|
|
|
|
বিহার রাজনীতি |
নীতীশ-বিরোধিতার পথে এখনই হাঁটবে না কংগ্রেস |
নিজস্ব সংবাদদাতা • পটনা |
কাল পর্যন্ত রাজ্য-রাজনীতিতে যে দল ছিল একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক, আজ সেই কংগ্রেসেরই মুখপাত্র হাসি মুখে বলছেন, “আনন্দে আছি। বর্তমান পরিস্থিতি উপভোগ করছি।” বিহারে হিসেবের বাইরে থাকা কংগ্রেস আচমকাই খবরের মধ্যে।
২০০০ সালে পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে লালু প্রসাদ যাদব তখন কোণঠাসা। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে ছিলেন লালু-পত্নী রাবড়ী দেবী। রাবড়ী দেবীর আড়ালে লালু রাজপাট সামলাচ্ছিলেন। তখনও ঝাড়খণ্ড পৃথক রাজ্য হয়নি। ৩২৪ আসনের বিহার বিধানসভায় রাবড়ীর সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে প্রয়োজন ছিল ১৬৩ বিধায়কের সমর্থন। নির্দল বিধায়করা সমর্থন দেওয়ার পরেও ‘ম্যাজিক ফিগার’-এ পৌঁছতে পারছিল না আরজেডি। সেই সময়ে আরজেডি-র ত্রাতা হয়ে আসরে নামে কংগ্রেস। দলের ২৩ জন বিধায়ক আরজেডি-কে সমর্থন করে। বদলে ২২ জন বিধায়কই মন্ত্রী হন। বাকি এক জন হন বিধানসভার স্পিকার। কিন্তু কংগ্রেসের এই সিদ্ধান্ত এ রাজ্যে তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছিল। পরের ভোটে বিহার থেকে প্রায় মুছে গিয়েছিল কংগ্রেস। |
|
মঙ্গলবার বিহার বন্ধ। তারই প্রস্তুতিতে পটনায় বিজেপি নেতা সুশীল মোদীর রোড-শো। ছবি: জয়প্রকাশ। |
এ বার তাই সতর্ক কংগ্রেস। মুখে হাসি থাকলেও পদক্ষেপ করা নিয়ে অনেক বেশি ভাবনাচিন্তা করছেন কংগ্রেস হাইকমান্ড। আগবাড়িয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে নারাজ তাঁরা। দিল্লির এক কংগ্রেস নেতার কথায়, “বিহারে এখন আমাদের অবস্থা খুবই ভাল। লালু প্রসাদ আমাদের সঙ্গেই থাকতে চাইছেন। আবার নীতীশ কুমারও আমাদের পাশে চাইছে। অন্য দিকে, আমাদের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি খানিকটা হলেও কোণঠাসা। কারণ, তারা ক্ষমতা থেকে দূরে সরে গিয়েছে। আমাদের কাছে এর থেকে আদর্শ সময় আর কী-ই বা হতে পারে?”
এই অবস্থায় বিহারেও উত্তরপ্রদেশ মডেল অনুসরণ করতে চাইছে কংগ্রেস। উত্তরপ্রদেশে যেমন এক দিকে মায়াবতী এবং অন্য দিকে মুলায়ম সিংহ যাদব ইউপিএ সরকারকে সমর্থন করছে। একই ভাবে কংগ্রেস চায়, বিহারেও লালু প্রসাদ এবং নীতীশ কুমার, উভয়েই কংগ্রেসের সঙ্গে থাকুক। সেই কারণে কংগ্রেস এখন একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। কোনও অবস্থাতেই বিধানসভার ভোটাভুটিতে নীতীশ কুমারের বিরোধিতা করবে না তারা। বিহারে দলের মুখপাত্র প্রেমচন্দ মিশ্রের কথায়, “আমরা বিধানসভায় নীতীশ কুমারের বিরোধিতা করব না। নীতীশের বিরোধিতা করা মানে বিজেপি-কে সমর্থন করা। সেটা আমরা কোনও অবস্থাতেই করতে পারব না। কারণ কংগ্রেসই একমাত্র দল, যারা প্রথম থেকে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করছে।” তা হলে কংগ্রেস কি নীতীশকে সমর্থন করবে। এ ব্যাপারে অবশ্য আগবাড়িয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাইছে না কংগ্রেস। বাকি দলগুলির অবস্থান স্পষ্ট হওয়ার পরেই কংগ্রেস ঠিক করবে, আস্থা ভোটে তারা জেডিইউকে সমর্থন করবে, না ভোটাভুটি থেকে বিরত থাকবে। ভোট দানে বিরত থাকলে যদি নীতীশ ‘ম্যাজিক নাম্বার’ ১২২-এ পৌঁছে যায় তবে সেই পথই তারা নেবে।
কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “পরিস্থিতি সরেজমিনে বিবেচনা করে পরিষদীয় দলের নেতা এবং রাজ্য সভাপতি বসে এই সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে ভোটাভুটিতে অংশ না নেওয়ার পক্ষেই পাল্লা ভারী। তা হলে এক দিকে যেমন নীতীশ খুশি হবে, তেমনই লালুও চটবে না।” তবে কংগ্রেসের নবীন প্রজন্মের একাংশ মনে করছেন, বিহারে লালু আর নতুন করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবেন না। সে ক্ষেত্রে নীতীশ-রামবিলাসের সঙ্গে জোট বেঁধে কংগ্রেস বিহারে ভোটে লড়ুক। যে সমীকরণে এক সময়ে বিহারে ফায়দা লুটেছিল বিজেপি। তবে মহারাজগঞ্জে বিশাল ভোটে আরজেডি-র জয়ের পরে প্রবীণ নেতারা এখনই লালুকে ছাড়তে নারাজ। |
|
|
|
|
|