বিজেপি-জেডিইউ জোট ভাঙা মাত্র নীতীশ কুমারের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে তৎপর হল বাম শিবির।
আগামী বুধবার বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে চলেছেন নীতীশ। ছয় নির্দল বিধায়কের মধ্যে পাঁচ জন ইতিমধ্যেই জেডিইউ-কে সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছেন। ফলে সমর্থন জোগাড় করতে নীতীশের ঠিক কালঘাম ছোটার অবস্থা নয়। তা সত্ত্বেও আগ বাড়িয়ে জেডিইউ-কে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছেন রাজ্যের একমাত্র বাম বিধায়ক। বেগুসরাই জেলার বাছওয়ারার সিপিআই বিধায়ক অবধেশ কুমার সিংহ জানিয়েছেন, বিধানসভায় তিনি সমর্থন জানাবেন নীতীশের দলকে।
ঘটনাটি আপাত ভাবে তুচ্ছ হলেও এর পিছনে রাজনৈতিক তাৎপর্য দেখছেন অনেকেই। নীতীশ ইতিমধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফেডেরাল ফ্রন্ট নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন। এই অবস্থায় নীতীশকে বার্তা দিতে চাইছেন বাম নেতৃত্বও। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট যদিও জানিয়ে দিয়েছেন, তৃতীয় ফ্রন্ট গড়া হবে না। কিন্তু মমতা যখন ফেডেরাল ফ্রন্ট গঠনে তৎপর রয়েছেন, তখন নিজস্ব ভোটব্যাঙ্কের কথা ভেবেই পুরোপুরি হাত গুটিয়ে বসে থাকতে ভরসা পাচ্ছে না বাম শিবির। সেই কারণেই বামেদের পক্ষ থেকে নীতীশ, নবীন পট্টনায়ক বা মুলায়ম সিংহদের বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে। বামেরা তাঁদের বলছেন, মমতা যতই অ-কংগ্রেসি অ-বিজেপি জোট গড়ার ডাক দিন না কেন, শেষ পর্যন্ত তিনি কী অবস্থান নেবেন কেউ জানে না। বাম নেতৃত্বের দাবি, ভোটের ফল ঘোষণার পর তৃণমূল নেত্রী যে কোনও এক দলের দিকে ঝুঁকে পড়তেই পারেন। সে দিক অন্তত তাঁরা (বামেরা) অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য। আগামী ১ জুলাই চার বাম দলের জাতীয় কনভেনশনের ডাক দেওয়া হয়েছে। সেখানে একটি অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। তার ভিত্তিতেই লোকসভা-যুদ্ধে নামবেন বামেরা। বাম শিবিরের বক্তব্য, ওই কর্মসূচি এর পর আঞ্চলিক দলগুলির হাতে তুলে দিয়ে একটি বৃহত্তর জোট গঠনের পথে পদক্ষেপ করা হবে।
নীতীশকে নিয়েও আশঙ্কা রয়েছে বাম নেতৃত্বের। কারণ, নীতীশ এখন বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করলেও ভবিষ্যতে তিনি যে এনডিএ-তে ফিরে যাবেন না, এমন জোর দিয়ে বলা সম্ভব নয়। আজ নীতীশ নাম না করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, নরেন্দ্র মোদীর কারণেই তিনি এনডিএ ছাড়লেন। সার্বিক ভাবে বিজেপি নেতৃত্বের প্রতি বিষোদ্গার কিন্তু করেননি তিনি। কারণ নীতীশ জানেন, মোদীর নামে বিজেপির মধ্যেই বিবাদ আছে। মোদীর বদলে এনডিএ-র সম্ভাব্য সমস্ত শরিকের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি মুখ তুলে ধরতে এখনও চেষ্টা চালাচ্ছেন আডবাণীর মতো নেতারা। সেই চেষ্টায় সফল হলে তাঁরা নীতীশ-সহ আরও অনেক শরিককে ফের সঙ্গে চাইবেন।
এই পরিস্থিতিতে বাম নেতারা চাইছেন, যখন ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে নীতীশ এনডিএ ছেড়েছেন, তখন ভবিষ্যতেও যেন তাঁর ফেরার রাস্তা খোলা না থাকে। আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে থেকে জাতীয় স্তরে নিজেদের প্রাসঙ্গিক করে রাখারও তাগিদ রয়েছে বামেদের। আস্থা ভোটে সিপিআই বিধায়কের নীতীশের পাশে থাকার আশ্বাস সেই লক্ষ্যেই সুচিন্তিত পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। |