অভিযান হোক বা তীর্থযাত্রা, বাঙালি পর্যটকদের অন্যতম পছন্দ উত্তর ভারতের পাহাড়। আর সেই ভ্রমণের পাঁজি ঠিক হয়, বর্ষার স্বাভাবিক নির্ঘণ্ট দেখেই। কিন্তু এ বছরে উত্তর ভারতের পাহাড়ে বর্ষার আগাম হাজিরাতেই ভেস্তে গেল সেই পাঁজির গণনা। উত্তরাখণ্ড ও হিমাচলে আটকে পড়লেন দেড়শোরও বেশি বাঙালি পর্যটক।
মহাকরণের কর্তারা জানান, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জেরে হোটেলে বন্দি এ রাজ্যের পর্যটকেরা নিরাপদেই রয়েছেন। শুরু হয়েছে উদ্ধারকাজ-ও। রাজ্যের তরফ থেকে উত্তরাখণ্ড-হিমাচলে সচিব পর্যায়ে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
রবিবার নির্দিষ্ট সময়ের এক মাস আগেই বর্ষা পৌঁছেছে উত্তর ভারতের পাহাড়ি এলাকায়। তার জেরেই উত্তরাখণ্ড ও হিমাচলে ব্যাপক বৃষ্টি শুরু হয়েছে। নেমেছে ধস-ও। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও জনজীবন। |
উত্তরকাশীতে ভেঙে পড়ছে বাড়ি। ছবি: এএফপি |
এর ফলেই ওই পর্যটকেরা আটকে পড়েছেন বলে সরকারি কর্তারা জানান। পর্যটন সংস্থার কর্তারা জানান, বর্ষায় পাহাড়ে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া হয় না। বর্ষার আগে এটাই ছিল পর্যটনের শেষ দফা। কিন্তু প্রকৃতির খামখেয়ালিপনাতেই বোকা হয়ে গেলেন তাঁরা।
কলকাতার একটি পর্যটন সংস্থার কর্তা নিতাই সেনগুপ্ত জানান, তাঁদের সংস্থার মাধ্যমে যাওয়া ৭৪ জন পর্যটক আটকে। এর মধ্যে উত্তরাখণ্ডের বদ্রীনাথে ৩৮ ও সীতাপুরে ৩৬ জন রয়েছেন। রবিবার রাতে ওই পর্যটকদের সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল নিতাইবাবুদের। তার পর থেকে সোমবার রাত পর্যন্ত কোনও যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর দাবি, “পর্যটকেরা নিরাপদেই রয়েছেন।” একই অবস্থা হিমাচলপ্রদেশের-ও। রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা মন্ত্রী জাভেদ খান বলেন, “হিমাচলের সাংলাতে প্রায় এ রাজ্যের একশো জন পর্যটক আটকে রয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলার পরেই আমি খোঁজখবর শুরু করি।” আটকে পড়া পর্যটকদের বিষয়ে রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সচিব উত্তরাখণ্ড ও হিমাচলের প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন বলেও জাভেদ জানান।
কী অবস্থা আটকে পড়া বাঙালি পর্যটকদের? সাংলায় আটকে পড়া পর্যটকদের এক জন দেবাশিস পোদ্দার বলেন, “অবস্থা শোচনীয়। তিন দিন ধরে অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। খাবার জল, বিদ্যুৎ নেই।” তিনি আরও জানান, অন্য পর্যটকেরাও হোটেলে বন্দি। তিনি বলেন, “সবাই বলছে আর দু’দিন এমন বৃষ্টি হলে খাবার-জলের সঙ্কট হবে। কী ভাবে উদ্ধার পাব বুঝতে পারছি না।” পর্যটন সংস্থার কর্তারা জানান, ওই এলাকায় শনিবার বিকেল থেকেই বিদ্যুৎ নেই। বিপর্যস্ত টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাও। পর্যটক থেকে স্থানীয় এজেন্ট, কারও সঙ্গেই যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
দিন তিনেক আগে কলকাতা থেকে ১৪ জনের একটি দল গিয়েছিল উত্তরাখণ্ডে। গন্তব্য ছিল চৌখাম্বা। কিন্তু মালাকুনটির পর আর এগোতে পারেননি তাঁরা। ওই দলের সদস্য সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, মালাকুনটি থেকে বদ্রীনাথ যাওয়ার রাস্তাটি ভেঙে নদীতে তলিয়ে গিয়েছে। আটকে গাড়ি। এ দিন বিকেলেই তাঁরা হরিদ্বারে ফেরার জন্য রওনা দেন।
রাজ্যের তরফে জানানো হয়েছে, আটকে পড়া পর্যটকদের ব্যাপারে উত্তরাখণ্ড সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। রাজ্যের পর্যটন-সচিব বিক্রম সেন বলেন, “উত্তরাখণ্ডে আটকে পড়া পর্যটকদের উদ্ধারের জন্য রাজ্যের রেসিডেন্ট কমিশনার ও আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি।” |