক দলগুলিকে নিয়ে যে ফেডেরাল ফ্রন্ট গঠনের কথা বলছেন, সে সম্পর্কে মনমোহনের মন্তব্য, “ফেডেরাল ফ্রন্টের কোনও ভবিষ্যত রয়েছে বলে মনে করি না। তাই তাকে ভয় পাওয়ারও কোনও কারণ নেই।” (ঘটনাচক্রে মমতা আজই ফেসবুকে মন্ত্রিসভার এই সম্প্রসারণকে কটাক্ষ করে প্রশ্ন তুলেছেন: তৃণমূল দায়িত্ব ছাড়ার পর গত ৮-৯ মাসে কত বার রেলমন্ত্রী বদল হল? মন্ত্রিসভার এই রদবদলের বার্তাটা কী?)
সব মিলিয়ে আজ লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেসের আত্মবিশ্বাসী মুখ তুলে ধরেছেন মনমোহন। বুঝিয়ে দিয়েছেন, ভোটের জন্য তৈরি হওয়ার কাজ শুরু করে দিয়েছেন তাঁরা। বস্তুত এ দিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় যে রদবদল হয়েছে, সেটা যত না প্রশাসনিক, তার থেকে অনেক বেশি রাজনৈতিক। কংগ্রেসের নেতারাই জানাচ্ছেন, মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যদের প্রশাসনিক কাজ বিশেষ থাকবে না। বরং লোকসভা নির্বাচনের আগে তাঁদের রাজনৈতিক মর্যাদা বাড়াতেই মন্ত্রিসভায় সামিল করা হয়েছে। দিল্লির তুলনায় নিজের নিজের রাজ্যে রাজনৈতিক লড়াইয়েই বেশি সময় দেবেন তাঁরা।
কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, সাংগঠনিক রদবদলের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন ঘটানো হয়েছে। আর এই দুই পরিবর্তনেই মনমোহনের তুলনায় অনেক বেশি গুরুত্ব পেয়েছে রাহুলের মত।
ক’দিন আগেই কর্নাটকে বিপুল ভোটে জিতেছে কংগ্রেস। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী পদের অন্যতম দাবিদার ছিলেন কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী মল্লিকার্জুন খার্গে। কিন্তু রাজ্য দলে জনপ্রিয়তার কারণে শেষমেশ সিদ্দারামাইয়াকে সেখানে মুখ্যমন্ত্রী করেন রাহুল। তবে মল্লিকার্জুনকে সন্তুষ্ট করতে তখনই হাইকম্যান্ডের তরফে জানানো হয়েছিল যে রেল মন্ত্রক থেকে পবন বনশলের ইস্তফার পর তাঁকে সেই মন্ত্রক দেওয়া হবে। আজ সেটাই হয়েছে।
সেই সঙ্গে বিধানসভা ভোটের মতো লোকসভা ভোটেও কর্নাটকে জয়ের ধারা বজায় রাখতে সেখানকার কংগ্রেস নেতা অস্কার ফার্নান্ডেজকে সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী করা হয়েছে। আর কর্নাটকের কংগ্রেস নেতা যেশুদাসু সেলমকে করা হয়েছে অর্থ প্রতিমন্ত্রী।
কর্নাটকের মতোই রাজস্থান থেকে দুই কংগ্রেস নেতা পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন আজ। এঁদের মধ্যে এক জন হলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শিসরাম ওলা। দ্বিতীয় জন হলেন, গিরিজা ব্যাস। এ বছরের শেষ দিকে রাজস্থানে বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই এই দুই নেতার মর্যাদা বাড়ানো হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্ধ্রপ্রদেশ নিয়ে ইদানীং বেশ বিব্রত কংগ্রেস। সেই সঙ্কট সামাল দেওয়ার পথ খুঁজতে বস্ত্র দফতরের পূর্ণমন্ত্রী করা হয়েছে সে রাজ্যের নেতা কে এস রাওকে। পাশাপাশি পঞ্জাব থেকে তফসিলি জাতির নেত্রী সন্তোষ চৌধুরিকে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী করে অনগ্রসর শ্রেণিকে বার্তা দিতে চেয়েছেন রাহুল।
|
নতুন মুখ |
পূর্ণমন্ত্রী |
|
শিসরাম ওলা
শ্রম ও কর্মসংস্থান |
|
অস্কার ফার্নান্ডেজ
সড়ক পরিবহণ ও জাতীয় সড়ক |
|
গিরিজা ব্যাস
আবাসন ও নগর-দারিদ্র দূরীকরণ |
|
কে সম্বাশিব রাও
বস্ত্র |
প্রতিমন্ত্রী |
মানিকরাও গাভিট
সামাজিক ন্যায়
সন্তোষ চৌধুরি
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ
ইএমএস নাচ্চিয়াপ্পন
বাণিজ্য ও শিল্প
যেশুদাসু সিলম
অর্থ |
মন্ত্রক বদল |
মল্লিকার্জুন খার্গে
শ্রম ও কর্মসংস্থান থেকে রেল |
|
পুরনো খবর: আপত্তি খারিজ আডবাণীদের |
|
|
|
|
|