লোকসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনের প্রভাব |
পঞ্চায়েতে কতটা, উত্তর খুঁজছে সব পক্ষ |
হাওড়া উপ নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা দেখছেন হাওড়া জেলার বাম নেতৃত্ব। সাঁকরাইল ও দক্ষিণ হাওড়া বিধানসভা ভিত্তিক ফলাফলে তৃণমূলকে পিছনে ফেলেছে তারা। সাঁকরাইল পঞ্চায়েত ভোটের আওতায় পড়ে। জেলার অন্য প্রান্তেও তারা ভাল ফল করবে বলেই মনে করছে। অন্য দিকে, তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, যে পরিবর্তন শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোট থেকে, এ বার পঞ্চায়েতে সেই বৃত্তই সম্পূর্ণ হবে। বামেদের যুক্তি যদি হয় শাসক দলের সন্ত্রাস ও অনুন্নয়নের ফলেই ভোটারেরা বামেদের নিরাশ করবেন না, তৃণমূল সে ক্ষেত্রে বলছে শান্তি ও উন্নয়নের জন্যই হাওড়ার মানুষ ভোট দেবেন তাঁদেরই।
১৯৭৮ সাল থেকে শুরু করে ২০০৩ সাল জেলায় ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের প্রতিটি স্তরে বামফ্রন্টের ধারাবাহিক প্রাধ্যন্য ছিল হাওড়া জেলায়। ২০০৩ সালে জেলা পরিষদের ৩৪টির মধ্যে ৩৩টি আসন ছিল বামফ্রন্টের হাতে। পঞ্চায়েত সমিতির ৪২৬টির মধ্যে বামফ্রন্ট পেয়েছিল ৩০৪টি আসন। গ্রাম পঞ্চায়েতে ২৫১১টির মধ্যে বামফ্রন্ট পেয়েছিল ১৪৮১টি আসন।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে বামফ্রন্ট বড় রকমের ধাক্কা খায় ২০০৮ সালে। কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেস দু’টি দলের রাজ্য নেতৃত্বই আলাদা ভাবে লড়াই করার জন্য কর্মীদের নির্দেশ দিলেও দু’টি দলের নিচুতলার কর্মীরা কিন্তু সেই নির্দেশ মানেননি। বিশেষ করে পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে তাঁরা জোট বেঁধে বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। বহু আসনে বিজেপিকেও জোটের মধ্যে নিয়ে নেন কংগ্রেস এবং তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা।
ওই বছর ২১৪১টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের মধ্যে বামফ্রন্ট পেয়েছিল মাত্র ৮৯৯টি আসন। কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি মিলিয়ে পেয়েছিল ১১৫২টি আসন। পঞ্চায়েত সমিতির ৪৩১টি আসনের মধ্যে বামফ্রন্ট পেয়েছিল ১৯৫টি এবং কংগ্রেস, তৃণমূল ও বিজেপি পেয়েছিল মোট ২৩৫টি আসন।
২০০৩ সালে ১৫৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ১২৪টি পায় বাম। ২০০৮ সালে অধিকাংশ পঞ্চায়েত চলে আসে কংগ্রেস, তৃণমূল, বিজেপি জোটের হাতে। জেলায় ১৪টির মধ্যে মাত্র ৪টি পঞ্চায়েত সমিতি কোনওরকমে ধরে রাখতে পারে তারা।
জেলার রাজনৈতিক মহলের একটি অংশের মত ছিল, গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতি এই দু’টি স্তরে মহাজোট করার সুফল পেয়েছিল কংগ্রেস, তৃণমূল এবং বিজেপি। আবার অন্য একটি মত ছিল ২০০৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই পরাজয়ের মধ্যে দিয়েই বামফ্রন্টের পতনের সূত্রপাত হয়। বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ দিনের পর দিন বাড়ছিল। সাধারণ মানুষই রাজনৈতিক দলগুলিকে বাধ্য করে নিচু তলায় মহাজোট করতে।
২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের দোরগোড়ায় এসে জেলা বামফ্রন্ট নেতৃত্বের একাংশের দাবি, এ বারে অবশ্যই ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। যদিও এ বারে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৪৩১টি আসনের মধ্যে ২২২টিতে ইতিমধ্যেই জিতে গিয়েছে তৃণমূল। মাত্র একটি আসনে জিতেছে সিপিএম। অন্য দিকে, পঞ্চায়েত সমিতিতে ৪৬২টি আসনের মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন ৩৬ জন প্রার্থী। তবে এই বিষয়টিকে গুরুত্বই দিতে নারাজ জেলা বামফ্রন্টের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতার ঘটনাটি ঘটেছে মূলত একটি মাত্র ব্লকে। তা হল উদয়নারায়ণপুর। পুরো জেলার চিত্র কিন্তু এটা নয়। জেলা বামফ্রন্ট্রের অভিযোগ, বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে ওই ব্লকে একতরফা সন্ত্রাস চালাচ্ছে তৃণমূল। বাকি ১৩টি ব্লকের কিন্তু প্রায় সর্বত্র লড়াই হচ্ছে।
জেলা বামফ্রন্টে আরও যুক্তি, ২০০৮ সালের মতো এ বারে কংগ্রেস, তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে কোনও মহাজোট হয়নি। বিশেষ করে সাঁকরাইল, আমতা ২ ব্লক প্রভৃতি এলাকায় যেখানে কংগ্রেস তুলনামূলক ভাবে শক্তিশালী সেখানে তৃণমূল এবং সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এর সুফল বামফ্রন্টই পাবে। হাওড়া লোকসভা উপ-নির্বাচনে সাঁকরাইলে তৃণমূল পিছিয়ে পড়েছে। শাসক দলের গ্রহণযোগ্যতা যে কমছে তা এই ফলের মাধ্যমেই প্রমাণ মিলেছে। তার উপরে রয়েছে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। জগৎবল্লভপুরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই তৃণমূল পঞ্চায়েত সমিতির একটি আসনে প্রার্থী পর্যন্ত দিতে পারেনি। একই সঙ্গে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য শর্ত জুড়েছেন বাম নেতারা। তাঁদের কথায়, “অবাধ-শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হতে হবে।”
সন্ত্রাসের অভিযোগ উড়িয়ে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব জানান, উদয়নারায়ণপুর-সহ যে সব আসনে সিপিএম প্রার্থী দিতে পারেনি, সেখানে আসলে তারা প্রার্থী খুঁজে পায়নি। সাধারণ মানুষ সিপিএমের কাছ থেকে বহু যোজন দূরে সরে গিয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটে তা আরও একবার প্রমাণ হবে।
|